ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

মুজিববর্ষ ও অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মুজিববর্ষ ও অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ

২০২০ ও ২০২১। এ দুটি নিছক সাল কিংবা সংখ্যা নয়। গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য বিচারে খ্রিস্টীয় এই সালের নিবেদন বাঙালী জাতির কাছে অন্য যে কোন বর্ষের চেয়ে বেশি। প্রথমটি ২০২০, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী; যা বাংলাদেশ তো বটেই, বিশে^র ১৯৫টি দেশে মহাসমারোহে উদ্যাপন হবে। দ্বিতীয়ত ২০২১, শোষণ-নিপীড়নমুক্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছর তথা সুবর্ণজয়ন্তী। শততম জন্মোৎসবের পাশাপাশি এটিও মহাসাড়ম্বরে পালিত হবে বছরজুড়ে। আবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভিশন টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান সমাপ্তির বছরও এটা। বোঝাই যাচ্ছেÑ সবমিলিয়ে বছর দুটো নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয় জীবনের মোড় পরিবর্তনের পথনির্দেশক। ঊপড়হড়সরংঃ ওহঃবষষরমবহপব টহরঃ এক প্রতিবেদনে বলেছে যে গণতন্ত্রের বৈষয়িক সূচকে বাংলাদেশ ৮ ধাপ এগিয়ে বিশ্বের ৮০তম দেশ হয়েছে। মুজিববর্ষে ৬৮ হাজার দুস্থ পরিবারকে পাকাবাড়ি তৈরি করে দেবে শেখ হাসিনা সরকার। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রথম দেশ বাংলাদেশ ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করেছে জাতির জন্য মুজিববর্ষে এগুলো শ্রেষ্ঠ উপহার। বিশ্ব নেতৃত্বের শিখরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায়, ‘২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানমালা যুগপৎভাবে চলতে থাকবে। এই উদযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা-সর্বস্ব নয়, এর লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া।’ এর আগে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী পালন শেষে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আসবে। পুরো এ সময়টাকে এমনভাবে কাজে লাগাতে চাই- বাংলাদেশ যেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে ওঠে। পিতা মুজিব এই স্বপ্ন দেখতেন। তিনি বলতেন, ‘এই স্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে, মর্যাদাপূর্ণ জীবন পাবে; তখনই শুধু এই লাখো শহীদের আত্মা তৃপ্তি পাবে।’ বোধ করিÑ বঙ্গবন্ধুর ১০০তম জন্মদিন উদ্যাপনের বছরে সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময়। পৃথিবীর কাছে অনন্য এক উদাহরণ। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ তিন সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ আজ তিন সূচকেই তার মানদ- উন্নীত করেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদ- অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার; বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি, ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম, যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। মাত্র ৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বাজেট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল যে দেশ, তা আজ ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি ছাড়িয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকায়। শুধু বাজেট কেন, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি, মাথাপিছু আয় ও মানবসম্পদ সূচকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবধান ধীরে ধীরে কমে আসছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশে^র শীর্ষ ৫টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী পিপিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩০তম। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশে^ ২৩তম স্থান দখল করবে। এইচবিএসসির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশে^র ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, ২০১০ সালে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৩ দশমিক ৫। ২০১৮ সালে তা ১০ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। তাদের হিসাবÑ ২০২০-এ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে থাকবে। হংকং সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন-এইচএসবিসির গ্লোবাল রিসার্চের তথ্যমতে, ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি নিরিখে বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ, বর্তমানে যেখানে ৪২তম। ‘দি ওয়ার্ল্ড ইন ২০৩০ : আওয়ার লং টার্ম প্রজেকশনস ফর ৭৫ কান্ট্রিজ’ শিরোনামের এই রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৬ ধাপে উন্নীত হবে, যা অন্য যে কোন দেশের তুলনায় অধিক। যা ফিলিপাইন, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার উপরে। ১৯৯০-এর দশকেও বাংলাদেশে ৫৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। এখন করছে মাত্র ২১.৩ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার কমে নেমেছে ১১.৩ শতাংশে। ২০১৭ সালে দেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ২৩.১ শতাংশ, আর অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ১২.২ শতাংশ। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি যে হারে হচ্ছে, তাতে ২০২৩ সালের আগেই দারিদ্র্য হার শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। অতি দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশের কম হলেই তা শূন্য দারিদ্র্য হিসেবে ধরা হয়। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত প্রতিবছর ২ কোটি ৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি, উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। বছরের শুরুতে ছাত্রছাত্রীদের হাতে পৌঁছে যায় বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যপুস্তক। