ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা

আয়করে বিশাল ছাড় মোদি সরকারের

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আয়করে বিশাল ছাড় মোদি সরকারের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মোদি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রথম পূর্ণমেয়াদের নারী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন শনিবার দেশটির সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন। দ্বিতীয় দিনের মতো বাজেট বক্তৃতার শুরুতে তিনি আয়করের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর ঘোষণা দেন। ঘোষিত বাজেটে নতুন কর ব্যবস্থায় বছরে আড়াই থেকে ৫ লাখ রুপী পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে কোন কর না নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ৫ থেকে সাড়ে ৭ লাখ রুপী পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে আয়করের হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। যাদের বার্ষিক আয় সাড়ে ৭ থেকে ১০ লাখ, তাদের কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ১০ থেকে সাড়ে ১২ লাখ আয়ে কর হার ৩০ থেকে কমিয়ে ২০ এবং সাড়ে ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখের ক্ষেত্রে কর হার ৩০ থেকে কমে হয়েছে ২৫ শতাংশ। তবে আয় ১৫ লাখের বেশি হলে পূর্বেও মতো ৩০ শতাংশই বহাল থাকছে। সীতারমনের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতার উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে রয়েছে কৃষি ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত খাতে ২ হাজার ৮৩০ কোটি রুপী বরাদ্দ। কেন্দ্রীয় একটি পানি প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৬০০ কোটি রুপীও বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবারের বাজেটে। এছাড়া এই অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৯৯ হাজার ৩০০ কোটি রুপী। ভারতের এ বারের বাজেটকে কেউ বলছেন কয়েক দশকের মধ্যে কঠিনতম, কেউ বলছেন চ্যালেঞ্জিং। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগত নিম্নমুখী, বেকারত্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কর্পোরেট করে ছাড় দিয়েও তেমন সুফল মেলেনি। এই আবহেই বাজেট পেশ করছেন নির্মলা। মূলত করদাতাদের হেনস্থা আটকাতে আইন তৈরির ঘোষণা দেন তিনি। নির্মলা বলেন, করদাতাদের অধিকার লিপিবদ্ধ করা হবে। সিবিডিটি তা নথিবন্ধ করবে। নির্মলা বলেন, সরকার চায় না, করদাতারা নাজেহাল হোক বা কোনভাবে তাদের বিব্রত করা হোক, করদাতাকে নাজেহাল করা ফৌজদারি অপরাধ। তা ঠেকাতে আইন তৈরি করবে সরকার। পরিবেশকে স্বচ্ছ রাখতে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে। এছাড়া মহিলাদের উন্নয়নে ২৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ১০ কোটি অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। জনজাতিদের উন্নয়নে ৫৩ হাজার কোটি টাকা। প্রবীণ নাগরিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ৯০০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ। পরিবহন পরিকাঠামোয় ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দেশী মোবাইল ফোন উৎপাদনে জোর দিয়েছে মোদি সরকার। ন্যাশনাল টেক্সাইল মিশন প্রকল্প চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে ১০০টি নতুন বিমানবন্দর করতে চায় মোদি সরকার। সেই সঙ্গে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। ১ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে অপটিক্যাল ফাইবার ও ৩ বছরের মধ্যে প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার প্রতিটি বাড়িতে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে বাজেটে। রফতানির জন্য ঋণের ব্যবস্থার পাশাপাশি শিল্প-বাণিজ্য উন্নয়নে ২৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আরও ৬ হাজার কিলোমিটার জাতীয় সড়ক তৈরি করা হবে ২০২৪-এর মধ্যে। রেলের খালি জমিতে গড়ে তোলা হবে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পর্যটকদের পছন্দের জায়গায় তেজসের মতো আরও সুপারস্পিড ট্রেন চালু করা হবে। প্রতিটি জেলায় এক্সপোর্ট হাব তৈরি করা হবে। পরিকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ ১০০ লক্ষ কোটি টাকা। পর্যটনে ২৫০০ হাজার কোটি টাকা। মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির ওপর স্বাস্থ্য সেস-এর প্রস্তাব। নতুন সিস্টেম চলতি মাস থেকেই চালু করা হবে। ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স সেল চালু করা হবে। বাজেটে বলা হয়, শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের জন্য শীঘ্রই নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করা হবে। চাকরিভিত্তিক শিক্ষায় জোর দেয়া হবে। এসবিআইকে শিক্ষা-ঋণ বাড়ানোর অনুরোধ। অনলাইনে স্নাতকোত্তর শিক্ষা চালু করার চেষ্টা করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সাগরমিত্র’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মৎস্যচাষে গ্রামের যুবকদের যুক্ত করা হবে। কৃষিপণ্য মজুতে আরও হিমঘর তৈরি করা হবে। উত্তর-পূর্বে চালু হবে কিষাণ-রেল। অনলাইনে কৃষিপণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, বলেও জানালেন তিনি। বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দা চলছে। আমরা বাইরের ঝড় সামলে উঠেছি। এ দেশে ২৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে বলে দাবি তার। জলকষ্ট রয়েছে এমন ১০০টি জেলাকে চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে জানালেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০ লক্ষ কৃষককে নতুন পাম্প দেয়া হয়েছে। ২৭ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার উপরে আনা গিয়েছে বলে দাবি নির্মলার। পেনশন-বিমায় সামাজিক সুরক্ষা জরুরী। গরিবের হাতে যাতে সরাসরি টাকা পৌঁছে, সেই উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। জিএসটি-র ফলে করের বোঝা কমেছে। ৪০ কোটি করদাতাদের মধ্যে ৬০ লক্ষ নতুন করদাতা। কর দেয়ার পদ্ধতি এখন সরল হয়েছে, দাবি অর্থমন্ত্রীর।
×