ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইসমাইল মাহমুদ

কন্যাশিশু সুরক্ষায় পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ১২:১২, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

কন্যাশিশু সুরক্ষায় পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

আমাদের দেশে বয়োসন্ধিকালে প্রায় ৬০ শতাংশ মেয়েশিশু যৌন হয়রানির শিকার হয় বলে জানিয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরাম। অতি সম্প্রতি ফোরামের এক গবেষণায় এমন উদ্বেগজনক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ বিষয়ে গবেষদের অভিমত, বয়োসন্ধিকালে যৌন হয়রানির কারণে দেশে বাল্যবিয়ের হার হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে না। জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরামে মাঠ জরিপে অংশ নেয়া শতভাগ নারীই মনে করেন পাবলিক পরিসরে ও অফিস আদালতে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির বিচারে পৃথক আইন প্রণয়ন আবশ্যক। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বয়োসন্ধিকালে অনাকাক্সিক্ষত যৌন সংস্পর্শের কারণে মেয়ে শিশুদের পরবর্তী যৌন জীবন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে ট্রমার মধ্য দিয়ে বয়োসন্ধিকালে প্রায় মেয়ে শিশুরা বড় হয়, সেখানে আচরণে স্বাভাবিকত্ব লোপ পাওয়ার শঙ্কা থাকে অনেকাংশে। জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরাম সম্প্রতি ১২ বছর থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৯২ জন নারীর ওপর জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে অংশ নেয়া ৩৯২ নারীর মতামতের ভিত্তিতে জরিপে দেখানো হয়েছে ৫৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ নারী ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যেই পাবলিক প্লেসে জীবনে প্রথমবারের মতো যৌন হয়রানির শিকার হয়। ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী ৬ বছর বয়সের আগেই এবং ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ নারী ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে জীবনে প্রথমবারের মতো যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন। অল্প বয়সেই এমন অনাকাক্সিক্ষত তিক্ত অভিজ্ঞতা তাদের পরবর্তী যৌন জীবনে অস্বাভাবিক প্রভাব ফেলে। পাবলিক প্লেসে যৌন হয়রানির প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে দাবি করেন গবেষণার সঙ্গে জড়িত জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি। তার দাবি মতে, ‘বাজার, ডাক্তারের চেম্বার, ধর্মীয় উপাসনালয় যেখানেই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো ইঙ্গিতের মাধ্যমে ঘটেছে এমন নয়, শারীরিক স্পর্শের মধ্য দিয়েও গেছে।’ জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক জানান, যেখানে মেয়েশিশু বা নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেখানে উপস্থিত অন্য পুরুষদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল এ প্রশ্নে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন ওইসব ঘটনার সময় ৬৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ পুরুষ নীরব সম্পূর্ণ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। আর ১১ শতাংশ পুরুষ অনেকটা নির্যাতনকারীর পক্ষেই কথা বলেছেন বা সাফাই গেয়েছেন। তবে ২৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ পুরুষ নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বা মৃদু অথবা শক্তভাবে প্রতিবাদমুখর হয়েছেন। অনেক সময় নারীর ওপর যৌন হয়রানির প্রতিবাদে যে পুরুষরা সোচ্চার হয়েছেন তারা নানাভাবে হয়রানির শিকারও হতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সমন্বিত আইন প্রয়োজন। পর্যবেক্ষণ বলছে, বয়োসন্ধিকালে অনাকাক্সিক্ষত যৌন হয়রানির ঘটনা ঠেকাতে না পারার কারণে বাল্যবিয়ে কমানো যাচ্ছে না। ২০০৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনামূলক নীতিমালায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হলেও এর পরিধি আরও ব্যাপক। অভিজ্ঞদের মতে, ‘নারীর চলাচল সহজ করতে হবে। নতুবা অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। নারীর বাইরের জগত নিরবচ্ছিন্ন করতেই হবে। নতুবা আমরা আর্থিকভাবে ও জাতিগতভাবে অনেক-অনেক পিছিয়ে যাব। একটা মেয়েশিশু এ সমাজে বড় হয়ে ওঠার পথে তার চারপাশে তার অগ্রজ নারীদের যেভাবে দেখেছে, সেটাকেই সে স্বাভাবিক হিসেবেই ভেবে নেয়। তাকে ছোটবেলা থেকে শেখানো প্রয়োজন কোন আচরণগুলো নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে এবং ওই নির্যাতন প্রতিরোধে তার কি করা উচিত। এ ছাড়া কোন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয় তা তাকে শেখাতে হবে। তবেই হ্রাস পাবে নারী তথা কন্যাশিশু নির্যাতন-নিপীড়ন। কিভাবে বয়োসন্ধিকালে অনাকাক্সিক্ষত যৌন হয়রানি থেকে মেয়ে শিশুকে রক্ষা করা যাবে তা নিয়ে কেউই কোন ধরনের প্রশিক্ষণ মেয়েশিশুদের দিচ্ছেন না। ফলে দিন দিন মেয়েশিশুদের মনে এ নিয়ে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। মেয়েশিশুদের অনাকাক্সিক্ষত যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা করতে হলে