ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাধ দমনে কাজ করছে পুলিশের ইউনিট

প্রাযুক্তিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইমও বেড়েছে

প্রকাশিত: ১১:১১, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

প্রাযুক্তিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইমও বেড়েছে

ফিরোজ মান্না ॥ ইন্টারনেটে তথ্যের প্রবাহ ঠিক রেখে পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) অপরাধ দমনে দিনরাত কাজ করছে। প্রাযুক্তিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম বেড়েছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হচ্ছে। পর্নোগ্রাফি, হেইট স্পিচ, অনলাইন প্রতারণা ও অনলাইন ব্যাঙ্ক জালিয়াতি তো আছেই। ব্যক্তিগতভাবেও লাখ লাখ মানুষ সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১৬ সাল থেকে পুলিশের এই ইউনিট কাজ করছে। বর্তমানে ইউনিটটির সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ ও দেশকে নিরাপদ রাখতে পুলিশের এই ইউনিট ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। এক বছরে ৩২১ টি অভিযোগের মধ্যে সাইবার অপরাধে ৯৯ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকি অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিট এ তথ্য জানিয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, প্রাযুক্তিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম বেড়ে গেছে যার মধ্যে হ্যাকিং, ডিফেমেশন, পর্নোগ্রাফি, হেইট স্পিচ, অনলাইন প্রতারণা ও অনলাইন ব্যাঙ্ক জালিয়াতি বেশি পরিমাণ সংঘটিত হয়। ভিক্টিমদের মধ্যে নারি ও টিনেজারের সংখ্যা বেশি, অনেক ক্ষেত্রে এক্স হাসব্যান্ড বা এক্স বয়ফ্রেন্ড ভয়ঙ্করভাবে সাইবার ক্রাইমে জড়িয়ে পড়ছে। ৫ বছর ধরে আমরা সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ বিভাগ সিটিটিসির অধীনে ডিএমপির আওতায় জনগণের জন্য সাইবার অপরাধ বিরোধী সেবা প্রদান করে আসছি। যে কেউ সাইবার অপরাধের শিকার হলে অবশ্যই আমাদের কাছে আসবেন, এর প্রতিকারে আমরা স্টেইট অব দ্যা আর্ট টেকনোলজির মাধ্যমে সেবা প্রদান করছি। আমাদের হটলাইন নম্বর ০১৭৬৯৬৯১৫২২। এ ছাড়া রয়েছে ‘সাইবার ক্রাইম হেল্প ডেস্ক’। ই-মেইলেও অভিযোগ নেয়া হয়ে থাকে। ই-মেইল ঠিকানা[email protected]। ফেসবুক পেজেও অভিযোগ করা যাবে। ফেসবুক পেজ হচ্ছেww-w.facebook.com/cyberctdmp। সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) জানিয়েছে, ২০১৯ সালে সাইবার অপরাধে মোট মামলা তদন্তের জন্য পাওয়া যায় ৩২১। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৪৪। ১০১ অভিযোগপত্র জমা রয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট (এফআরটি) ১৭, তথ্যগত ভুল ১৩, অন্যান্য পুলিশ রিপোর্ট ১৩, অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৯ জনকে। ২০১৬ সালের মে মাসে সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিট গঠন করার পর অভিযোগ জমা হয় ১৬। ২০১৭ সালে অভিযোগ জমা পড়ে ৫৬৬। ২০১৮ সালে অভিযোগ জমা পড়ে এক হাজার ৭৬৫। ২০১৯ সালের অভিযোগের সংখ্য ৩৬৯। ইন্টারনেটের সঙ্গে আইওটি, বিগডাটা, এআই ও কুয়ান্টাম কম্পিউটিং সংযুক্ত হওয়ার পর বিশ্বে বিস্ময়কর সব আবিষ্কার ঘটছে। নতুন প্রযুক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অপরাধ প্রবণতাও অনেকগুণ বেড়ে গেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০০৮ সালে দেশে মাত্র আট লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করত। বর্তমানে প্রায় ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ২০০৮ সালে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো মাত্র সাড়ে সাত জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড)। বর্তমানে এক হাজার ৩শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে। ৪ হাজারের বেশি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রথম স্তর অতিক্রম করবে। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। বাংলাদেশ দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্তর অতিক্রম করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ফাইভ জি নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। তৃতীয় সাবমেরিনের ক্যাবল স্থাপনের জন্য কনসোর্টিয়ামের সদস্য পদ নিয়েছি। এ বছর থেকেই ব্যান্ডউইথের পরিমাণ ২ হাজার এক শ’ জিবিপিএস প্রয়োজন হবে। দেশে ডেটার ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। কুয়াকাটা থেকে ব্যান্ডউইথ বাড়াতে পারবে সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি। তারা সেখান থেকে দেড় হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পেতে পারে। আমরা বিটিসিএলকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল আধুনিকায়ন করে সারাদেশে ইন্টারনেট বিস্তার করা হবে। জেলা পর্যায়ে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একইভাবে উপজেলা পর্যায়েও ইন্টারনেটের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আমরা জেলায় ১০ জিবিপিএস ও উপজেলায় ২ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি। বিভাগীয় পর্যায়ে আরও বেশি ব্যান্ডউইথ দেয়া হবে। সূত্র জানিয়েছে, সাইবার জগতকে সরকারের তিনটি সংস্থা সর্বক্ষণিক মনিটর করার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে। সংস্থাগুলোতে বাড়তি জনবল নিয়োগও করে সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখার কাজ চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আর আগের মতো দেশবিরোধী অপপ্রচার হচ্ছে না। ব্যক্তিপর্যায়েও নোংরামি অনেকাংশে কমে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এ ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার রোধে ‘কন্টেন্ট ফিল্টারিং’ করা হচ্ছে। এ জন্য একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কোন পরিস্থিতিতেই রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে দেয়া হবে না। ফেসবুকে আমাদের ফিল্টারিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। ফেসবুক আমেরিকান আইন অনুযায়ী কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে। কোন কন্টেন্ট বাদ দেয়া বা অন্য বিষয়ে ফেসবুককে শুধু অনুরোধ করা যায়। ফেসবুকের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতে হয়। ফেসবুক তার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নিজেদের কাজগুলো করে দেয়। এখন ফেসবুকের সঙ্গে বিটিআরসি কাজ করে যাচ্ছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিটিআরসিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। অনেক আগে থেকেই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটর করার জন্য সেল গঠন করেছে। ওই সেল কাজ করে যাচ্ছে।
×