ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনারোধে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

দুর্ঘটনারোধে বিশ্বব্যাংক

সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের নিত্যনৈমিত্তিক দুঃসহ বেদনার চিত্র। এমন দিন থাকে না যেদিন সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষতি না হয়। এটা শুধু বাংলাদেশ কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার বিপন্ন অবস্থা নয়, সারা বিশ্বও এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সম্পদ আর প্রাণসংহারের মতো অনাকাক্সিক্ষত ব্যাপারটিকে মোকাবেলা করছে। সঙ্গত কারণেই দেশের এই অভ্যন্তরীণ বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ না রেখে বিশ্ব পরিসরেও এর সমাধানের প্রচেষ্টা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কাকে আমলে নিয়ে এর প্রতিকারে বিশ্বসংস্থার উদ্যোগ ও লক্ষণীয়। বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের যৌথ কর্মপরিকল্পনায় এই আতঙ্কিত বিষয়টিকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে এক জনবান্ধব সভার আয়োজন করা হয়। রাজধানীতে আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের কার্যালয়ে এক সমন্বিত আয়োজনে সড়কের নিরাপত্তাকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিবেচনার চাইতেও জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণকেও সামনে আনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রতিবছর জিডিপির ৩ থেকে ৫ শতাংশ ক্ষতি হয় সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। তথ্যটি উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ স্কেফার। যৌথ এই অনুষ্ঠানে সড়ক নিরাপত্তায় সৃজনশীল উদ্ভাবনের জন্য পাঁচটি টিমকে পুরস্কার প্রদান করে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ। বিশিষ্টজনেরা অভিমত দেন, বাংলাদেশকে অতি আবশ্যিক বিবেচনায় প্রতিদিনের সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে তীক্ষè নজরদারি শুরু করা জরুরী। আর এখান থেকেই শুরু হবে দক্ষিণ এশিয়ার সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর নতুন উদাহরণ। যা দুর্ঘটনা কবলিত অনেক দেশকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিতও করবে। সেক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন আইন থেকে শুরু করে ব্যক্তিক নিরাপত্তা ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার, সঙ্কেত মোতাবেক জেব্রাক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার, মোটরযানের নির্ধারিত গতি অনুসরণ করা অর্থাৎ যথাযথভাবে সড়ক ও ট্রাফিক আইন মেনে চলা। প্রতি বছর সারা বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে যাওয়া মানুষের জানমালের ওপর এক অশনিসঙ্কেত। জীবনভর পঙ্গুত্ব বরণ করাও সড়ক দুর্ঘটনার এক দুঃখজনক পরিণত। বিশেষ করে মোটরবাইকে হেলমেট ব্যবহার করা চালক এবং পিছনে বসা যাত্রীর জন্য আইনগত বিধি। সর্বক্ষেত্রে সেটা পালন করা হয় কিনা, তাও প্রশ্নবিদ্ধ। আর তীব্র যানজটের ফাঁকফোকড়ে রাস্তা পারাপার এক অলিখিত বিধি যা কোনভাবেই থামানো যায় না। বেপরোয়া চালকের নিয়ন্ত্রণহীন গতি সড়ক পরিবহনের নিয়মিত চিত্র যা দুর্ঘটনাকে নানা মাত্রিকে সহিংস ও আন্দোলনমুখর করে তোলে। বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ সম্মিলিতভাবে জানায়, নিয়মবিধি অনুসরণ করলে জাতীয় অর্থনীতিতে ক্ষতিকারক এমন দুর্ঘটনা কমে আসতে সময় নেবে না। প্রয়োজনীয় নির্ধারকগুলোকে সামনে এনে এর প্রতিকারের ব্যবস্থায় প্রত্যেকে যদি সচেতন আর দায়িত্বশীল হয় তাহলে সড়কে সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে না। এ ছাড়া অরক্ষিত রেলক্রসিং থেকে আরম্ভ করে সড়ক চিহ্ন, সঙ্কেত প্রদর্শন নানা ত্রুটি-বিচ্যুতিতে ভরপুর। এসব ব্যাপারেও নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। সংস্কার কিংবা আমূল পরিবর্তন করে এমন অশুভ সঙ্কেতকে সমূলে উপড়ে ফেলতে যা যা করণীয় সবটাই করা বৃহত্তর জনস্বার্থেই জরুরী। সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে অর্থায়নও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই লক্ষ্যে ১৮১ কোটি ২ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও তার সুফল এখনও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অনুপস্থিত। দেশের ভাবী ও উদীয়মান প্রজন্মকে এ ব্যাপারে আরও সচেতন দায়বদ্ধতার পরিচয় দিতে হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের বিষয়টি দৃশ্যমান হলে দেশে দারিদ্র্য বিমোচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়া শুধু সময়ের ব্যাপার।
×