প্রথমে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে কার্যকর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা। পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছেলে ও মেয়ে শিশুদের শেখাতে হবে পরস্পরের সঙ্গে কোন আচরণগুলো একেবারেই করা যাবে না। কোন আচরণগুলো ছেলে ও মেয়ে শিশুদের ভবিষ্যত বিনষ্ট করবে এবং কোন আচরণগুলো নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। মেয়ে শিশুরা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে নিজেদের কিভাবে রক্ষা করবে বা আত্মরক্ষার কৌশল, দক্ষতা ও প্রতিকারের পদ্ধতি সম্পর্কে বাল্যকালেই শিক্ষা দিতে হবে। বাল্যকালেই শিক্ষা দিতে হবে ছেলে ও মেয়েদের সমমর্যাদা ও অধিকারের সমুদয় বিষয়গুলো। একটি মেয়ে শিশু যেন কোন অবস্থাতেই অন্যের দ্বারা ঘটানো কোন নির্যাতনকে মেনে নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখার কৌশল অবলম্বন না করে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রারম্ভেই প্রতিটি ছেলে ও মেয়েকে তার প্রতিটি আচরণ যেন দায়িত্বশীল হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং প্রতিটি শিশুকে আচরণের তারতম্যের কারণে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই মানসিকতা সম্পন্ন শিশুকে গড়ে তুলতে প্রথমেই শিশুদের নিজের পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কমিউনিটি এ্যান্ড সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বয়োসন্ধিকালে যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। জনসম্মুখে যৌন হয়রানি করা পুরোপুরি অস্বাভাবিক আচরণ। পাবলিক প্লেস বা উন্মুক্ত স্থানে নারীকে যৌন হয়রানি করা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও যৌনবিকৃতির নিষ্কৃষ্ট উদাহরণ। নারীদের বিকাশের যে কয়েকটি স্তর আছে তারমধ্যে ১১ থেকে ১৭ বছর বয়স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়কালে প্রতিটি মেয়ে শিশু বিভিন্ন দিক থেকে পরিণত হতে শুরু করে এবং দ্রুত বিকাশ ঘটে। এই সময় হরমোনজনিত নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে মেয়ে শিশুকে পরিবেশ ও প্রতিবেশের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা শিখতে হয়। সে সময় যদি কোন মেয়েশিশু অনাকাক্সিক্ষত যৌন সংস্পর্শের শিকার হয় বা যৌন হয়রানির মতো নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় তবে তার বাকি জীবনে সে আর ইতিবাচকভাবে ভাবতে শিখবে না বা শিখতে পারবে না। যার কারণে আমরা আর্থিকভাবে ও জাতিগতভাবে অনেক অনেক পিছিয়ে পড়ব। তাই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে সবাইকে। ইভটিজিং থেকেও বাঁচাতে হবে : সিলেটের অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান শামীমা (ছদ্মনাম) স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায় প্রতিদিনই বখাটে যুবকদের উত্ত্যক্তের শিকার হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান ওই বখাটে যুবকরা তাকে পথরোধ করে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সে (শামীমা) তা প্রত্যাখ্যান করে। এর পরদিন ওই বখাটে যুবকরা শামীমাকে স্কুলে যাওয়ার পথে পুনরায় পথরোধ করে কুপ্রস্তাব দিলে বিষয়টি সে তার পরিবারের কাছে জানায়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি মেম্বারের কাছে বিচার দাবি করা হয়। বিচার দাবি করাই ছিল শামীমার পরিবারের সবচেয়ে বড় অপরাধ! ইউপি মেম্বারের কাছে বিচার প্রার্থী হওয়ার এক সপ্তাহ পরই স্কুলে যাওয়ার পথে শামীমাকে বখাটে যুবকরা প্রকাশ্য দিবালোকে টেনে হেঁচড়ে শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গে নিপীড়ন চালায়। এ ঘটনা গ্রামের বেশ কিছু মানুষ রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করলেও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান বলে বখাটেদের প্রতিরোধে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি। ওই দিনই শামীমা নিজ ঘরে ফাঁস লাগিয়ে গ্লানিময় জীবন থেকে মুক্তি খোঁজে। আলোচ্য এ ঘটনা আমাদের দেশে ঘটা একটি উদাহরণ মাত্র। এ ধরনের ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন প্রান্তে ঘটেই চলেছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, স্কুল-কলেজে ইভটিজিংবিরোধী সামাজিক কমিটি গঠন ইত্যাদি কর্মপন্থা গ্রহণ করেও পরিত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না। ইভটিজিং বা নারী উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়ে দেশের আনাচে-কানাচে অকালে ঝরে পড়ছে অসংখ্য মেয়ে। যাদের অধিকাংশই শিশু ও কিশোরী। নারী উত্ত্যক্তকরণ বা ইভটিজিংকে একটি সামাজিক ব্যাধি। এ থেকে সমাজকে রক্ষা করতে বখাটেদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। ইভটিজিং বা নারী উত্ত্যক্তকরণ কি? : ইভটিজিং বা নারী উত্ত্যক্তকরণ বলতে কোন নারী, যুবতী, কিশোরী বা মেয়ে শিশুকে তার স্বাভাবিক চলাফেরার বাধাদান, তার চলার পথে স্বাভাবিক কাজকর্র্ম করা অবস্থায় অশ্লীল বা অশালীন মন্তব্য করা, যে কোন ধরনের ভয় প্রদর্শন, তার নাম ধরে ডাকা বা বিকৃত নামে তাকে সম্বোধন, চিৎকার চেঁচামেচি করা, তার দিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন কিছু ছোড়া, ব্যক্তিতে লাগে এমন ধরনের