ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ১১:১২, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাতে ভোট দিতে না পারে সে জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এর আগে একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন বিএনপি নেতাকর্মীদের দেদারছে গ্রেফতার করা হচ্ছে। ফখরুল বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন, বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওপর হামলা, তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশী তল্লাশি ও মামলা-গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ভোটের ঠিক একদিন আগে আওয়ামী লীগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রোগ্রাম করে এটাই প্রমাণ করছে যে তারা এই নির্বাচনকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। এটা নির্বাচনের আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে বলার পরে তারা আমাদের বলেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা করতে বাধা নেই তবে ভোট চাইতে পারবে না। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি করছে। তল্লাশির নামে পুলিশ নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। ফখরুল বলেন, একদিন পরেই ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ঢাকাবাসীর কাছে আমাদের উদাত্ত আহ্বান, আপনারা সংবিধান সম্মত অধিকার রক্ষার জন্য, ১৯৭১ সালে একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যা অর্জন করেছেন তাকে রক্ষার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করুন, আপনাদের অধিকার নিশ্চিত করুন। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আসুন আমরা সকল অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাস ও ত্রাস সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আসুন ১ ফেব্রুয়ারি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আমরা আমাদের মতামত প্রদান করি। নিরাপদ ও বাসযোগ্য ঢাকা মহানগরী গড়ে তুলি, অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা শুরু করি। আমরা নিশ্চিত ঢাকাবাসী যদি ভোট দিতে পারেন তাহলে অবশ্যই আমরা জয়লাভ করব। সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই যে নির্বাচন নামক একটা খেলা, একটা তামাশা- এটা করার দরকারটা কি? তারা যখন একতরফাভাবেই দেশ পরিচালনা করতে চান তাহলে সেটা ঘোষণা করে দিলেই তো জনগণ রেহাই পায়। তিনি বলেন, এ সরকার নির্বাচনকেও প্রহসনে পরিণত করেছেন, এজন্য একসময়ে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও উদাসীনতায় ও সরকারের নির্দেশ ছাড়া তাদের কোন কাজ করার কোন শক্তি নেই। সেভাবেই এই নির্বাচনকেও তারা পুরোপুরি একটা দলীয়করণের নির্বাচন করতে চলছে। নির্বাচনের আচরণ বিধি লঙ্ঘনের হাজারো অভিযোগ করা হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ক্রমাগত নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে চলেছে, রঙ্গিন পোস্টার লাগিয়েছে, ফুটপাথের ওপর নির্বাচনের অফিস নির্মাণ করা হয়েছে এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যে উস্কানিমূলক বক্তব্য তাতে নির্বাচনের পরিবেশ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই মনে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফখরুল বলেন, সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীদের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তাকে রোধ করার শক্তি এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নেই। তবে নির্বাচন কমিশনকে বলছি সংবিধানে প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করুন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন। অন্যথায় দেশের জনগণ কোনদিন আপনারদের ক্ষমা করবে না। আপনাদের জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ফখরুল বলেন, উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের ওপর শারীরিক আক্রমণ, নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণকারী কর্মীদের ওপর আক্রমণ, আহত করা এবং মামলা দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি ও গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা চিকিৎসার জন্য অথবা ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় এসেছিলেন তাদের বেআইনীভাবে গ্রেফতার করে একতরফা নির্বাচন করতে চলেছে। ‘সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের বাধা দিচ্ছে’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আরমগীর বলেছেন, ‘সরকার নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করে ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনতে চায় বলেই বিদেশী পর্যবেক্ষকদের আসতে বাধা দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত জাতীয় নির্বাচনেই সরকার অবজারভারদের (পর্যবেক্ষক) আসতে দেয়নি। ভিসা দেয়নি।’ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
×