ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আনসারের ক্রীড়াবিদরা পুরস্কৃত

প্রকাশিত: ১২:০৩, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

আনসারের ক্রীড়াবিদরা পুরস্কৃত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সবার গায়ে আনসার ও ভিডিপি’র ট্র্যাক স্যুট। কিন্তু শতাধিক ক্রীড়াবিদের মধ্যেও আলাদা করে চেনা যাচ্ছিল আরচার রোমান সানাকে। কারণ তার গায়ে ছিল আনসার বাহিনীর পোশাক। হঠাৎ সবার চেয়ে আলাদা পোশাকে কেন রোমান? হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে এই তীরন্দাজের কথা, ‘আজ আমাকে পদন্নোতি দিবেন ডিজি স্যার। তাই বাহিনীর পোশাক পরে আসতে হয়েছে।’ মঙ্গলবার খিলগাঁও আনসার ও ভিডিপি’র সদর দফতরে রোমান সানাকে ল্যান্স নায়েকের ব্যাজ পরিয়ে দেন আনসার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ। নেপালে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে আনসার ও ভিডিপি’র ১৪৪ ক্রীড়াবিদ বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে অংশ নেন। যার মধ্যে একক ও দলগত ৮টি স্বর্ণ, ১৩টি রুপা ও ৪৭টি ব্রোঞ্জপদকসহ মোট ৬৮ পদক জেতেন। পদকজয়ী ৭৮ ক্রীড়াবিদকে ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার প্রাইজমানি দেয়া হয়। একক ইভেন্টের সোনাজয়ীদের এক লাখ, রুপা জয়ীদের ৭৫ হাজার এবং ব্রোঞ্জপদক জয়ীদের ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। রোমান ছাড়াও অন্য কৃতী ও স্বর্ণজয়ী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত, কারাতেকা হোমায়রা আক্তার অন্তরা এবং আরচার সোমা বিশ্বাস। আনসারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ বলেন, ‘ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুগ্রহ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমরা প্রতি বছরই ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের স্বীকৃতি দিয়ে থাকি। এসএ গেমসেও সাফল্য অর্জন করায় আমরা সংবর্ধনা দিলাম।’ উল্লেখ্য, জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতাতেও আনসারের সাফল্য ঈর্ষণীয়। শুধু ২০১৯ সালেই সার্ভিসেস এই সংস্থাটি জাতীয় ও অন্যান্য পর্যায়ের ৩১টি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ১৭৫ স্বর্ণ, ১০২ রৌপ্য ও ৭৮ তাম্রপদক পেয়ে ২৬টিতে চ্যাম্পিয়ন, ৪টিতে রানার্সআপ এবং ১টিতে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ২০০৪ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ এবং ২০০৮ সালে ‘ক্রীড়ালেখক সমিতি কর্তৃক ‘শ্রেষ্ঠ ক্রীড়া সংগঠক পুরস্কার’ পাওয়া সংস্থা হলো আনসার। আগামী ১-১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমস’-এ অংশ নিয়ে আনসার চ্যাম্পিয়ন হবে এবং হলে তাদের ক্রীড়াবিদদের এভাবে আবারও পুরস্কৃত করার আশা করে আনসার। আনসারের মহাপরিচালক বলেন, ‘অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়Ñ আমাদের বাহিনীর ভাতাপ্রাপ্ত খেলোয়াড়রা জাতীয় প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতলেই অন্য বাহিনী ও সংস্থাগুলো সরকারী চাকরি দিয়ে তাদের নিয়ে যায়। গত তিন বছরে এভাবে আমাদের অনেক সফল খেলোয়াড়ই আনসার ছেড়ে অন্য বাহিনী বা সংস্থায় যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে গত এক বছরেই চলে গেছেন ৪৪ জন। তবে আমরা আনন্দিত আমাদেরই তৈরি করা খেলোয়াড়রা ভাল খেলার সুবাদে অন্য বাহিনী বা সংস্থায় চাকরি পেয়েছেন, তাদের কর্মসংস্থানের সুব্যবস্থা হয়েছে।’ আনসার থেকে যেন এরপর কোন খেলোয়াড় চলে না যান সে জন্য শীঘ্রই নিজেদের আইন পরিবর্তন করতে যাচ্ছে আনসার। এ প্রসঙ্গে আনসারের মহাপরিচালক বলেন, ‘এই বাহিনীর পক্ষে খেলাধুলায় ভাল ফল অর্জনকারী যাদের সরকারী চাকরি হয়নি, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স, উচ্চতা ও অন্যান্য বিষয় শিথিল করে নিয়োগের প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হবে।’ জাতীয় সংসদের হুইপ ও সাংসদ মাহবুব আরা গিনি বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বের অংশীদার হব। আমাদের কাম্য খেলাধুলা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া।’ এসএ গেমসের সেফ দ্য মিশন আসাদুজ্জামান কোহিনুর বলেন, ‘একসময় আনসারে ক্রীড়াদল গঠনের সময় আমিও ছিলাম। ফলে এই সাফল্যের কিছুটা হলেও আমি দাবিদার। এমন অর্থ পুরস্কার পেলে ক্রীড়াবিদরা আরও উৎসাহিত হয়।’ আরেক উপ-মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু বলেন, ‘এসএ গেমসে কৃতিত্ব অর্জন করা ক্রীড়াবিদদের সিংহভাগ আনসার ও ভিডিপি’র। নড়াইলের সংগঠক হিসেবে আমি বলতে পারি, ক্রীড়াঙ্গনের দুঃসময়ের সঙ্গী আনসার। কারণ তৃণমূল থেকে ক্রীড়াবিদরা এসে প্রথমেই আশ্রয় পায় আনসারে। তাই তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি।’
×