ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাধন সরকার

ভিন্ন ভাষার দাপট

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

ভিন্ন ভাষার দাপট

মাতৃভাষার প্রতি গভীর আবেগ, ভালবাসা, শ্রদ্ধা না থাকলে সে জাতির টেকসই ও সুন্দর ভবিষ্যত নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন! বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা। তবে কেন ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পরও ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য সংগ্রাম করতে হবে? সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু করার যে জাতীয় অঙ্গীকারের কথা আমরা প্রায়ই বলে থাকি তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে? কেন জানি মনে হচ্ছে, মাতৃভাষার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজী। চারদিকে ইংরেজীতে লেখা পোস্টার-ব্যানারের জয়জয়কার। ক্রিকেটের বিভিন্ন দল বা ক্লাবের নাম রাখা হচ্ছে ইংরেজীতে। সর্বোপরি শিক্ষার মান নিয়েও এখন কথা হচ্ছে! স্কুল-কলেজগুলোতে ভাল করে না শেখানো হচ্ছে বাংলা, না শেখানো হচ্ছে ইংরেজী। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এখন ইংরেজী ভাষাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ধার করা ভাষায় আর যাই হোক পরিপূর্ণ মানুষ হওয়া কঠিন! নদীর ওপারেতে বেশি সুখ খোঁজার মতো মাতৃভাষা বাংলা সঠিকভাবে আয়ত্ত না করে ইংরেজীর প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ কোন ফল বয়ে আনতে পারে না। এখন না বুঝে বাংলা ভাষার সঙ্গে আমরা ইংরেজী ভাষার তুলনা করছি। ছোটবেলা থেকে সন্তানকে ইংরেজী শেখানোর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছি। সর্বোপরি বাংলা ভাষার প্রতি রাষ্ট্রিক, সামাজিক ও ব্যক্তিক অবহেলা বাড়ছে! ‘ভাল বাংলা বলতে পারি না’- এটা বলতে পারাটাও যেন এক ধরনের যোগ্যতা হয়ে গেছে! সর্বোচ্চ আদালতে এখনও রায় লেখা হয় ঔপনিবেশিক ভাষা ইংরেজীতে। ইংরেজীর আধিপত্য দিন দিন বাড়ছে। যে ভাষার জন্য অকাতরে রক্ত বিলিয়ে দিতে হয়েছে, সেই মাতৃভাষার প্রতি কি আমাদের দায়বদ্ধতা নেই? স্বাধীনতার পর ভাষার মর্যাদা রক্ষায় যেসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল, সেগুলো পরবর্তীকালে আর কেন এগিয়ে নেয়া হয়নি, সে ব্যাপারে পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারী-বেসরকারী অফিস-আদালতে ইংরেজীর পরিবর্তে বাংলার ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। শিশু বয়স থেকে শিক্ষার্থীর বাংলা ভাষার শোনা-বলা-পড়া-লেখা দক্ষতার গুণগত মান বাড়ানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। যেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হবে বাংলা। মানুষের মতো মানুষ হতে চাইলে সবার আগে চাই মাতৃভাষায় পরিপূর্ণ জ্ঞান। মনের বিকাশ, নৈতিক চেতনার বিকাশ মাতৃভাষার মাধ্যমেই সম্ভব। সূত্রাপুর, ঢাকা থেকে
×