ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পংকজ মণ্ডল

ভাষার সমৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

ভাষার সমৃদ্ধি

বাংলা ভাষার ব্যবহার ছিল তৎকালীন অখ- ভারতবর্ষের মধ্যে পূর্ববাংলা ও পশ্চিম বাংলায় বসবাসকারী লোকদের মুখে। অন্যত্র এ ভাষার ব্যবহার হতো বিচ্ছিন্নভাবে। কালক্রমে এ ভাষাকে বিভিন্নভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে। বাংলায় যেসকল মনীষী জন্মেছেন তাঁদেরও গতিপথ বদলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু খরস্রোতা নদীর মতো বাংলা ভাষা সব বাধাকে উপেক্ষা করে গন্ত্যব্যে পৌঁছেছে। একটা সময় অফিস-আদালত ও সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে সাধু ভাষার ব্যবহার ছিল। লেখ্য ও কথ্য ভাষার ব্যবহার ছিল ভিন্নতর। তখনও অধুনিক ভাষার প্রয়োগ শুরু হয়নি। অল্প শিক্ষিত লোকদের জন্য পাঠ্যপুস্তক পাঠ করা সহজতর ছিল না। এমনকি একটি চিঠি পড়াতেও অন্যের দ্বারস্থ হতে হতো। এক শ্রেণীর লোকেরাই লেখাপড়া শেখার সুযোগ পেতেন। অবিভক্ত ভারতের দুই বাংলার চিত্র একই রকম ছিল। পরবর্তীকালে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল পাকিস্তানীদের নিজস্ব ভাষা এখানকার বাঙালীদের চাপিয়ে দেয়ার। এরই সূত্র ধরে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন হয়েছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেই পথ ধরে আসামের এই বাঙালী অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার শিলচরে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছিল নয় বছর পর ১৯৬১ সালের ১৯ মে। আসামের রাজ্য ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দানের দাবিতে। সেই ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন ১১ জন। সেদিনের সেই ভাষা আন্দোলনের ফসল তুলে নিয়েছে বরাক উপত্যকার বাঙালীরা। অসমের দ্বিতীয় রাজ্যভাষা হয়েছে বাংলা। আর বরাক উপত্যকার সরকারী ভাষা হয়েছে বাংলা। এটা বাঙালীদের জন্য বড় বিজয় বয়ে আনে। এ গতি পরে আর কেউ আটকে রাখতে পারেনি। স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে এখন বাংলা ভাষার বিরাট দখল রয়েছে সর্বত্র। এ ভাষাটি আন্তর্জাতিক পরিম-লে ব্যাপক পরিচিত ও সমাদৃত। কয়েক দশকের আন্দোলন-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ভাষার অক্ষুণœতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে বাঙালীরা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, পরবর্তীকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ প্রদান। এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকা-ের জন্য আন্তর্জাতিক মহলে বাংলা ভাষা বিশেষ স্থান লাভ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে ইউনেস্কো এটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ অর্জনটা বাঙালীদের জন্য খুবই গৌরবের এবং পরম প্রাপ্তি। দীর্ঘকাল উপনিবেশিক বলয়ের মধ্যে আটকে ছিল বাঙালীর কণ্ঠস্বর। ব্রিটিশ, মুঘল, পাঠান ও পাকিস্তানী শাসকরা এদেশের মানুষের সার্বভৌমত্বের ওপর যেমন কর্তৃত্ব ফলাতে চেয়েছে তেমনি বাকস্বাধীনতার উপরও তাদের প্রভাব খাটিয়েছে। বিশেষ করে ৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পূর্বপাকিস্তানে বাঙালীদের শিল্প, সংস্কৃতি ও ভাষাকে বদলে দিতে চেয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানীরা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল চিরদিনের জন্য বাংলা ভাষাকে এদেশ থেকে মুছে দিতে। উর্দুকে তাদের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাঙালীর ওপর জোর করে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বায়ন্নর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালী জীবন দিয়ে হলেও পিছপা হয়নি। ভাষা আন্দোলনে সকলে সরব হয়ে উঠেছিল। বাংলার দামাল ছেলেরা গর্জে উঠেছিল মায়ের মুখের ভাষাকে রক্ষার জন্য। এ লড়াইটা ছিল অস্তিত্বের লড়াই। ওখানে হেরে গেলে হয়ত পরে এ দেশের বাঙালীদের নিজস্ব ভাষা কোনঠাসা থাকতো। হয়তো পরভাষায় কথা বলতে হতো আমাদের। বর্তমানে বাংলা ভাষায় বহু ভাষার সংমিশ্রণ ঘটেছে। কিন্তু এতে এ ভাষায় একটুও প্রভাব পড়েনি। বরং দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যও বিরাট পটভূমি সৃষ্টি করেছে। এরই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবছর অমর একুশে গ্রন্থমেলার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করে তুলছে। চিতলমারী, বাগেরহাট থেকে
×