ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপ্লব রেজা

স্যান্ডার্স-এলিজাবেথ বিতর্ক তুঙ্গে

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

স্যান্ডার্স-এলিজাবেথ বিতর্ক তুঙ্গে

চলতি বছর ৩ নবেম্বর মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এটি হবে সে দেশের ৫৯তম চতুুর্বার্ষিক প্রেসিডেন্ট নিবার্চন। আর আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম জাতীয় ককাস অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। তবে যতই সময় ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচন সংক্রান্ত বিতর্ক যেন ততই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের লড়াইও ততটাই জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে, ডেমোক্র্যটি মনোনয়ন প্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্স ও এলিজাবেথ ওয়ারেনের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখন প্রিয়-শত্রুতায় রূপ নিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় দুই বন্ধু কখনও মুখোমুখি হলেও কেউ কারও সমালোচনা করবেন না বলে আগেই সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও সেটাই এখন শুরু হয়ে গেছে। লাইভ অনুষ্ঠানে একে অপরকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন তারা। অনুষ্ঠানের বেশির ভাগ সময় তারা বাকযুদ্ধে লিপ্ত থেকেছেন। আর এ সুযোগে রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে নানা বিষয়ে সমালোচনার জায়গা পেয়ে যান। এদিকে এতকিছুর মধ্যেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নারী প্রার্থীরা কী আদৌও হোয়াইট হাউসের মসনদে বসতে পারবেন? এ প্রশ্ন এখন অনেকের মনে। যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের বিতর্কের পর সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বার্নি স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন স্যান্ডার্স তাকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলেছেন। স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে ওয়ারেন বলেন, ‘আপনি আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। আমার ধারণা টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের সামনে আপনি আমাকে ‘মিথ্যাবাদী’ প্রমাণ করতে চেয়েছেন। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের বিতর্ক অনুষ্ঠানের পর এ উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এদিকে এ ঘটনার পর বিতর্ক অনুষ্ঠান শেষে স্যান্ডার্সের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হয়নি ওয়ারেন। বরং অকথ্য ভাষায় স্যান্ডার্সকে আক্রমণ করেছেন তিনি। এরপর স্যান্ডার্স স্টেজ থেকে নেমে কক্ষ ত্যাগ করলে পরিস্থিতি কিছুটা নমনীয় হয়। বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজক সিএনএনের মাইক্রোফোনে তাদের সে সময়ের কথোপকথন ধরা পড়ে। পরে সিএনএন ওই বার্তাটি প্রচার করে দিলে বিষয়টি দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়। তবে টেলিভিশন অনুষ্ঠান চলাকালে স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে ওয়ারেনের আনিত সব অভিযোগ স্যান্ডার্স অস্বীকার করেছেন। ওয়ারেন অভিযোগ করেছিলেন, এক সময় নিউইয়র্কে ব্যক্তিগত আলাপকালে স্যান্ডার্স ওয়ারেনকে বলেছিলেন, কোন নারীর পক্ষে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যাওয়া সম্ভব নয়। ডেমোক্র্যাট দল থেকে মনোনয়ন প্রার্থী এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী খুবই প্রগতিশীল, তারা অন্তত এক বছর আগে প্রচার লড়াইয়ে একে অপরকে আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে গত সোমবারের বিতর্কের সময় ওয়ারেন স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালে ব্যক্তিগত এক সাক্ষাতে স্যান্ডার্স তাকে নারীদের বিষয়ে নেতিবাচক কথা বলেছিলেন। ভারমন্টের সিনেটর স্যান্ডার্স অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম জাতীয় ককাস অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে সিনেটর ওয়ারেন ওই বিতর্ক