ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ॥ একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ॥ একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ- রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক দল। যে দল দেশের গণমানুষের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। যাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এই দলের মূল নীতি। এই দলের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালিত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৭ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৮-১৯৬৯ গণআন্দোলন, ১৯৭০Ñএর সাধারণ নির্বাচন, অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বিপ্লবী সরকার গঠন, দীর্ঘ ৯ মাস প্রবাসী বিপ্লবী সরকার পরিচালনা, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ যৌথ বাহিনীর কাছে ৯৩ হাজার পাকিস্তানী যুদ্ধ বন্দীর আত্মসমর্পণসহ সকল আন্দোলনে ছিল বাংলদেশ আওয়ামী লীগের সক্রিয় অংশগ্রহণ, যা ইতিহাসের পাতায় চিরদিন লেখা থাকবে। স্বাধীনতার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কর্তৃক বাংলাদেশের জন্য স্বীকৃতি আদায় ইত্যাদি ঐতিহাসিক বিষয়গুলো আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। ১৯৫২ সাল থেকে বাংলাদেশের মানুষকে সকল রাজপথের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে। পক্ষান্তরে বিএনপি দেশের স্বাধীনতা বিরোধী, বিভিন্ন দল ত্যাগী জনবিচ্ছিন্ন নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গঠিত একটি মিশ্র রাজনৈতিক দল, যার কোন সঠিক আদর্শ ও লক্ষ্য নেই। এই দল স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা পরিচালনা করেছিল। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন (৭০ বছর পূর্বে) ঢাকার টিকাটুলীতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যে দলটি আত্মপ্রকাশ করেছিল, সেই দলটিই আজকের আওয়ামী লীগ। দল আত্মপ্রকাশের ছয় বছরের মাথায় দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। উদ্দেশ দলে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয় ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ তারিখে। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়। অন্যদিকে তখন বিএনপি নামক দলের কোন অস্থিত্ব ছিল না। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ গঠিত হয় ১৯৭২ সালে। ছাত্রলীগ গঠিত হয় ১৯৫৪ সালে। আওয়ামী লীগের দেখাদেখি বিএনপি কর্তৃক অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল, জাতীয়তাবাদী যুব দল, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৪ সালে, যাদের আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা ছাড়া কোন কর্মসূচী নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মূল নীতি হলো শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। সেখানে ছাত্রদলের নিজস্ব নীতিমালা কিÑ দেশবাসী জানে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আন্তর্জাতিক বহু সংস্থা এবং বহু দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। বিএনপির আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সে রকম কোন বন্ধু নেই। বিএনপি বন্ধুহীন। দেশের নৃতাত্ত্বিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ সদস্য আওয়ামী লীগের অন্ধ সমর্থক। অন্যদিকে বিএনপিকে অধিকাংশ নৃতাত্ত্বিক ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সমর্থন করে না। বিএনপি সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ভাল থাকে। বিএনপি প্রতিবেশী দেশকে ধ্বংস করার জন্য ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাইপথে বাংলাদেশে আনে। আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে এবং তাদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে। বাংলাদেশের সীমান্তে বিদেশী সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করে আওয়ামী লীগ সরকার, যা মদদ দিত বিএনপি সরকার। এর সঙ্গে জড়িতরা এখন কারাগারে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের উন্নয়নের সূচক বৃদ্ধি, নারী শিক্ষায় প্রতিবেশী দেশের চেয়েও উন্নত হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংক-জাতিসংঘ সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত হয়। