ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চলতি বছরেই

প্রকাশিত: ১১:১০, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চলতি বছরেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চলতি বছরই অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির নিরসন হবে। অর্থের সাশ্রয় ঘটবে। বিশেষ করে ছাত্রীদের বিড়ম্বনা কমবে। তবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে একমত নয় বড় বিশ^বিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাউন্সিল। এরই মধ্যে আপত্তি উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে। ইতোমধ্যেই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছে ঢাবির একাডেমিক কাউন্সিল। বৃহস্পতিবার ইউজিসি পরিদর্শনে এসে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। একই সঙ্গে বলেছেন, উচ্চশিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে ইউজিসির কর্ম পরিধি সম্প্রসারণ, ক্ষমতায়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউজিসিতে দিনব্যাপী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করবেন। ইউজিসিতে তিনি মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ উচ্চশিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সার্বিক কর্মকা- সম্পর্কে মন্ত্রীকে অবহিত করেন। সভায় বক্তব্য রাখেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম, প্রফেসর ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ও প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর। উপস্থিত ছিলেন পরিচালক ড. মোঃ সুলতান মাহমুদ ভূইয়া, ড. ফেরদৌস জামান, ড. শামসুল আরেফিন, পরিচালক, মোঃ কামাল হোসেন, ড. মোঃ ফখরুল ইসলাম, মোঃ ওমর ফারুখ, মোঃ আবদুল ওহাব, মোঃ শাহ আলম প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এজন্য শিক্ষা সম্পর্কিত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই শক্তিশালী করা হবে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকেই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির নিরসন হবে। অর্থের সাশ্রয় ঘটবে। বিশেষ করে ছাত্রীদের বিড়ম্বনা কমবে। উচ্চশিক্ষাকে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে একটি সম্মানজনক পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে ডাঃ দীপু মনি কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা ও স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের তাগিদ দেন। দ্রুত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের একটি নীতিমালা প্রণয়নসহ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সান্ধ্য কোর্স বন্ধ, চলমান প্রকল্পগুলোতে পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের নির্দেশও দেন শিক্ষামন্ত্রী। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গত ২৩ জানুয়ারি চলতি বছর থেকেই দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি, চবি, রাবি, জাবি) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে কথা দেয়নি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শীঘ্রই ইউজিসি বৈঠকে বসবে বলে জানিয়েছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ। জানা গেছে, ভর্তি প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন বা স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একমত হতে পারছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান ইতোমধ্যেই বলেছেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। আমাদের এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে ইউজিসির বৈঠকে অংশ নেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। তার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ সেখানে যোগ দেন। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল এটার পক্ষে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে এ বিষয়টা নিয়ে একবার আলোচনা করা হয়েছিল, সেখানে শিক্ষকরা এটা সমর্থন করেনি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সমর্থন করি। আমি মনে করি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। মানুষের কষ্ট লাঘব হবে, অর্থ ও সময় কম ব্যয় হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে একই সঙ্গে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও ক্লাস শুরু করতে পারবে। ইউজিসির বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, ইউজিসিতে আমি গিয়েছিলাম। তারা বলেছে, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাদ দিয়ে হলেও বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিয়ে এ বছর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা শুরু করা হোক। আমি তখন বলেছি, বড় বড় যে বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেমন ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ যারা ভর্তি পরীক্ষা পাইয়োনারিং করবে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ডেকে আলাদাভাবে একটি বৈঠক করা। এদিকে আপত্তির বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আগাতে চায় ইউজিসি। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেছেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠান অনেকে এটা করতে চাচ্ছেনা। তার পরেও আমরা চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করছি সকলকে নিয়ে প্রক্রিয়াটা চালু করতে। কিন্তু একান্তই যদি অনেকে রাজি না হয় তাহলে তাদের বাদ দিয়ে হলেও যারা রাজি হবে তাদের নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা শুরু করতে চাই।
×