ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিফিংয়ে কাদের

পাহারার নামে বিএনপির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভোটে বিঘ্ন ঘটাতে পারে

প্রকাশিত: ১১:০২, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

পাহারার নামে বিএনপির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভোটে বিঘ্ন ঘটাতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আজ শেষ হচ্ছে আনুষ্ঠানিক প্রচার। ইতোমধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের পাল্টাপাল্টি মন্তব্য উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতিতে। গত কয়েকদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল নির্বাচনে গ-গোল বাধাতে বিএনপি সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করছে। বুধবারও ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভোট পাহারার নামে পরিবেশে বিঘœ ঘটাতে পারে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাবেক গণমাধ্যমকর্মী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন কেন্দ্র পাহারার নামে ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা’ ভোটের পরিবেশে বিঘœ ঘটাতে পারে। নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভাল আছে দাবি করে তিনি বলেন, একটা বিষয় খুব উদ্বেগজনক, সেটা হচ্ছে নির্বাচনকে সমনে রেখে বহিরাগতদের জড়ো করা এবং অস্ত্রধারীরাও এর মধ্যে আছে। নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে দেখার আহ্বান জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এ নেতা বলেন, অভিযোগ আছে, খবর আছে- নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে পাহারার নামে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পরিবেশ বিঘিœত করতে পারে। ভোটারদেরও ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা দিতে পারে। সেই অবস্থায় নির্বাচন কমিশনকে বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখতে হবে বলেও মত দেন তিনি। ব্রিফিংয়ে চীনের করোনা ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান, চলমান রাজনীতি, বিএনপির কর্মকা-, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সদ্য নির্বাচিত এই সাধারণ সম্পাদক। তবে ব্রিফিংয়ের বেশিরভাগ আলোচনাই ছিল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে। বহিরাগতদের উপস্থিতি কোন দলের বেশি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের কাছে ইনফরমেশন হচ্ছে বিএনপি সারাদেশ থেকে বহিরাগতদের এনে ঢাকায় জড়ো করছে। এদের মধ্যে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, দাগি সন্ত্রাসীরাও রয়েছে। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। আওয়ামী লীগ নেতারা যেখানে বিএনপিকে ভঙ্গুর দল হিসেবে বর্ণনা করেন, সেখানে তারা যদি সত্যিই সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করতে পারে কি না এবং সুসংগঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেক্ষেত্রে কী করছেÑ সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল সেতুমন্ত্রী কাদেরকে। উত্তরে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করে... এখন তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত। নির্বাচন কমিশন যেভাবে আদেশ দেবে, নিয়ন্ত্রণ করবে, তারা সেভাবে চলবে। তবে তিনি বিএনপিকে ভঙ্গুর দল বলতে রাজি নন। বলেন, এভাবে বলা ঠিক নয়। বিএনপি আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তির একটা প্ল্যাটফর্ম। কাজেই এই শক্তিকে একেবারে দুর্বল বা ভঙ্গুর বলা আমি মনে করি সমীচীন নয়। তাদেরও সমর্থন আছে। দলের অবস্থা খারাপ থাকলে সন্ত্রাসী থাকবে না এমন তো নয়। তাদের সমর্থক সারাদেশে আছে, এটা হলো বাস্তবতা। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কাছে আওয়ামী লীগ কী অনুরোধ করবেÑ এ প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফ্রি এ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন অশুভ কোন তৎপরতা বন্ধ করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের নজরদারি থাকতে হবে। বহিরাগতদের নজরদারিতে রাখা। অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত অপরাধীদের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কাজে লাগতে হবে, যাতে এরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে বাধা না হয়। বিএনপির অভিযোগ ছিল, গত