ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সহজ শর্তে উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  সহজ শর্তে উন্নয়ন

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে কম শর্তে সহায়তা দিতে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নে কোন ম্যাজিক নেই, এটা হচ্ছে একটা রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। সাধারণ মানুষ, দরিদ্র মানুষ, তৃণমূল পর্যায়ের অবহেলিত মানুষ- সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করাই হলো আওয়ামী লীগ সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেই আজকের বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। অতীতে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিদেশী সহযোগীরা অকুণ্ঠচিত্তে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন। তারা বলেছেন, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাম্প্রতিককালে অভাবনীয় উন্নতি করেছে। তারা এ উন্নতি ধরে রাখতে ও উন্নয়ন গতিকে আরও এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকারও করেছেন। সরকার বলেছে, সবাইকে নিয়েই টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে উন্নত দেশসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। অত্যন্ত দরকারি কথা তিনি খোলাখুলি সহজ ভাষায় বলে দিয়ে সব সময় কাজটি সহজ করে দেন। তার ভাষ্য- ‘এসডিজি বাস্তবায়নে আরও সম্পদ চাই। এজন্য আরও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রয়োজন।’ এবার বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম (বিডিএফ) সম্মেলনে দেশনায়কসুলভ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও একবার দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন। বলেছেন, ‘লক্ষ্যটা, এটা শুধু শহরভিত্তিক মানুষের জন্য নয়, এটা হচ্ছে সমগ্র গ্রামের মানুষ, কেউ যেন অবহেলিত না থাকে, কেউ যেন বাইরে পড়ে না থাকে। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে যেন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। প্রতিটি মানুষের জীবন যেন উন্নত হয়, অর্থবহ হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছি।’ দেশের উন্নয়নে নেয়া ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়টি সম্মেলনে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন টানা তিন মেয়াদে সরকারপ্রধানের দায়িত্বপালনকারী শেখ হাসিনা। ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কিভাবে উন্নত হবে, কোন্ কোন্ ক্ষেত্রকে সরকার গুরুত্ব দেবে এবং কিভাবে দেশের মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের জীবন উন্নত করা যাবে সেই লক্ষ্যে সরকারের কাজ ও অঙ্গীকারের কথাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার বিবরণ থেকে। এটা সব সময় লক্ষণীয় যে, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান কোন দেশে বিনিয়োগকালে বেশকিছু শর্ত দিয়ে থাকে। এসব শর্ত নিশ্চয়ই তাদের কাছে যৌক্তিক বলে মনে হয়। কিন্তু যে দেশটিকে সহায়তাদান করে থাকে অনেক শর্তের বেড়াজালে সেই উন্নয়নের মূল প্রাণভোমরা হাঁসফাঁস করে উঠতে পারে সেটি তারা বিবেচনা করতে চায় না। এছাড়াও শর্ত পূরণ করতে গিয়ে অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় হয়ে থাকে। ব্যয় সঙ্কোচন বা কৃচ্ছ্রতাসাধনের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে অনেক সময় ওইসব শর্ত প্রতিবন্ধকও হয়ে উঠতে পারে। তাই বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের জন্য এখন সহজ শর্ত প্রযোজ্যই সুবিবেচনাপ্রসূত কাজ এতে কোন সংশয় নেই। টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর অংশীদারিত্বের কোন বিকল্প নেই। আর এটি সম্ভব হতে পারে শর্ত কমিয়ে সহায়তা অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়েই। আমরা আশা করব আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মর্মকথা অনুধাবনে সক্ষম হবেন উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা।
×