ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জে ভাটির রাজার জঙ্গলবাড়ি

প্রকাশিত: ০৮:০২, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 কিশোরগঞ্জে ভাটির রাজার জঙ্গলবাড়ি

অদম্য মনোবল, সাহস ও দেশপ্রেমকে পুঁজি করে তাঁরা লড়েছিলেন দুর্জেয় মোগল সা¤্রাজ্যের বিরুদ্ধে। ১৫৭৬ সালে বাংলার শেষ স্বাধীন আফগান সুলতান দাউদ খান কররানী পরাস্ত হলেও তাঁরা ১৬১২ সাল পর্যন্ত বাংলার স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য অনবরত সংগ্রাম করেছেন। তাঁদের কর্তৃত্বে ছিল বাংলা। পশ্চিমে ইছামতি নদী, দক্ষিণে গঙ্গা (পদ্মা) নদী, পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য এবং উত্তরে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ সিলেটের বানিয়াচং পর্যন্ত সুবিস্তৃত ভাটি বাংলায় মোগল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাঁরা ছিলেন একাট্টা। মোগল ঐতিহাসিক আবুল ফজল এবং মির্জা নাথান তাঁদেরকে ‘দাওয়াজদাহ বুমি’ অর্থাৎ ‘বার ভূঁইয়া’ নামে অভিহিত করেছেন। ভাটি বাংলার সেই বার ভূঁইয়াগণের অগ্রণী ঈশা খাঁ ছিলেন অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলা, ঢাকা ও কুমিল্লা জেলার অধিকাংশ অঞ্চল, নোয়াখালী, ফরিদপুর, পাবনা ও রংপুর জেলার কিয়দংশ এবং সিলেট জেলার পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে গঠিত এক বিশাল রাজ্যের স্বাধীন অধিপতি। আবুল ফজল ঈশা খাঁকে বলেছেন ‘মর্জুবানে ভাটি’ অর্থাৎ ভাটির রাজা। রালফ প্রিচ তাঁকে বর্ণনা করেছেন ‘সম্রাট’ হিসেবে। কবি এতিম কাশিম লিখেছেন, ‘বার বাংলার রাজা ঈশা খাঁন বীর। দক্ষিণ কুলের রাজা আদম সুধীর।’ ভাটির রাজা ঈশা খাঁ’র দ্বিতীয় রাজধানী ছিল জঙ্গলবাড়ি। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গলে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত জঙ্গলবাড়ি বর্তমানে ঈশা খাঁ দুর্গ নামে পরিচিত। এটিকে এক নজর দেখার জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন দর্শণার্থীরা আসেন। জনশ্রুতি রয়েছে, বাংলার বার ভূঁইয়াদের অবিসংবাদিত নেতা ঈশা খাঁর রাজধানী ছিল সোনারগাঁয়ের নিকটবর্তী খিজিরপুর নামক স্থানে। মোগল সুবেদার মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে খিজিরপুর থেকে তিনি ব্রহ্মপুত্র ও শঙ্খ নদীর তীরবর্তী এগারসিন্দুরে আশ্রয় নেন। সেখানেও তার পরাজয় ঘটলে ঈশা খাঁ লক্ষণ সিং হাজরা নামে এক কোচ রাজার রাজধানী জঙ্গলবাড়ি আক্রমণ করে তা দখল করে নেন এবং সেখানেই তিনি তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। অনেকেই মনে করেন, লক্ষণ সিং হাজরা ও ঈশা খাঁ দু’জনের কেউই জঙ্গলবাড়ি দুর্গটির মূল নির্মাতা নন। দুর্গ এলাকার বাইরে বিশেষ করে দুর্গের দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম অংশে অসংখ্য ইটের টুকরা ও মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ রয়েছে। প্রাপ্ত নিদর্শনাবলী সম্ভবত প্রাক-মুসলিম আমলের এবং এটি ছিল একটি সমৃদ্ধশালী জনবসতির কেন্দ্র। তবে দুর্গের ভেতরে বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে ঈশা খাঁর। আছে তার বাসভবনের ধ্বংসাবশেষ। মূল ভবনটির ছাদ ধসে গেলেও দরবার কক্ষের অনেকটাই টিকে আছে। দরবার সংলগ্ন পান্থশালায় এখনও ১০-১২টি করে অস্তিত্ব দেখা যায়। পান্থশালার ধার ঘেঁষে চলে গেছে প্রাচীর। প্রাচীরের মাঝে মাঝে ফটক। ফটক ধরে ভেতরে গেলেই চোখে পড়ে বিধ্বস্ত অন্দরমহল। দেয়ালে ফুল ও লতাপাতার আল্পনা। কয়েকটি থামও অক্ষত আছে। থামের গায়ে আছে লতাপাতার নকশা। দুর্গের চারদিকে প্রমাণ করে, এটি ছিল বৃত্তাকার আকৃতির। -মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ থেকে
×