ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা ভাইরাসে মৃত বেড়ে ২১৩, ২০ দেশে এ ভাইরাস শনাক্ত

বিশ্বে জরুরী অবস্থা জারি

প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বিশ্বে জরুরী অবস্থা জারি

চীনের বাইরে নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় ‘বৈশ্বিক জরুরী অবস্থা’ জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। চীনে যা ঘটছে, সেটাই এ সতর্কতা জারির মূল কারণ নয়, অন্য দেশে এখন যা ঘটছে, মূলত সে কারণেই এ সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে সংস্থাটির প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস জানান। বৃহস্পতিবার এক জরুরী বৈঠকের পর ডব্লিউএইচও এ ঘোষণা দেয়। চীনে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা এক দিনেই ১৭০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২১৩ জন। নতুন করে দুই হাজার মানুষের দেহে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশন। আর চীনের মূল ভূখ-ের বাইরে আরও ২০ দেশে অন্তত ৯৮ জনের দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয় নিশ্চিত হয়েছে ডব্লিউএইচও। তবে চীনের বাইরে এ ভাইরাসে কারও মারা যাওয়ার খবর এখন পর্যন্ত আসেনি। খবর বিবিসি ও পিপলস ডেইলি অনলাইনের। নতুন ধরনের এ করোনা ভাইরাস বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে প্রথমত চীন ফেরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে। কিন্তু জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভিয়েতনামে আটজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যারা কখনও চীনে যাননি। অর্থাৎ সেখানে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে শুরু করেছে এ ভাইরাস। যেসব দেশে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে দুর্বল, সেসব দেশে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ শুরু হলে পরিস্থিতি কী হবে- মূলত সেই ভাবনা থেকেই বৈশ্বিক জরুরী অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডব্লিউএইচও। কোন এক দেশে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর তা যদি অন্য দেশে ছড়াতে শুরু করে এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরির মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখনই এ রকম ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত এক দশকে পাঁচবার এ রকম আন্তর্জাতিক সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু, ২০১৩ সালে ইবোলা, ২০১৪ সালে পোলিও, ২০১৬ সালে জিকা ভাইরাস এবং ২০১৯ সালে আবারও ইবোলার প্রাদুর্ভাবের কারণে বৈশ্বিক সতর্কতার ঘোষণা আসে। জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরী বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে আধানম বলেন, নতুন করোনা ভাইরাসটি যেভাবে ছড়াচ্ছে তা নজিরবিহীন, আর যেভাবে সেটা সামাল দেয়ার চেষ্টা চলছে, সেটাও আর ঘটেনি। মধ্য চীনের উহান শহরে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ঠিক কিভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ধারণা, মানুষের দেহে এ রোগ এসেছে কোন প্রাণী থেকে। তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। এ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চীন সরকার দ্রুত যেসব কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে, তার প্রশংসা করেন আধানম। তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক সতর্কতা জারির মানে এই নয় যে ডব্লিউএইচও চীনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ভরসা রাখতে পারছে না। আর এই সতর্কতা জারির ফলে চীনের সঙ্গে ব্যবসা করা বা যাতায়াতেও কোন সমস্যা নেই। তবে বিভিন্ন বিমান পরিবহন সংস্থা চীনের পথে ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে বা বন্ধ রেখেছে। রাশিয়া চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জারি করেছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। গুগল, স্টারবাক, ইকিয়া, টেসলার মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানি চীনে তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখছে। বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানি তাদের কর্মীদের চীনে যাতায়াতের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। চীনে এ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর মাত্র এক মাস পার হয়েছে এবং এরমধ্যেই প্রায় দশ হাজার মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের যেসব দেশে এ ধরনের সংক্রামক ব্যাধি শনাক্তকরণ বা নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই, সেখানে নতুন এই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে কী ঘটবে, তা নিয়েই বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। তাদের ধারণা, তেমন কিছু ঘটলে পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, অনেক দেশে পরিস্থিতি কতটা খারাপ, সেটা বুঝতেই অনেক সময় লেগে যাবে। চীনের যে প্রদেশ থেকে এই ভাইরাস ছড়ানো শুরু হয়েছে, সেই হুবেইয়ের বেশিরভাগ এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে গত ১১ দিন ধরে। অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখায় প্রায় ৬ কোটি মানুষকে সেখানে আংশিক বা পুরোপুরি অবরুদ্ধ দশার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। আরও কয়েকটি বড় শহরে পাবলিক বাস, ট্যাক্সি ও রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধ রয়েছে। স্কুল ও দোকানপাটও আপাতত খুলছে না। কিছু জায়গায় পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়নি। এ ভাইরাস বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকেও বড় ধরনের ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে। তার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও নিউজিল্যান্ড ইতোমধ্যে তাদের নাগরিকের উহান ও চীন থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। তবে দেশে ফেরানোর পর তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। উহানে থাকা যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ নাগরিকদের একটি অংশকে শুক্রবার দেশে ফিরিয়ে নেয়ার কথা রয়েছে।
×