ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনা ভাইরাসে মৃত ১৭০

ছড়িয়ে পড়েছে পুরো চীনে

প্রকাশিত: ০৯:১২, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

ছড়িয়ে পড়েছে পুরো চীনে

করোনা ভাইরাস চীনের মূল ভূখণ্ডের প্রত্যেকটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ তিব্বত অঞ্চলে একজন আক্রান্তের তথ্য নিশ্চিত করেছে সরকার। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭০-এ। এপি ও বিবিসি। চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী বুধবার পর্যন্ত দেশজুড়ে ৭ হাজার ৭১১ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। চীন ছাড়াও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত আরও ১৬ দেশে। ভাইরাসটি কোন বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে কিনা, এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসাস বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে এর আগে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা না করলেও গত কিছুদিনে ভাইরাসটি যে হারে ছড়াচ্ছে, বিশেষ করে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে, তাতে এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বিগ্ন। এক্ষেত্রে জার্মানি, ভিয়েতনাম এবং জাপানের প্রতি ইঙ্গিত করে এসব কথা বলেন তিনি। ‘যদিও চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যাটি তুলনামূলকভাবে বেশ কম, কিন্তু সেটি বেড়ে গিয়ে শীঘ্রই অনেক বড় মহামারির ক্ষমতা রাখে,’ বলেন মহাপরিচালক। করোনা ভাইরাস মূলত আক্রমণ করে মানুষের শ্বাসযন্ত্রকে। সর্দিকাশি দিয়ে শুরু হয়ে এরপর জ্বরের মতো লক্ষণ থাকলেও সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে শ্বাসকষ্টসহ শ্বাসযন্ত্রের মারাত্মক প্রদাহে রূপ নেয়। এখন পর্যন্ত এর কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বা প্রতিষেধক ওষুধ বের করা সম্ভব হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে লক্ষণগুলো হাল্কাভাবে ধরা দেয় এবং কিছু সময় ভোগার পর রোগী সুস্থও হয়ে যায়। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণ বেড়ে গিয়ে গুরুতরভাবে শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করে, যা থেকে মৃত্যুও হতে পারে। সার্স এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার সমগোত্রীয় করোনা ভাইরাসকে মূলত বয়স্ক মানুষ এবং আগে থেকে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। চীনে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে একটি স্টোর বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা এ্যাপল। একই সঙ্গে চীন ভ্রমণের ক্ষেত্রেও সতর্ক করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চীনে করোনা ভাইরাসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২ জনে। আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার। এ পর্যন্ত ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে ১৬ দেশে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী চিহ্নিত হয়েছে থাইল্যান্ডে। এরপরই দ্বিতীয় সারিতে আছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ান। এমন পরিস্থিতিতে এ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জানিয়েছেন, চীনে তাদের ভোক্তার সংখ্যা কমে গেছে। লোকজন এখন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। এছাড়া কর্মীদের এই ভাইরাসে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকায় তারা স্টোর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য জায়গায় ভোক্তা কম থাকায় স্টোর বন্ধ করা হচ্ছে। এ্যাপলের কর্মীরাও একই সমস্যায় পড়েছেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। উহান এবং চীনের অন্যান্য শহরে যেখানে নিজেদের কর্মীরা রয়েছে তাদের মধ্যে কেয়ার কিট সরবরাহ করছে এ্যাপল। এর আগে করোনা ভাইরাসের কারণে চীনে জনপ্রিয় কফি শপ ‘স্টারবাক’ তাদের দুই হাজার আউটলেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কফি শপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিজেদের কর্মীদের সুরক্ষা ও সরকারের দিক নির্দেশনার প্রতি সম্মান রেখে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যুক্তরাজ্য সরকার ইতোমধ্যে উহানসহ পুরো হুবেই প্রদেশ থেকে ব্রিটিশ নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করছে। প্রদেশটিতে ৩শ’র বেশি ব্রিটিশদের বসবাস। যুক্তরাজ্য ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো নিজেদের নাগরিক ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে হংকং। করোনা ভাইরাসকে ‘শয়তান’ আখ্যা দিয়ে এ ভাইরাস মোকাবেলায় বিজয়ী হওয়ার অঙ্গীকার করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। প্রাণঘাতী ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চীনের সক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মঙ্গলবার শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক আধানম গেব্রেইয়েসাস। তারপরই তিনি এ মন্তব্য করেন। তবে তিনি এটাও বলেন, ভাইরাসটি থেকে বৈশ্বিক আক্রান্তের ঝুঁকি অনেক বেশি।
×