ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে

অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু রবিবার, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু রবিবার, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কারণে ১ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ইতোমধ্যে মাসব্যাপী এই বইমেলার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজক বাংলা একাডেমি। জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রাণের মেলাটি এবার উৎসর্গ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মেলার অঙ্গসজ্জা থেকে বই প্রকাশনায় বিশেষভাবে উপস্থাপিত হবেন বাঙালীর এই মহান নেতা। মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির প্রত্যাশা অনুযায়ী ইতিহাসের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থমেলাটি অনুষ্ঠিত হবে এবার। জন্মশতবর্ষকে সামনে রেখে বাংলা একাডেমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ২৬টি গ্রন্থ প্রকাশ করছে এবারের মেলায়। প্রকাশিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত তৃতীয় গ্রন্থ ‘আমার দেখা নয়াচীন’। মাসব্যাপী বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে সাংবাদ সম্মেলন করে আয়োজক বাংলা একাডেমি। একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী গ্রন্থমেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ, পৃষ্ঠপোষক বিকাশ লিমিটেডের সিএমও মীর নওবত আলী এবং মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ক্রসওয়ার্ক কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা কবি পিয়াস মজিদ। মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা মানে শুধু বইমেলা নয়, এটা আমাদের চেতনার অংশ। ভাষাশহীদদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মেলার সঙ্গে। এবার আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বইমেলাটি আয়োজনের চেষ্টা করেছি। এবারের বইমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। মহান নেতার পাশাপাশি লেখক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে বিশেষভাবে মেলে ধরা হবে তার রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে। তার নিজ রচনাসহ তাকে নিয়ে লেখা ২৬টি বই প্রকাশ করা হবে এবারের মেলায়। জাতির জনকের জীবনের নানা বিষয় উঠে আসবে সেসব লেখায়। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মেলাকে চার ভাগে বিভক্ত করে সাজানো হয়েছে। ‘শিকড়’, ‘সংগ্রাম’, ‘মুক্তি’ ও ‘অর্জন’ এই চার ভাগে যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের পথচলাকে নানা আয়োজনের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। এছাড়া গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রকাশিত ২৬টি গ্রন্থ নিয়ে প্রতিদিন আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, এবার মেলার পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া মেলাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রকাশকদেরও নিজ উদ্যোগে তাদের স্টলের সামনের অংশটুকু পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। জালাল আহমেদ বিস্তারিত তুলে ধরে জানান, বইমেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসকদের একটি দল নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া মেলার পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার দেড় হাজার পুলিশ সদস্য ও আনসার বাহিনী নিয়োজিত থাকবে বইমেলায়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতিদিন মেলা শুরু হবে বিকেল তিনটায়। চলবে নয়টা পর্যন্ত। তাছাড়া প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার মেলা বেলা ১১টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চলবে। সেইসঙ্গে প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার যথারীতি থাকবে শিশুপ্রহর। শিশুপ্রহর থাকবে বেলা ১১টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি আঙিনায় তিনটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ বাহিরে ৬টি পথ থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি মিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ বর্গফুট জায়গায় গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি ইউনিট; মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে। সেখানে ১৫২টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ৬টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৫৮টি লিটলম্যাগকে স্টল দেয়া হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ২ প্যাভিলিয়ন, ৪ ইউনিটের ২টি, একাডেমির শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর ১টি স্টল থাকবে। মেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ কমিশনে এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি নতুন ও পুনর্মুদ্রিত মোট ১০৪টি বই প্রকাশ করেছে। এবারও শিশুকর্নার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
×