মন্তব্য করা, যোগ্যতা নিয়ে টিটকারি করা, তাকে নিয়ে অহেতুক হাস্যরসের উদ্রেক করা, রাস্তায় হাঁটতে বাধা দেয়া, অশ্লীল বা অশালীন অঙ্গভঙ্গি করা, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেয়া, সিগারেটের ধোঁয়া গায়ে ছোড়া, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পিছু নেয়া, অশ্লীলভাবে প্রেম নিবেদন করা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে গান-ছড়া বা কবিতা আবৃত্তি করা, চিঠি লেখা, পথ রোধ করে দাঁড়ানো, প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদান ইত্যাদি ইভটিজিংয়ের মধ্যেই পড়ে। সাধারণত কিশোরী মেয়ে, মেয়ে শিশু, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রী, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারী শ্রমিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ডাক্তারসহ সব স্তরের নারী ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া পাবলিক পরিবহনে বিশেষ করে বাস, ট্রেন, সিএনজি অটোরিক্সায়ও নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। আইনে যা আছে? : বাংলাদেশ দ-বিধির ৫০৯ ধারায় ইভটিজিং সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যদি কোন কোন ব্যক্তি কোন নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে সে নারী যাহাতে শুনিতে পায় এমনভাবে কোন কথা বলে বা শব্দ করে কিংবা সে নারী যাতে দেখিতে পায় এমনভাবে কোন অঙ্গভঙ্গি করে বা কোন বস্তু প্রদর্শন করে, কিংবা অনুরূপ নারীর গোপনীয়তা অনাধিকার লঙ্ঘন করে, তা হলে সেই ব্যক্তি এক (১) বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদ-ে কিংবা অর্থদ-ে কিংবা উভয় দ-েই দ-িত হবে।’ ৩৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর শালীনতা নষ্ট করার অভিপ্রায় বা সে তদ্বারা তার শালীনতা নষ্ট করতে পারে জেনেও তাকে আক্রমণ করে বা অপরাধমূলক বল প্রয়োগ করে তা হলে সে ব্যক্তি ২ বছর পর্যন্ত যেন কোন বর্ণনার কারাদ-ে বা জরিমানাদ-ে বা উভয় প্রকার দ-ে দ-িত হবে।’ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর বা শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তা হলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ১০ বছর কিন্তু অন্যূন ৫ বছর সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হবেন এবং তার অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-িত হবে।’ একই আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী, ‘যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তা হলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হবেন এবং তার অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-িত হবেন। ধর্ষণ-পরবর্তী নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম করাদ-ে দ-নীয় হবেন এবং তার অতিরিক্ত অন্যূন ১ লাখ টাকা অর্থদ-েও দ-নীয় হবেন।’ দ-বিধির ২৯৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোন ব্যক্তি অন্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করে কোন প্রকাশ্য স্থানে কোন অশ্লীল কার্য করে অথবা কোন প্রকাশ্য স্থানে বা তার সন্নিকটে কোন অশ্লীল গান, গাঁথা, সংগীত বা পদাবলি গায়, আবৃত্তি করে বা উচ্চারণ করে তাহলে সে ব্যক্তি ৩ মাস পর্যন্ত যে কোন ধরনের কারাদ-ে বা জরিমানাদ-ে বা উভয় প্রকার দ-ে দ-িত হবে।’ [তথ্যসূত্র : মোঃ গাউছুল আজম, র‌্যাবের আইন কর্মকর্তা] ইভটিজিং বন্ধে করণীয় : ১. পরিবারের সদস্যদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ইভটিজিং বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৩. যেসব কর্মক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করেন সেসব কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীরা নারী সহকর্মীর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। ৪. সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ নারী উত্ত্যক্তকরণ বা ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। ৫. প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবায় মসজিদের ইমাম সাহেব ইভটিজিংয়ের ব্যাপারে বয়ান রাখতে পারেন। ৬. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে ইভটিজিং বিরোধী সভা, সমাবেশের আয়োজন করতে পারেন। এতে জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে। ৭. স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ইভটিজিংয়ের ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা নিতে হবে। ইভটিজিং যে বা যারা করবে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করার পদক্ষেপ নিতে হবে জনপ্রতিনিধিদের। সর্বোপরি ইভটিজিং বা নারী উত্ত্যক্তকরণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কোন ধরনের ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটলে সবাইকে ভিকটিমের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিকারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশের প্রতিটা নারীর অধিকার রয়েছে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করার। আমরা সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে অবশ্যই আমাদের কন্যা, জায়া ও জননীদের পথচলা হবে নিরাপদ।
×