অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোনভাবেই অন্য কোম্পানির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না শেয়ারবাজারে তালিকাভক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই লিমিটেড। কোম্পানিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্বপ্নের লোকসানের ধাক্কাতেই আরও লোকসানে পড়ছে এসিআই লিমিটেড। এর আগে কোম্পানিটির লোকসানের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের পক্ষ থেকে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। তবুও কোন কাজ হয়নি। সর্বশেষ প্রান্তিকে (২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা করে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ৬ টাকা ৯৮ পয়সা লোকসান করে।
কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিয়মিত মুনাফা করা এবং শেয়াহোল্ডারদের মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দেয়া এসিআই ২০১৮ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বড় ধরনের লোকসান দেখায়। কোম্পানিটি ওই প্রান্তিকে লোকসান দেখায় ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা । প্রতিষ্ঠানটির এ লোকসান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসই। বিষয়টি নিয়ে ডিএসইর একাধিক বোর্ডসভায় আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে এসিআই লিমিটেডের আর্থিক তথ্য বিশেষ নিরীক্ষার দাবি জানায় ডিএসই।
ডিএসইর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, এসিআই গত ১০ বছর ধরে তার রিজার্ভ থেকে লোকসানের বিপরীতে ভর্তুকি দিচ্ছে। ৩৬ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানিটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লোকসানের নামে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।
তবে ডিএসইর অভিযোগের বিষয়ে বিএসইসি পরবর্তীতে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অপরদিকে এসিআইয়ের লোকসানের পাল্লা প্রতিনিয়ত ভারী হচ্ছে। চলতি হিসাব বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর এই তিন মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান করে ৬ টাকা ৯৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৮০ পয়সা। তবে তার আগের বছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি মুনাফা হয় ৫ টাকা ৪৪ পয়সা। আর চলতি হিসাব বছরের জুলাই-ডিসেম্বর এই ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয় ১২ টাকা ২০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি মুনাফা ৫ পয়সা। পরিচালন ব্যয় এবং আর্থিক ব্যয় বেড়ে যাওয়া লোকসানে পড়ার কারণ হিসেবে কোম্পানিটি জানিয়েছে। লোকসানের পাশাপাশি কোম্পানিটির সম্পদমূল্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৪৪ টাকা ৭৬ পয়সা, যা ২০১৯ সালের ৩০ জুন শেষে ছিল ১৬৬ টাকা ৯৮ পয়সা।
এদিকে কোম্পানিটির পরিচালন নগদ প্রবাহের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ার প্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো বা পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ২৪ টাকা ১৩ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল ঋণাত্মক ২০ টাকা ১৮ পয়সা। সাম্প্রতিক সময়ে লোকসান করলেও এসিআই লিমিটেড নিয়মিত ভালো মুনাফা করে আসছিল। ফলে প্রতিবছরই শেয়াহোল্ডারদের মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০০ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দেয়।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১১৫ শতাংশ নগদ এবং সাড়ে ৩ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দেয়। এ ছাড়া ২০১৭ সালে কোম্পানিটি থেকে শেয়ারহোল্ডাররা ১১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে পায়। তার আগের বছর ২০১৬ সালে শেয়ারহোল্ডাররা ১১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে পায়।
৫৭ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৬ সালে। প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ৯৫৭টি। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৪০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: