ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব

উন্নত বিশ্বে যখন রোবট প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার তখন বাংলাদেশেরও পিছিয়ে থাকা কিংবা পিছিয়ে পড়ার কোন অবকাশ নেই। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স মহাবিশ্বের সমস্যা মোকাবেলায় গঠন করে ফেলেছে মহাকাশ বাহিনী। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রায় প্রতিদিন সংযুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা ও প্রযুক্তি। অবশ্য বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই এক্ষেত্রে। সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত আইটি মেলায় ফাইভ-জি প্রযুক্তিসহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট প্রদর্শিত হয়েছে। সারাদেশে এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট সেবা। তবু এ কথা স্বীকার করতে হবে যে, এসব ক্ষেত্রে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে অদ্যাবধি। আমাদের সার্বিক শিক্ষার মান বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে মেধা, জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা প্রায় হয় না বললেই চলে। কিছু সংখ্যক যোগ্য ও মেধাবী সে সব স্থান থেকে উঠে এলেও অধিকাংশই উচ্চ শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে চলে যাচ্ছেন দেশের বাইরে এবং তারা বেশ ভালও করছেন সে সব দেশে। সেই প্রেক্ষাপটে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ তথা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলাসহ এর সক্রিয় অংশীদার হতে হলে আমাদের তরুণদের যোগ্য করে গঠনের বিকল্প নেই। তা না করতে পারলে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণীত রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ অর্জনও কঠিন হবে। এর জন্য শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মেধাবীদের সৎ ও যোগ্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক। এই কাজটি শুরু করতে হবে একেবারে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকেই। এর জন্য শিখতে হবে, শেখাতে হবে, হাতে-কলমে কাজ করে দেখাতে হবে, সৃজনশীল চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইএসটি)-এর ১৮তম গ্র্যাজুয়েশন সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য, এর জন্য যথাস্থানে যথাযোগ্য বিনিয়োগ করতে হবে। আর এই ক্ষেত্রটি হচ্ছে শিক্ষা। বর্তমান সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক কিছু পারে বটে। তবে সবার ওপরে মানুষ। আর তাই শিক্ষার্থীদের ধীশক্তি, মেধা, দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। সরকার জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নীতিমালা ২০১৯-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, দেশেই চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তথা জনসম্পদ গড়ে তোলা, যেখানে অদ্যাবধি আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। উদাহরণত বলা যায়, বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ জাপানে অন্তত ১৬টি খাতে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে দেশটি বাংলাদেশ থেকে অন্তত পাঁচ লাখ দক্ষ জনবল নিতে চুক্তিও করেছে। তবে শর্ত একটিই, তাদের অবশ্যই জাপানী ভাষা জানতে হবে। শুধু এই একটি ঘাটতির জন্য আপাতত বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জাপানে এত জনশক্তি পাঠানো যাচ্ছে না। সে অবস্থায় দেশে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এই নীতিমালার অনুমোদন। এই তহবিল যদি যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায় তবে বিপুল সংখ্যক লোক দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হবে। যা তাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাহিদা অনুযায়ী প্রেরণ করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরিতে চাই দক্ষ মানবসম্পদ। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বর্তমানে দেশে দক্ষ মানবসম্পদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। গত কয়েক বছরে শিক্ষার হার জ্যামিতিক গতিতে বাড়লেও সেই অনুপাতে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি হয়নি। ১৭ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি দেশে যে পরিমাণ প্রকৌশলী, ডাক্তার, নার্স, প্রযুক্তিবিদ, আইটি বিশেষজ্ঞ এমনকি বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক প্রয়োজন, সে পরিমাণে বিশেষজ্ঞ নিদেনপক্ষে দক্ষ মানবসম্পদ নেই। এর জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগের বিকল্প নেই। সেটি করা সম্ভব হলে এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে বাংলাদেশী দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমজীবীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। দেশেই সাধিত হবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব।
×