অনুষ্ঠানে বলেছেন, রাজনীতিতে যৌনবাদের বৃহত্তর বিষয়গুলোর মুখোমুখি হওয়ার সময় এসেছে এখন। বিতর্ক শেষে ম্যাসাচুয়েস্টের সিনেটর ওয়ারেন স্যান্ডার্সের দিকে এগিয়ে গেলে স্যান্ডর্স তার হাত বাড়িয়ে দিলেও করমর্দন করেননি ওয়ারেন। বরং ওয়ারেন স্যান্ডর্সকে তার কথা দ্বারা আক্রান্ত করেন। কিছু সময়ের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মঙ্গলবারের নির্বাচনী প্রচারে অনুষ্ঠানের সময় উভয় প্রতিদ্বন্দ্বী তেমন কিছু বলার সুযোগ না পেলেও তাদের ঝগড়ার রেকডিং ইতোমধ্যে সিএনএন প্রচার করে দিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ওয়ারেন স্যান্ডার্সের করমর্দন উপেক্ষা করতে গেলে স্যান্ডার্স তাকে ভদ্রচিতভাবে বলেন, ‘অন্তত এখন এই কাজটি করবেন না প্লিজ।’ ওয়ারেনকে লক্ষ্য করে স্যান্ডার্স ফের বলেন, ‘আপনি কি ওই বিষয়ে আলোচনা করতে চান?’ উত্তরে ওয়ারেন বলেন, ‘যে কোন সময়ই হতে পারে।’ এরপর স্যান্ডার্স বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে পরেও কথা বলতে পারব আমরা। ঠিক আছে, এখন করমর্দন করতে হবে না।’ তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রকাশিত অডিও রেকর্ডিংটি চলমান রাজনৈতিক লড়াইকে আরও বেগবান করবে, বিশষ করে বর্তমান সময়ে। এর আগে কোন নারীর পক্ষে প্রেসিডেন্ট র্নিবাচনে বিজয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করা সম্ভব নয় বলে সোমবার রাতে বার্নি স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুয়েটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন। তিনি জানান, চলতি বছর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্যান্ডার্স ২০১৮ সালে ওয়াশিটন ডিসিতে ব্যক্তিগত এক সাক্ষাতে তাকে বলেছিলেন ওই কথাটি বলেছিলেন। স্যান্ডার্সের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের পর ওয়ারেন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, একজন নারী অবশ্যই বিজয়ী হতে পারেন।’ এদিকে এই উভয় প্রতিদ্বন্দ্বী একটি বিষয়ে একমত যে, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তারা যদি একে অপরকে একাধিকবার মোকাবেলা করে তাহলে তাদের পরস্পর পরস্পরকে আক্রমণ করা বন্ধ করতে হবে। ওয়ারেন ও স্যান্ডার্স সোমবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমালোচনার বিষয়গুলোও নিয়েও আলোচনা করেছেন। ওয়ারেন জানান, দুটি প্রধান কারণে তিনি বিশ্বাস করেন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হতে পারেন। এর একটি হলো, তিনি অর্থনীতি নিয়ে বলিষ্ঠ যুক্তিতর্ক করতে পারেন এবং দ্বিতীয়টি হলো, তিনি নারী ভোটারদের নির্বাচনের দিকে ব্যাপকভাবে আগ্রহী করে তুলতে পারবেন। অপরদিকে, বৈঠকটি শেষ হওয়ার পর এক বিবৃতিতে ওয়ারেন বলেন, আমি ভেবেছিলাম, একজন নারী বিজয়ী হতে পারেন, কিন্তু স্যান্ডার্স বিষয়টিতে একমত পোষণ করেন না। অন্যদিকে, স্যান্ডর্স ওয়ারেনের আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিবৃতিতে ওয়ারেন জানান, তিনি ও স্যান্ডার্সেও মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলটাই বেশি। তিনি বলেন, ‘আমি আজ এই প্রতিযোগিতায় নেমেছি এটা বলতে যে, ট্রাম্প আমলে আমার দেশের কি ক্ষতি হয়েছে ও কিভাবে এই ক্ষতিপূরণ করা হবে এবং আমি এই কাজটি করা অব্যাহত রাখব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি, স্যান্ডার্সও এই একই কারণে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। আমাদের এই দুই জনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ও জোট সুদীর্ঘ সময়ের লড়াইয়ের জন্য। আমার এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, আমরা দু’জন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মোকাবেলা করতে পারব না এবং আমরা সরকার গঠন করে জনগণের পাশে থাকব না। স্যান্ডার্স ওয়ারেনের জবাবে জানান যে, তিনি এটি বলেননি যে, ওয়ারেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবেন না। স্যান্ডার্সের সিনিয়র উপদেষ্টা জেফ ওয়েভার সোমবার রাতেই সিএনএনকে বলেন, ‘ওই আলোচনার বিষয়ে কিছুটা ভুল হচ্ছে।’ সূত্র : এপি, সিএনএন, এনপিআর ও গার্ডিয়ান
×