ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৬৫ প্লাটুন বিজিবি নেমেছে, থাকছে ৫০ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য

কেউ অগ্নিসন্ত্রাসের চেষ্টা করলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে ॥ র‌্যাব ডিজি

প্রকাশিত: ১১:০১, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

কেউ অগ্নিসন্ত্রাসের চেষ্টা করলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে ॥ র‌্যাব ডিজি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অতীতের মতো নির্বাচনকালে কেউ অগ্নিসন্ত্রাস বা বোমাবাজির চেষ্টা করলে জনগণই তার জবাব দেবে। অতীতে যারা এসব করেছে তারা সবাই চেনা। জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের উচিত জবাব দেবে। নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে বহিরাগতদের আবারও ঢাকা ছাড়ার আহ্বান জানান তিনি। ভোট শেষে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ঢাকায় মাদক ও জঙ্গী নিমর্ূূলের মতো দুর্নীতি নির্মূলেও কাজ করা হবে। তাই ম্যানহোলের ঢাকনা চোর বা ছিনতাইকারীদের জনপ্রতিনিধি করা যাবে না। নির্বাচনে যে কোন অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবও প্রস্তুত থাকছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই ঢাকায় ৬৫ প্লাটুন বিজিবি নামবে। চারদিন মাঠে থাকবে। সব মিলিয়ে সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে। ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন হচ্ছে। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাচনকেন্দ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ে কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের ডিজি পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ জনকণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিকটঅতীতে নির্বাচনপরবর্তী অগ্নিসন্ত্রাস ও বোমা হামলাসহ ব্যাপক তাণবের ঘটনা ঘটেছে। ওসব ঘটনা কারা-কিভাবে ঘটিয়েছিল, তা সবারই জানা। তারা সবাই চেনা। নির্বাচনে ঢাকাবাসী নিশ্চয়ই ভোটের মাধ্যমে তার উপযুক্ত জবাব দেবে। প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। অগ্নিসন্ত্রাস ও বোমা হামলা চালিয়ে বহু মানুষ হত্যা করে, জীবন্ত পুড়িয়ে মারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ। র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, এবার অতীতের মতো অগ্নিসন্ত্রাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে না। তবে কেউ যদি তা করার চেষ্টা করে, তার সমুচিত জবাব দেয়া হবে। র‌্যাব প্রধান বলেন, এবার নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। দু/একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এবার নির্বাচনের পরিবেশ খুবই গণতান্ত্রিক। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে তিনি বহিরাগতদের ঢাকা ছাড়ার আহ্বান জানান। তবে কেউ যদি নিতান্তই থেকে যান, তিনি যেন কোন ঝামেলা করার চেষ্টা না করেন। ঝামেলার চেষ্টা করলেই তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকায় কোন বহিরাগত থাকতে দেয়া হবে না। ভোটাররা যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তার সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও দুর্নীতি নির্মূলে র‌্যাব কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য কোন ম্যানহোলের ঢাকনা চোর বা ছিনতাইকারীকে জনপ্রতিনিধি না করার আহ্বান জানান তিনি। নির্বাচনকালে গুজব ছড়িয়ে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর মনিটরিং করা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোন কোন কেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হতে পারে। প্রস্তুত থাকছে র‌্যাবের হেলিকপ্টার, ডগ স্কোয়াড, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, কমান্ড টিমসহ সব সদস্য। ঢাকার আশপাশের সব চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তবে জরুরী কাজে জড়িত ব্যক্তিরা যাতে নিরাপত্তার কারণে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে বাহিনী সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার ও র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন কাশেমসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারই ঢাকায় ৬৫ প্লাটুন বিজিবি নামানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত থাকছে। বিজিবি, র‌্যাব ও নৌপুলিশ নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। দুই সিটিতে দুই হাজার ৪৬৮ কেন্দ্র রয়েছে। পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ১২৪ ভ্রাম্যমাণ ও ৪৩ স্ট্রাইকিং টিম, র‌্যাবের ১২৯ টিম নিয়োজিত থাকছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক অপরাধের বিচার কাজের জন্য দুই সিটিতে ১২৯ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৬৪ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা বৃহস্পতিবার থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে। ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন বা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই ঢাকার সন্দেহভাজন মেস, বাসাবাড়ি, হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় জোরদার তল্লাশি অভিযান চালানো হবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, পরিস্থিতি বিবেচনা করে অভিযানের তীব্রতা আরও বাড়ানো হতে পারে। সবই নির্ভর করছে নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনপরবর্তী পরিস্থিতির ওপর।
×