ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল

দুর্নীতির দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারছে না ভারত ও পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দুর্নীতির দুষ্টচক্র থেকে বের হতে  পারছে না ভারত ও পাকিস্তান

ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা দেশ হলেও তাদের একটি সাধারণ সমস্যা হলো দুর্নীতি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অধীনে দেশ দুটির দুর্নীতি সমস্যাগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ২০১৮ সালে দুর্নীতিতে যুক্ত বিভিন্ন দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, উপমহাদেশে দুর্নীতির দুষ্টচক্রে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। কারণ, তালিকাভুক্ত ১৮০ দেশের মধ্যে ভারত ৮০তম স্থানে রয়েছে। আর পাকিস্তান রয়েছে ১২০তম স্থানে। খবর ফোর্বসের। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই সময়ে দুর্নীতিতে আরও চার ধাপ নিচে নেমেছে দেশটি। মোদির প্রথম মেয়াদে উচ্চপদস্থ কেলেঙ্কারি প্রশাসনের কার্যালয়কে বেশ নাড়া দিয়েছে। যার মধ্যে ফ্রান্স থেকে ৩৬ রাফায়েল জেট ক্রয়ের জন্য ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউরো অস্ত্রের চুক্তির মতো বিষয়টি এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকে দুই বিলিয়ন ডলার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির বিষয়টি উন্মোচিত হয়েছিল। দুর্নীতির তালিকায় পাকিস্তান ২০১৮ সালে র‌্যাঙ্কিংয়ের ১২০তম স্থানে ছিল যখন ইমরান খান দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার সময়ে মন্ত্রিসভার একজন উচ্চ পদস্থ সদস্যের ওপর মামলা করা হয়েছিল যিনি তার চাকরের নামে ৪৬৫ কোটি টাকা সম্পত্তি রেখেছিলেন। উভয় নেতাই তাদের নিজ দেশ থেকে এই পুরাতন সমস্যা প্রতিহত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুর্নীতি দমনকে তাদের পুনর্নির্বাচন প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছেন। এছাড়া তারা তাদের প্রতিশ্রুতি অনুসারে অনেক ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে নরেন্দ্র মোদি বিশেষ করে ‘কালো টাকা’ অর্থাৎ ৫০০ এবং ১ হাজার টাকার নোট থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো অপ্রচলিত উপায় চালু করতে চেষ্টা করেছেন। অপরদিকে কর ফাঁকি দেয়া ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্যোগ নিয়েছেন ইমরান খান। তবে মোদি ও খানের সরকারগুলো তাদের দেশের ভুল জায়গায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। যদিও উপমহাদেশের বড় দুই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল যাচ্ছে না। একদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) গত অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়েছে, অন্যদিকে পাকিস্তানের ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস জানিয়েছে, পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি বার্ষিক ভিত্তিতে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ, যা নয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পাকিস্তানের ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের তথ্যমতে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত গত বছরের নবেম্বরে মূল্যস্ফীতি অনেকটা বেড়েছে। আবার দেশটির শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেশি। গত নবেম্বরে পাকিস্তানের শহরাঞ্চলের খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বার্ষিক হিসেবে ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ আর গ্রামাঞ্চলে তা ছিল ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ওই সময়ে বার্ষিক হিসেবে পাকিস্তানের শহরাঞ্চলে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। আর গ্রামাঞ্চলে তা ছিল ৯ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির মূল কারণ ছিল তেলের মূল্যবৃদ্ধি। পাশাপাশি মুদ্রার বিনিময় মূল্যও কমেছে। মূলত, এই দুই প্রভাবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। গত বছরের শেষের দিকে ভারতের মূল্যস্ফীতি আরবিআইয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ছিল ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। ভারতীয় বিশ্লেষকরা এটিকে সতর্কবার্তা হিসেবে মানছেন। ফল ও সবজির মূল্যবৃদ্ধির কারণেই মূলত এই মূল্যস্ফীতি। ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনীতি এই মুহূর্তে নানা সমস্যার সম্মুখীন।
×