উন্নত বিশ্বে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে গণতন্ত্র

গত ২৫ বছরের মধ্যে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো গণতন্ত্র ব্যাপকমাত্রায় জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় সম্প্রতি এ তথ্য উঠে এসেছে। গণতন্ত্রের প্রতি মনোভাব জানতে ৪০ লাখের ওপর মানুষকে নিয়ে ৩ হাজার ৫শ’টি জরিপ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। রয়টার্স। জরিপে গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তোষ সবচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র এখন হতাশায় পড়েছে বলে জানিয়েছেন জরিপের প্রধান ড. রবার্তো ফোয়া। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গণতন্ত্র সম্পর্কে জনগণের অসন্তুষ্ট ৪৮ থেকে ৫৮ শতাংশে হয়েছে যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। ১৫৪ দেশে চালানো ওই জরিপে নিজ নিজ দেশের গণতন্ত্রের প্রতি জনগণ সন্তুষ্ট কিনা সেই প্রশ্ন রাখা হয়। প্রশ্নের উত্তরে কিছু দেশের ডেটা ৭০-এর দশক থেকে বিংশ শতাব্দীর শেষের দশকে গণতন্ত্রের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। কিন্তু গত দশকে ধীরে ধীরে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮ সালের আর্থিক দুর্ঘটনার ‘অর্থনৈতিক ধাক্কা’ ও ২০১৫ সালের শরণার্থী সঙ্কট এবং বৈদেশিক নীতি ব্যর্থতার ক্ষেত্রে অসন্তুষ্টির রাজনৈতিক ও সামাজিক পুনর্বিবেচনার প্রতিফলন ঘটেছে। গবেষণায় যুক্তরাজ্যে ১৯৭০ সাল থেকে ত্রিশ বছর গণতন্ত্রের প্রতি সন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু ২০০৫ সালের পর থেকে অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং জাতীয় নানা বিষয়ে বিতর্ক দেখা দেয়ায় গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা হারাতে শুরু করে। যুক্তরাজ্যে ১৯৯৫ সালে গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তোষের হার ছিল ৪৭ ভাগ, ২০০৫ সালে ছিল ৩৩ ভাগ। ২০০৯ সালে সাধারণ নির্বাচনের আগে গিয়ে দাঁড়ায় ৬১ ভাগ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত অসন্তোষের হার ছিল শতকরা ২৫ ভাগ, কিন্তু এর পরে নাটকীয়ভাবে অসন্তোষের হার গিয়ে দাঁড়ায় ৫০%। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে এবং নেদারল্যান্ডসে গণতন্ত্রের সন্তুষ্টির হার আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। গবেষণায় বলা হয়, গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা হ্রাস পাওয়ার কারণ হলো গণতান্ত্রিক সংস্থাগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে শুরু করে বিশ্ব উষ্ণায়নের হুমকির মতো সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার করতে হলে এই বিষয়গুলোর অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।