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৯ শতাংশ নারীকে নেতৃত্বে আনা হয়েছে। বিএনপিতে নারী নেতৃত্ব অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বিএনপি সংখ্যালঘু নির্যাতন করে। আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সরকারের সকল পর্যায়ে চাকরিতে নিয়োগ দেয়। আওয়ামী লীগে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই। বিএনপিতে অনেক যুদ্ধাপরাধী আছে। অনেকের বিচার হয়েছে এবং অনেকের বিচার চলমান। আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। বিএনপির নেত্রী দুর্নীতির জন্য কারাবন্দী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাভাষা আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, একটি বাড়ি একটি খামার, মোবাইল ফোন, টিভি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। দেশের সকল নাগরিককে পেনশন দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিএনপি দেশের জনসাধারণের জন্য স্থায়ী কোন ভাতা বা পেনশন, বিধবা ভাতা ইত্যাদি দেয়ার কোন চিন্তাই করেনি। বিএনপি মুষ্টিমেয় কয়েকজনের কাছে মোবাইল ফোনকে সীমাবদ্ধ রেখেছিল। আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করে। আওয়ামী লীগ সরকার সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। আওয়ামী লীগ নিজের দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। দুর্নীতিতে জড়িতদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। বিএনপির সৃষ্টি বনের রাজা ওসমান গনি বাংলাদেশের সকল বন উজাড় করে ফেলেছে। তার কাছ থেকে বস্তা বস্তা টাকা উদ্বার করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার নতুন বনাঞ্চল সৃষ্টির জন্য নতুন প্রকল্প নিচ্ছে। ৮টি জাতীয় উদ্যানকে পূর্ণ জাতীয় উদ্যান হিসেবে গড়ে তুলে সহব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করেছে। দেশের সকল জেলাতে অসংখ্য ব্রিজ, রাস্তাসহ স্থাপনা তৈরি করেছে, যা বিএনপি চিন্তাও করতে পারে না। বিএনপির অনেক নেতা হতাশাগ্রস্ত হয়ে দল ছেড়েছেন, ছাড়ছেন। আওয়ামী লীগে নতুন নতুন মানুষ যোগদান করছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ইতিহাসসমৃদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল, যার সমতুল্য কোন দল বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সংবিধান রচনা করেছে। আর বিএনপি সরকার ইনডেমনিটি আইন করে সংবিধানে কালিমা লেপন করে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায় আওয়ামী লীগ এবং বাস্তবায়নেও আন্তরিক। বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে দেশের মানুষকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। আওয়ামী লীগ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের (হিজড়া) রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে। ভোটার তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার অনুমোদন করেছে। পক্ষান্তরে বিএনপি আমলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে ঘৃণা ছাড়া কিছু দেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার অনুমোদন দিয়েছিলেন। যার জন্য জাতীয় নির্বাচনে ৯৯% চা শ্রমিক আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার মিয়ানমারে নির্যাতিত ১১ লাখ আশ্রয় প্রার্থী রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী, উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছিল। জাতীয় স্লোগান জয় বাংলা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় বেতার কেন্দ্র, জাতীয় ফুল, জাতীয় ফলÑ সব কিছু আওয়ামী লীগের সৃষ্টি। জাতীয় কোন সৃষ্টি বিএনপির নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিবেশী দেশসহ বিভিন্ন দেশের যে সকল ব্যক্তি সহায়তা করেছেন তাদের জাতীয় পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতা পদক, ২১ পদকসহ অনেক পদক সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেয়ার প্রচলন শুরু করে, যা চলমান থাকবে। বর্তমান সরকারের উদারতার কারণে দেশে বিএনপি-জামায়াত-স্বাধীনতাবিরোধীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। কিছু জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলও আছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আরও এগিয়ে যাবে বলে দেশের সুশীল সমাজ মনে করে। উল্লিখিত তুলনামূলক আলোচনা পড়লে যে কেউ নিজে থেকে মূল্যায়ন করতে পারবেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমকক্ষ কোন দল এখনও বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি। নিকট ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তবে রাজনীতি এবং সামাজিক ভারসাম্য ও উন্নয়নে স্বচ্ছতা বজায় রাখার স্বার্থে সংসদে স্বাধীনতার পক্ষের একটি শক্তিশালী প্রগতিশীল রাজনৈতিক বিরোধী দলের উপস্থিতি খুব প্রয়োজন; যার অপেক্ষায় আছে দেশের রাজনৈতিক সচেতন জনগণ। লেখক : নিউইয়র্ক প্রবাসী
×