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ কোটিরও বেশি সিম ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। সারাদেশে ৬৫০টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। পাতালরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়ক চার-লেনে উন্নীত করার পর চন্দ্রা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশন-রংপুর এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার-লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। নতুন রেলপথ নির্মাণ, নতুন কোচ ও ইঞ্জিন সংযুক্তি, ই-টিকেটিং এবং নতুন নতুন ট্রেন চালুর ফলে রেলপথ যোগাযোগে নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪০১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে গড় আয়ুতে আমরা পাকিস্তান ও ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছি। মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, যা এখন শেষের পথে; নাগরিক জীবনে স্বস্তি দিতে রাজধানীজুড়ে চলছে মেট্রোরেলের দুর্বার গতি। মুজিববর্ষকে ঘিরে দেশের প্রত্যেকটি ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে বিদ্যুত। মহাকাশে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, প্রস্তুতি চলছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের। উন্নয়নের রোড প্ল্যান ধরে নির্মিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেল ও এলএনজি টার্মিনাল। ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগ চিত্র বদলে দিয়েছে ফ্লাইওভার, ব্রিজ। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় গতি যোগ করতে দেশে গড়ে উঠছে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ইতোমধ্যে ১৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য আসছেন। সারাদেশে ২ ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন এবং স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের অগ্রগতিও আমাদের চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের অবিশ^াস্য এই ‘এগিয়ে যাওয়া’সত্যিই আমাদের মনে শিহরণ তোলে, আশা জাগায়। টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ ক’দিন আগে এক বছর পূরণ করেছে। ক্ষমতার এক যুগে পা রাখা এ সরকার বাংলাদেশের জন্য কী করেছে- তা তো আমরা স্বচক্ষেই দেখছি। সম্প্রতি ক্ষমতা গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০০৯ সাল থেকে আমরা একটানা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সরকার পরিচালনা করছি। আর সে লক্ষ্য হলো- সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নসহ সকলের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’ কী করতে চেয়েছিলেন, আর কী করতে পেরেছেন, বক্তৃতায় সেটাও উল্লেখ করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বলেছেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই মূল্যায়ন করবেন। আমরা মুখরোচক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা তা-ই বলি, যা আমাদের বাস্তবায়নের সামর্থ্য রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে আমরা রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিলাম। যার অন্তর্নিহিত মূল লক্ষ্য ছিল- এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা।...১০ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এদেশের মানুষ ভাল-কিছুর স্বপ্ন দেখা ভুলেই গিয়েছিল। মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের। স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বাঁচার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ আজ যখন আমরা গোটা বিশ^ মিলে বঙ্গবন্ধুর জন্মোৎসব পালন করতে যাচ্ছি, স্বভাবতই তখন জানতে ইচ্ছে করে- নিজের জন্মদিন জাতির জনক কীভাবে পালন করতেন? সেই উত্তর খুঁজতে একটু পেছনে ফিরতে হবে। জনৈক বিদেশী এক সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করলেন- আপনার জন্মদিনে কোন উৎসব-অনুষ্ঠান হয়নি? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি আমার জন্মদিনের উৎসব পালন করি না। এই দুঃখিনী বাংলায় আমার জন্মদিনই বা কি আর মৃত্যুদিনই বা কি? আপনারা বাংলাদেশের অবস্থা জানেন। এদেশের জনগণের কাছে জন্মের আজ নেই কোন মহিমা। যখনই কারও ইচ্ছা হলো আমাদের প্রাণ দিতে হয়। বাংলাদেশের জনগণের জীবনের কোন নিরাপত্তাই তারা রাখেনি। জনগণ আজ মৃতপ্রায়। আমার আবার জন্মদিন কি? আমার জীবন নিবেদিত আমার জনগণের জন্য। আমি যে তাদেরই লোক।’ এই ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদ্যাপন। আজ পরিস্থিতি পালটেছে বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এই স্বাধীন দেশ কোথায় পেতাম। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সহনশীলতার উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও উন্নয়নের আলোকবর্তিকা নিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মাহিসোপ্রাণে রয়েছেন। কাজেই বঙ্গবন্ধুর সেই আবেগঘন অনুভূতিকে সামনে রেখে যথাযথা সম্মান ও মর্যাদার প্রশ্নের জাতি নীরব থাকতে পারে না। তাই আমরা মুজিববর্ষ উপাধিতে তাঁকে অন্তরের গভীর ভালবাসা দিয়ে মাথার মুকুট রূপে দেখতে চাই নতুন করে । বঙ্গবন্ধু চলে যাওয়ার আগের বছরের জন্মদিনটা উদ্যাপন হয়েছিল বেশ আবেগঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু তখন কিছুটা অসুস্থ। দুদিন পরই চিকিৎসার জন্য মস্কো যাবেন, এই খবর ততক্ষণে মানুষ জেনে গেছে। পত্রিকার খবরে জানা যায়- বঙ্গবন্ধুর সুস্থতা কামনা সে সময় সারাদেশের মসজিদ-মন্দিরে বঙ্গবন্ধুর জন্য প্রার্থনা করা হয়। বয়স্ক মানুষ বিশেষত মা-দাদিরা রোজা রেখে বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া করতে থাকেন। এভাবেই কাটে তাঁর সেই বছরের জন্মদিন। বঙ্গবন্ধু যদি ঘাতকের বুলেটে প্রাণ না হারাতেন, কে বলবে হয়ত তিনি এ বছর শতায়ু লাভ করতেন। সত্যিই আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তবে উন্নয়নের মহসড়কে চড়া বাংলাদেশে কেমন হতো তাঁর জন্মশতবর্ষ? কল্পনা করা যায়! হয়ত না। তবে এটুকু বলা যায়- জাতির পিতার হাত ধরে তাঁর শততম জন্মোৎসব উদ্যাপন নিশ্চয়ই ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যেককে উদ্বেলিত-শিহরিত করত। দুর্ভাগ্য আমাদের! সেই পিতার মূল্য আমরা দিতে পারিনি। তবে কন্যার হাত ধরে ঠিকই ‘বিশে^র রোল মডেল’ উপাধি অর্জন করেছে আজকের বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশে মহিমান্বিত রূপে বছরজুড়ে জাতির জনকের জন্মোৎসব উদ্যাপন হবে- সেটাই তো স্বাভাবিক। কারণ, নিজের জন্মদিনটাও যে দুঃখিনী বাংলার মানুষের জন্য উৎসর্গ করে গেছেন আমাদের বিশ^বন্ধু। লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদস্য উপদেষ্টা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
×