ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাঁসের খামার করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটালেন মাসুদ

প্রকাশিত: ০৮:০০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

   হাঁসের খামার করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটালেন  মাসুদ

নিজের খরচের জোগান নিজেই করতে চান। তিনি তাঁর পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে চান না। বেকারত্বহীন ভবিষ্যত গড়তে চান। এ জন্য তিনি পাতি হাঁসের খামার করেছেন। স্বপ্ন দেখছেন নিজে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী উপজেলা ভোলাহাট। উপজেলা প্রধান আয়ের উৎস আম ও ধান। প্রধান কাজ কৃষি। অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। উপজেলার নিম্নাঞ্চল বিলভাতিয়া, বাগডোগ্রা, চকচোকা সবুজ মাঠে ধানের আবাদ করা হয়। বছরে কয়েক মাস বর্ষার পানিতে তলিয়ে থাকে। এ সময় কোন ফসল না হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। আয়ের বিকল্প উৎস হিসেবে কয়েক বছর ধরে উপজেলার মুনিরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, রুবেল আলী, রহিম আলীসহ প্রায় ১৭ জন বিলভাতিয়ায় গড়ে তুলেছেন ভ্রাম্যমাণ পাতি হাঁসের খামার। রহনপুর ইফসুফ আলি কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে অনার্স পাস করে গ্রামের একটি প্রাইভেট স্কুল ‘সুরানপুর নুরানী একাডেমি’তে চাকরি করছেন মাসুদ রানা। ভাল একটা চাকরি পাবেন, তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। এ কারণে নিজে কিছু একটা করার কথা ভাবেন। একটি হাঁসের খামার করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী, ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় প্রথমে ৭শ’ পাতি হাঁস দিয়ে খামার শুরু করেন, এবং পরে আরও ২শ’ হাঁস যোগ করে গড়েছেন ৯শ’ পাতি হাঁসের খামার। মাসুদ রানা জানান, গ্রামের কয়েকজনের হাঁসের খামার ছিল। তাদের হাঁস পালন করতে দেখছেন। ফলে হাঁস পালনে তাঁর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এই অভিজ্ঞতা থেকেই খামার শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আমি প্রথমে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ৭শ’ পাতি হাঁস ক্রয় করি। পরে আরও ২শ’ ক্রয় করে বর্তমানে আমার ৯শ’ পাতি হাঁসের খামার। প্রতিদিন ৫০০ ডিম পাই। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন আমার আয় হয় ২৫০০ টাকা। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক বেকার যুবকের। স্থানীয়ভাবে এসব পাতি হাঁসের মাংসের চেয়ে ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান তিনি। মোঃ শহিদুল ইসলাম নামে খামারের এক শ্রমিক জানান, কাজকর্ম না থাকায় প্রায়ই সময় বেকার থাকতে হতো। ফলে সংসারের অভাব অনটন লেগেই থাকত। মাসুদ রানার খামারে কাজ শুরু করার পর এখন পরিবার পরিজন নিয়ে সুখেই আছেন তিনি। একই গ্রামের ঝাটু শেখের ছেলে মুনিরুল ইসলাম জানায়, আমি ১০ বছর ধরে পাতিহাঁস পালন করে বেশ স্বাবলম্বী হয়েছি, এখান থেকেই আমি ছেলে-মেয়েদের রাজশাহীতে লেখাপড়া করাতে পারছি। খামারি হাবিবুর রহমান, রুবেল আলী ও রহিম আলী বলেন, আমরা যদি সরকারীভাবে সহযোগিতা পাই তবে স্থায়ীভাবে খামার গড়ে তুলতে পারব। ভোলাহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, হাঁস পালনে খামারিদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসেবে উপজেলায় ২২টি পাতি হাঁসের খামার আছে। সবগুলো খামারেই ডিম উৎপাদন করা হয়। অনেক খামারি আছে যাদের বার বার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলা হলেও তারা আমাদের কাছে যোগাযোগ করছে না ডিলারদের মাধ্যমে ওষুধসহ খাবার নিয়ে খামার করছেন। -ডিএম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে
×