ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুব হাসান

ফেসবুকে সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ফেসবুকে সতর্কতা

ফাহিম আহমেদ (ছদ্মনাম) একজন প্রথিতযশা সাহিত্যিক। তিনি বিভিন্ন পত্রিকার সাহিত্য পাতায় তার প্রকাশিত লেখাগুলো নিজের ফেসবুক ওয়ালে নিয়মিতই পোস্ট করে থাকেন। হঠাৎ কোন এক সকালে তিনি দেখতে পান তার মোবাইলে বিভিন্ন মানুষের ১১৩টি মিস কল। সকালে এক বন্ধুকে কল ব্যাক করে ফাহিম সাহেব জানতে পারেন যে তিনি নাকি ক্যান্সারে আক্রান্ত, তাই সকলের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়ে একটি বিকাশ নম্বর উল্লেখ করে ফেসবুকে নিজের ওয়ালে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন যে তার ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি হ্যাক করা হয়েছে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল কথা সাহিত্যিক ফাহিম আহমেদ শত চেষ্টা করে ও তার ফেসবুক এ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারেননি। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীই ফাহিম আহমেদে ও মতো বাজে অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়ে নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। সাহিত্যিক ফাহিম আহমেদ রূপক অর্থে যেন তাদেরই প্রতিনিধি। ফেসবুকে হ্যাকিং প্রতিরোধে করণীয় কি তা জানার আগে হ্যাকিং বিষয়ক কিছু চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপিত হলো : প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাক হচ্ছে। প্রতিদিন ৩৯ সেকেন্ডে ফেসবুকে হ্যাকাররা এট্যাক করছে। প্রতিদিন ৩ লাখ ম্যালওয়ার তৈরি করা হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে, সাইবার ক্রাইম মাদক ব্যবসার চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক। ২০১৯ সালে মাদক ব্যবসা থেকে যেখানে ৪০০ বিলিয়ন ডলার আয় হয়, সেখানে হ্যাকিং থেকে সাইবার-অপরাধীরা আয় করে ৬০০ বিলিয়ন ডলার। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের এ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে যে এটা আরও বাড়বে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অতএব সাধু সাবধান! ফেসবুক এ্যাকাউন্ট হ্যাকিং থেকে সুরক্ষায় করণীয়- এ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে ফেসবুক যেসব পরামর্শ দিয়েছে সেগুলো প্রথমে অনুসরণ করা। ফেসবুকের সেটিংস এ দ্বিস্তর বিশিষ্ট ভেরিফিকেশন ব্যবহার করা। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। যেমন- নম্বর অক্ষর চিহ্ন ইত্যাদির সমন্বয়ে তৈরি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। প্রতি মাসে অন্তত একবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা। ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড টাইপ করে লগ ইন করা। কখনোই ‘কিপমিলগইন’ বা ‘সেভপাসওয়ার্ড’ অপশনে ক্লিক না করা। সাধারণত যেসব পিসি ও মোবাইল থেকে লগ ইন করা হয় তা সেটিংসে নির্দিষ্ট করে দেয়া। অথরাইজ লগ ইন কি ঠিক করে দেয়া। ফেসবুক থেকে পাঠানো ইমেইলগুলো আগে সতর্কতার সঙ্গে চেক করে দেখা। ফেসবুক এ্যাকাউন্ট লক রোধে ৩ থেকে ৫ জন বিশ্বস্ত বন্ধু নির্বাচন করা যারা এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। অচিহ্নিত ডিভাইস থেকে লগ ইন হলে নোটিফিকেশন অপশনটি চালু রাখা। একাধিক সাইটের জন্য একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার পরিহার করা। যেমন- ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এর জন্য ভিন্নভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাই শ্রেয়। মাঝে মধ্যে পাসওয়ার্ড মিটারের মতো ওয়েব সাইটে গিয়ে পাসওয়ার্ড এর শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে দেখা। সবসময় আপডেটেড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা। এই বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করলে ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট নিরাপদ হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। এবার আসা যাক অন্য একটি বিষয়ে, তাহলো ফেসবুকে প্রতিদিন যে পোস্ট দেয়া হয় সেগুলো কতটা যৌক্তিক? আপনার ওয়ালে পোস্ট, ছবি, কমেন্ট ইত্যাদি দ্বারা অনেক ক্ষেত্রেই আপনার ব্যক্তিত্ব ও রুচিবোধের প্রকাশ পায়। ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ক্ষেত্রে যা জানা বা মানা ভাল- রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উস্কানিমূলক ও আগ্রাসী মতামত প্রকাশ বা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা। ফেসবুকে কারও সঙ্গে তর্কে না জড়ানো। কোন পোস্ট বা সংবাদ শেয়ার করার আগে তা অবশ্যই গুগল থেকে যাচাই করে নেয়া। কারণ দেখা যায় ফেসবুকে শেয়ার দেয়া বেশিরভাগ সংবাদই আসলে ভুয়া বা গুজব। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের না জেনে বা না বুঝে ভুয়া সংবাদ ভাইরাল করার ফলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। ফেসবুকে বিভিন্ন অশ্লীল ছবি, প্রোফাইল পিকচার, লেখা ও মন্তব্য পোস্ট না করা এবং অশ্লীল পেইজও গ্রুপ বর্জন করা। ফেসবুক ঘৃণা চাষাবাদের জায়গা নয়। তাই কোনভাবেই অন্যের অনুভূতিকে আঘাত করে এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বা লেখা পোস্ট করা উচিত নয়। ফেসবুকে ব্যবসায়িক স্বার্থে পোস্ট বুস্ট করতে চাইলে এ কাজে ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ না রাখাই মঙ্গল। অধিক সংখ্যক পরিচিত বন্ধু, রিলেশনশিপ স্ট্যাটস লোকেশন সার্ভিস ও শিশুদের ছবি ফেসবুকে না থাকাই ভাল। কিশোর-কিশোরীদের ১৮ বছরের পূর্বে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খোলা থেকে বিরত থাকা উচিত। বাড়িতে অফিসে লাইব্রেরী কিংবা সাইবার ক্যাফেতে ফেসবুক ওপেন করলে কাজ শেষে তার লগ আউট করা বাঞ্ছনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ১০০ শব্দের মধ্যে করা ফেসবুকে পোস্টগুলোতে মানুষের সম্পৃক্ততা বেশি পেয়েছে। তাইতো টুইটারে ১৪০ শব্দের মধ্যে লিখতে হয়। বর্তমানে বিশ্বে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৪৫ কোটিও বাংলাদেশ এই সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। ফেসবুক ব্যবহারে সতর্কতা ও সচেতনতাই পারে বহু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার হাত থেকে ব্যবহারকারীকে সুরক্ষা দিতে।
×