ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকায় প্রবাসী ব্যবসায়ীর সাফল্যগাথা

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকায় প্রবাসী ব্যবসায়ীর সাফল্যগাথা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশীর নির্মাণ ব্যবসার সাফল্যকে ‘পরিশ্রমী অভিবাসীর এগিয়ে চলার প্রতিকৃতি’ হিসেবে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘লং আইল্যান্ড হেরাল্ড’ পত্রিকা। খবর বিডিনিউজের। বাংলাদেশী-আমেরিকান এ নির্মাণ ব্যবসায়ীর নাম আকতার হোসেন বাদল (৫৫)। তিনি নিউইয়র্কের কুইন্সের ফ্লাশিংয়ে বসবাস করেন। ৩০ জানুয়ারি ‘বিল্ডিং এ বিজনেস ফ্রম দ্য বটম’ শিরোনামে বাদলের ব্যবসায়িক সাফল্যের নানা দিক জানিয়ে এ সংবাদটি প্রকাশ করেন তারা। ৩৫ বছর আগে স্টুডেন্ট ভিসায় নিউইয়র্কে আসার পর বাদল যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী জীবনে কী ধরনের কষ্ট সহ্য করেছেন এবং প্রত্যয়ের সঙ্গে কাজ করেছেন সেসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে এ সংবাদে। ২০০০ সালে ‘আরএলবি কন্সট্রাকশন’ নামে একটি নির্মাণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠার পর সিটির পাঁচ বরোতেই ব্যবসা করেছেন বাদল। ব্রিজ, স্কুল ভবন, এ্যাপার্টমেন্ট ভবন, হাসপাতালের সম্প্রসারণ, রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করে সিটি ও স্টেটসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ‘নির্মাণ ব্যবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি হচ্ছে নির্দেশ অনুযায়ী যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করা। রাতারাতি সাফল্য আসে না। এজন্য সময়ের প্রয়োজন। সুনামের সঙ্গে কাজ করলে একদিন সাফল্য ধরা দেবেই’, বাদলের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি। ওই সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জন্ম নেয়া বাদল ২০ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের একটি হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। এরপর ফোরড্যাম ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর করেন। চাকরি পেতে তাকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। চাকরির জন্য রেফারেন্স ছিল না তার। এ অবস্থায় তিনি সঙ্কটে পড়েন বাসা ভাড়া ও দৈনন্দিন খাবার নিয়ে। উপায় না দেখে এলাকার স্টেট সিনেটর ইফ্রেইন গঞ্জালেজ জুনিয়রের শরণাপন্ন হন বাদল। তার কাছে আবেদন করেন সিটি শেল্টারে অবস্থানের জন্য। এমন সঙ্কটের মধ্যেই ‘ফ্লোরশিম জুতা’ কোম্পানিতে কাজ পেয়ে যান চাঁদপুরের সন্তান বাদল। সেখানে কাজের মাধ্যমে হেরাল্ড স্কোয়ারের কাছে কোম্পানির স্টোরে ম্যানেজারের দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু স্টোরটি বন্ধ হয়ে যায় কয়েক মাসের মধ্যেই। পুনরায় বেকার হয়ে পড়েন বাদল। এরপর আবারও স্টেট সিনেটর গঞ্জালেজের অফিসে যান সহযোগিতার জন্য। সে সময় সিনেটর তাকে নিজস্ব ব্যবসা খোলার পরামর্শ দেন। কন্সট্রাকশন বিজনেস সবচেয়ে ভাল হবে বলেও উল্লেখ করেন সিনেটর গঞ্জালেজ। তবে গঞ্জালেজের পরামর্শে বাদল কন্সট্রাকশন ব্যবসা শুরু করলেও তার সঙ্গে সখ্যতা স্থায়ী হয়নি। কারণ কোন এক দুর্নীতির কারণে সিনেটর গঞ্জালেজকে জেলে যেতে হয়। ২০০০ সালের শুরুতে নির্মাণ ব্যবসা তেমন ভাল যাচ্ছিল না বাদলের। ফলে ব্যাংক থেকেও ঋণ নিতে পারেননি নতুন এ ব্যবসায়ী। সে সময়ে তার পাশে দাঁড়ায় নির্মাণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘টুলি কন্সট্রাকশন’। টুলির সমর্থনে ‘আরএলবি কন্সট্রাকশন’র ব্যবসা ওই অঞ্চলে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। বাদল বলেন, ‘টুলির সে সময়ের প্রজেক্ট ম্যানেজার ডিন ডেভকের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। একইভাবে আমি কখনই ভুলতে পারি না সিনেটর গঞ্জালেজকেও। বিশ্ব এতই বিশাল যে সবাই মন্দ মানুষ নন। সব সমাজেই কিছু ভাল মানুষ রয়েছে। তাই নিষ্ঠাবান মানুষরাও অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পাদনের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়তে সক্ষম হচ্ছেন।’ ২০১৫ সালে নিউইয়র্কের কাছে লিনব্রুকে ‘আরএলবি সেফটি এ্যান্ড আয়রন’ নামে একটি স্টোর খোলার চার বছর পর সম্প্রতি লংবিচ রোডে দ্বিতীয় স্টোর খুলেছেন বাদল। তিনি জানান, কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত সামগ্রী তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করায় প্র্রতিদিনই বিক্রি বাড়ছে। তার পরবর্তী পরিকল্পনায় রয়েছে কানেকটিকাট রাজ্যে ‘আরএলবি সেফটি স্টোর’ খোলার। এভাবেই ব্যবসার মাধ্যমে নিজের ভাগ্য গড়ার পাশাপাশি পরিচিতদের মধ্যে যারা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তাদের সহায়তা করার সংকল্পের কথা জানান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তৃণমূলের সংগঠক বাদল।
×