জাতীয় নির্বচানে তাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এবারও তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আচারণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ করছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, বিএনপি তো জাতীয় নির্বাচনে এজেন্ট দিতেই পারেনি, পরে বলেছে বের করে দেয়া হয়েছে। তাদের এজেন্ট ছিল নাÑ সেটার দায়দায়িত্ব কি আমরা নেব? বিএনপিকে জিজ্ঞাসা করুন, কেন তারা এজেন্ট দিতে পারেনি, তাদের কর্মী সঙ্কট কেন? এজেন্ট আসার পথে আমরা কোন বাধা দেব না দলীয়ভাবে। নির্বাচনে ‘ফাঁকফোকরের’ কোন অবকাশ থাকবে না মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে ৬৭ জন বিদেশী ও এক হাজারের বেশি পর্যবেক্ষক আছে। পর্যবেক্ষকরা তো বিষয়গুলো মনিটর করবে। তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণটা ভালভাবে হোক, অন্ধকারে ঢিল ছুড়বে, এটা হয়নি ওটা হয়নি, বাধা দিয়েছে, পর্যবেক্ষকরাই দেখুন মূল্যায়ন করুন নির্বাচনটা। তাহলে বাস্তবতাটা তো দেখতে পারবে। যত কেন্দ্র আছে পর্যবেক্ষণের সুযোগ তত বেশি। সরকার কিছু লোককে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচনের পর ‘ভাল’ প্রতিবেদন দেয়ার জন্যÑ বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়েও প্রশ্ন করা হয় ওবায়দুল কাদেরকে। জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের কোন পর্যবেক্ষক সরকার নিয়োগ দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমরা কোন পর্যবেক্ষকের নাম দিয়েছিÑ এরকম অভিযোগ দিয়ে থাকলে তথ্য-প্রমাণসহ বলুক। ঢাকার দুই সিটির মেয়র প্রার্থীরা ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তা বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নে সরকারের সেতুমন্ত্রী বলেন, ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি আমাদের দেশের নির্বাচনের ইশতেহারে থাকে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না তেমনও না। এর তো টার্গেট থাকে না, নির্দিষ্ট কোন টাইম ফ্রেম তো থাকে না। ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি কবে নাগাদ বাস্তবায়ন করবেন তা জানানো উচিত। গত জাতীয় নির্বাচন থেকে এই সিটি নির্বাচন ভালো হবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা একটা উৎসবমুখর ও ভাল নির্বাচন আশা করি। উৎসবমুখর বলতে মানুষ ভোট দিতে চায়, তাদের ভোট দেয়ার আগ্রহ আছে। কাজেই জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারে এটাই আমাদের চাওয়া। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তিনি বলেন, একই সঙ্গে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর এখানে একটা ভূমিকা থাকা দরকার। আমরা সরকারী দল হিসেবে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। চীনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে কোন অসুবিধার সৃষ্টি হবে না জানিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চীন থেকে যারা আসছেন তারা সরকারের স্বাস্থ্য টিমের নজরদারিতে রয়েছেন। সরকার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, এর মধ্যে যারা চীন থেকে এসেছেন, নিয়মানুযায়ী তাদের ১৪ দিন কর্মকা-ের বাইরে রাখা হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে এক হাজারের মতো চীনা শ্রমিক কাজ করেন। এদের মধ্যে ১৫০ জন শীফটিং ছুটিতে থাকেন। এতে আমাদের কর্মকা- পরিচালনায় বা পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে কোন অসুবিধার সৃষ্টি হবে না। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের অনেক অভিজ্ঞ লোক কাজ করছেন কিন্তু সেদেশে করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকই আবার আসছেন না। ফলে এই উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি থেকে চীন থেকে ৩৫ জন এসেছেন। নিয়মানুযায়ী তাদের ১৪ দিন কর্মকা- থেকে বাইরে রাখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এতে উন্নয়ন কাজ কোনভাবেই বিঘিœত হচ্ছে না। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে এ পর্যন্ত ১৩২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কর্মরত চীনা কর্মীদের মধ্যে যারা ছুটি কাটাতে দেশে গেছেন, আপাতত তাদের বাংলাদেশে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এছাড়া যারা প্রকল্প এলাকায় রয়েছেন তাদের কেউ যেন চীনে যেতে না পারেন সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
×