ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রণালয় বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে

টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার সুদৃঢ় অবস্থানে

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

   টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার সুদৃঢ় অবস্থানে

তপন বিশ্বাস ॥ ক্রমান্বয়ে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুদৃঢ় অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। এই লক্ষ্যে বিগত এক বছরে খাদ্য মন্ত্রণালয় বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সরকারীভাবে মজুদের ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো, দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা, দেশে যে কোন দুর্যোগ পরিস্থিতিতে খাদ্য সরবরাহে বিশেষ ব্যবস্থা রাখাসহ বেশ কিছু কার্যক্রম ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছে। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা দেশের টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতেও আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বেশ জনসচেতনতাও সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সরকারের কার্যক্রমের পাশাপাশি তিনি দেশের জনগণের সহযোগিতাও কামনা করেছেন। তিনি বলেন, সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণ এগিয়ে আসলে আরও দ্রুত সফল হওয়া সম্ভব। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা খাদ্য সেক্টরের দুর্নীতি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আগামীতে আরও কমে আসবে। ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের বদলি নীতিমালা করে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এতে দুর্নীতিবাজরা এখন দুর্নীতি করতে ভয় পাচ্ছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে সরকারী পর্যায়ে খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতা ২৭ লাখ টনে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং রূপকল্প ২০২১-এর সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে আধুনিক খাদ্য গুদাম ও সাইলো নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে বর্তমানে দেশে সরকারী পর্যায়ে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের বিদ্যমান ধারণ ক্ষমতা প্রায় ২১ লাখ ৭২ হাজার মে. টনে উন্নীত হয়েছে। আরও প্রায় ৫.৮৬ লাখ টন ধারণ ক্ষমতার আধুনিক খাদ্য গুদাম ও সাইলো নির্মাণের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এছাড়া খাদ্যশস্যের সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান গুদামের ধারণ ক্ষমতা বজায় রাখার লক্ষ্যে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্যশস্যের সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান গুদামের ধারণ ক্ষমতা বজায় রাখাসহ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দরিদ্র জনসাধারণের পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ‘খাদ্যশস্যের পুষ্টিমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রিমিক্স কার্নেল মেশিন ও ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অধিকন্তু দেশের জনসাধারণের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য ফুড সেফটি রেফারেন্স ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং কৃষকদের প্রণোদনা প্রদানের লক্ষ্যে সমগ্র দেশব্যাপী ধান শুকানো ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাসহ আধুনিক ধানের সাইলো নির্মাণ এবং সমন্বিত রাইস মিল নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া, খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আধুনিকায়ন সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এতে সারাদেশে ২০০ প্যাডি সাইলো নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ৫০০০ মে.টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। পাইলট প্রকল্পের আওতায় আট জেলার ১৬ উপজেলায় কৃষক এ্যাপ চালু করা হয়েছে, যাতে কৃষক ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে ধান বিক্রির সকল কার্যক্রম করতে পারবে। লটারির মাধ্যমে কৃষকের উপস্থিতিতে কৃষক নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। বদলি নীতিমালা সংশোধন ও কার্যকর করে বদলির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এবার প্রথম বারের মতো আমন মৌসুমে ছয় লাখ মে. টন ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। খাদ্যশস্যের পুষ্টিমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘প্রিমিক্স কার্নেল মেশিন ও ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি ইতোমধ্যেই একনেকে পাস হয়েছে। প্রকল্পটি চালু হলে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং সরকার কর্তৃক গুণগত মানসম্পন্ন পুষ্টিমান উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং লক্ষ্যমাত্রাসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২০) সমন্বয় করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সঙ্গে কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসমূহ পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক ‘এসডিজি ম্যাপিং’ প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘এসডিজি ম্যাপিং’ অনুযায়ী প্রণীত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসডিজি কর্মপরিকল্পনার আলোকে খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভিন্ন কার্যক্রম এবং উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে খাদ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যসংশ্লিষ্ট টার্গেটসমূহের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক চূড়ান্ত করা হয়েছে। দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসডিজি কর্মপরিকল্পনার আলোকে খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প/কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে এবং নতুন উন্নয়ন প্রকল্প/কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এসডিজি-২ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার আলোকে সমগ্র দেশে অতি দরিদ্র ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চালু রয়েছে। অতি দরিদ্র জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে ফর্টিফাইড রাইস বিতরণ কর্মসূচী চালু করা হয়েছে। এছাড়া, স্বল্প আয়ের জনগণ যাতে কম মূল্যে খাদ্যশস্য পায় তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য কর্মসূচী (ওএমএস) কার্যক্রম চালু রয়েছে। তাছাড়া, খাদ্য মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয় যেমন- মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে সারাদেশে ‘১ লাখ ৫ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি ৩৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৩ হতে জুন ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের আটটি বিভাগে ৫৪ জেলার ১৩১ উপজেলায় নতুন ১৬২ খাদ্য গুদাম (১০০০ মে. টনের ৪৮ ও ৫০০ মে. টনের ১১৪) নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আছে। এ প্রকল্পের আওতায় জুন ২০১৯ পর্যন্ত মোট ৭৯,০০০ মে. টন ধারণ ক্ষমতার ১২৯ খাদ্য গুদাম (১০০০ মে. টনের ২৯ এবং ৫০০ মে. টনের ১০০)-এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
×