ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নীলফামারীতে নতুন পেঁয়াজে সয়লাব আমদানি করা পেঁয়াজে পচন

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

নীলফামারীতে নতুন পেঁয়াজে সয়লাব আমদানি করা পেঁয়াজে পচন

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ উত্তরের নীলফামারী জেলাসহ তার আশপাশে এলাকায় পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে হাটবাজারে বাজারে দেশী আগামজাতের নতুন পেঁয়াজে সয়লাব হতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছে দিন দিন দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে তেমনি দামও অনেক কমছে। এদিকে দেশী নতুন পেঁয়াজে বাজার সয়লাব হতে থাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ভোক্তারা। ফলে বিক্রি না হওয়ায় ওই পেঁয়াজে পচন ধরেছে। যা শহরের ময়লা ফেলার ভাগারে ফেলে দিতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নীলফামারীর বড় বাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় প্রকার ভেদে দেশী নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ ও ১১০ টাকায়। দেশী পুরাতন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজিতে। অনেক ক্রেতা বলছেন বাজারে আগামী নতুন পেঁয়াজে ভরছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের বাজার দর ৫০ টাকার বেশি থাকার কথা নয়। অথচ পেঁয়াজ কিনে খেতে হচ্ছে ১শ’ টাকার কাছাকাছি। এখানে আড়ত বা খুচরা ব্যবসায়ীদের কোন কারসাজি থাকতে পারে। জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ও নীলফামারী সদরের গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা গ্রাম ও কুন্দুপুকুর গ্রামে পেঁয়াজ চাষের জন্য খ্যাত। ওই গ্রামে মাঠের পর মাঠ কৃষক পেঁয়াজ রোপণ করছেন। এ ছাড়া তিস্তা নদীর চর জুড়ে চলছে পেঁয়াজের আবাদ। ধোবাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক হাতেম আলী বলেন, আমি এ বছর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। গত বছর মাত্র ২৫ শতাংশ জমিতে চাষ করেছিলাম। আশা করি, ফলন ভাল হলে প্রায় ৪০ মণ পেঁয়াজ পাব। বড়ভিটা গ্রামের ধাইজান পাড়ার মোবারক মিয়া বলেন, আমি প্রতিবছর পেঁয়াজের চাষ করি। এ বছর দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে ৬০-৬৫ মণ পেঁয়াজ পাব। একই এলাকার কৃষক আব্দুল আজিজ জানান, গত বছর পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছিলাম এবং বছর শেষে একটু ভাল দাম পেয়েছি। তাই আমি এ বছর দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর টেপাখড়িবাড়ির কৃষক ফরিদুল জানান বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার চরের জমিতে দ্বিগুণ পেঁয়াজের আবাদ করেছে চরবাসী। তিনি বলে পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুনের আবাদ করা হয়েছে। এবার চরে কম করে হলেও আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হতে পারে বলে তিনি জানান। নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, জেলার ছয় উপজেলায় এ বছর এক হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে নীলফামারী সদরে। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২ লাখ ৮৫৯ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে আগামজাতের উৎপাদিত দেশী পেঁয়াজ বাজারে ভরছে। ভরা মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে উঠলে ৩০ টাকায় কেজিতে নেমে আসবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এবার কৃষক পেঁয়াজের ভাল দাম পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে। এ কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বা¤পার ফলনের আশা করছি। এদিকে বাজারে নতুন দেশী পেঁয়াজে সয়লাবের কারণে আমদানি করা বড় বড় পেঁয়াজ থেকে মুখ ফিরিয়েছে ভোক্তরা। ফলে আমদানি করা পেঁয়াজের বিক্রি কমে যাওয়ায় সেই পেঁয়াজে পচন ধরেছে। ময়লার ভাগাড়ে পচা পেঁয়াজ ফেলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে নীলফামারী পৌরসভার ময়লার ভাগারের সামনে ফেলে দেয়া পচা পেঁয়াজের দুর্গন্ধে এলাকা সয়লাব যায়। ময়লার ভাগারে পচে যাওয়া পেঁয়াজ ফেলে দেয়ার পাশাপাশি চেম্বার ভবনের সামনে নষ্ট হয়ে যাওয়া ও পেঁয়াজের গাছ বেরিয়ে পড়া বস্তা বস্তা পেঁয়াজ খামাল করে রাখা ছিল। কিছু পেঁয়াজ মাটিতে বিছিয়ে রাখা হয়। নষ্টের পথে ওই পেঁয়াজ। জানা যায় মেঘনা গ্রুপের পক্ষে নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স ভবনের সামনে-চেম্বারের পক্ষে ৫২ টাকা কেজি দরে আমদানি করা এই পেঁয়াজ দীর্ঘ মাস খানেক ধরে বিক্রি হচ্ছে। একরাম নামের এক ব্যক্তি জানান এই পেঁয়াজগুলো মেঘনা গ্রুপ মিয়ানমার থেকে আমদানি করেছে। পেঁয়াজগুলো উন্নত জাতের ছিল না। ফলে অনেক পেঁয়াজ পচে যায়। অথচ মিসরসহ অন্যান্য দেশের যে সকল পেঁয়াজ আমদানি করা হয় তার মান ভাল ছিল। মেঘনা গ্রুপের ওই আমদানি করা পেঁয়াজ নীলফামারী চেম্বার কর্র্তৃপক্ষ বিক্রি করে আসছিল ৫২ টাকা কেজি দরে। প্রথমের দিকে এই পেঁয়াজের ওপর ভরসা করতে হয়েছিল ভোক্তাদের। এখন ক্রেতা কমে যাওয়ায় ওই পেঁয়াজের বিক্রি কমে মজুদ বেড়ে যায়। ফলে বস্তার মধ্যেই আমদানি করা পেঁয়াজে পচে যেতে থাকে। চেম্বারের সচিব রেজা শাহরিয়ার ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
×