ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিদের স্বস্তি

প্রকাশিত: ১২:০২, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

পাকিদের স্বস্তি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনেক নাটকীয়তা, অনেক জটিলতার পর অবশেষে পাকিস্তান সফর করছে বাংলাদেশ। লাহোরে তিন ম্যাচ টি২০’র মধ্য দিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসে ‘বিরল’ তিন ধাপে সফরের প্রথম ধাপ শেষ করে এসেছে টাইগাররা। তাতে পুরোপুরি স্বস্তি না মিললেও আত্মবিশ্বাসী পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। কারণ সফরের অন্যতম শর্তই হচ্ছে নির্বিঘেœ একটি ধাপ সফল হলে পরের ধাপে পা রাখবে বাংলাদেশ। ৭ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট দিয়ে শুরু দ্বিতীয় ধাপ। লাহোরে সফল আয়োজনের পর পিসিবি এখন সেদিকে চোখ রাখছে। তবে তিন ম্যাচের টি২০তে ২-০ ব্যবধানে জয়ের পর নিদারুণ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন প্রধান কোচ এবং নির্বাচক মিসবাহ উল হক। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের উড়িয়ে দেয়ার পথে জয় ৫ ও ৯ উইকেটে, বৃষ্টির কারণে তৃতীয় ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে টানা দুটি সিরিজ হারের পর বাংলাদেশের কাছে একটা ম্যাচ হারলেও র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান খোয়াতে হতো পাকিদের। টি২০ বিশ্বকাপের বছরের শুরুতে বাবর আজমদের জন্য সেটি হতো বড় এক ধাক্কা। মিসবাহ বলেন, ‘অবশ্যই আমরা সবসময়ই জয়ের জন্য খেলি, জিততে চেষ্টা করে যাই। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য এই জয় আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন দেখার অবকাশ মিলবে, কোথায় আমাদের দুর্বলতা, কোথায় শক্তি বাড়াতে হবে। চাপে থাকলে যেটা হয়, সবসময়ই অস্থিরতায় থাকতে হয় এবং অনেক কিছুই ধরা পড়ে না। এখন আমার জন্য, দলের জন্য, তরুণদের জন্যও এটা ভাল যে কিছুটা স্বস্তিতে থাকা যাবে, এই সাফল্য আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, সামনে এগিয়ে চলায় আরও মনোযোগ দিতে পারব আমরা।’ দুটি জয়েই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ। আগে ব্যাটিং করেও বড় রান করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে সফরকারীদের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ১৪১, দ্বিতয়ী ম্যাচে ৬ উইকেটে ১৩৬। মোহাম্মদ আমির ও ওয়াহাব রিয়াজকে বাদ দিয়ে এই সিরিজের দল ঘোষণা করে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মিসবাহ। কিন্তু শহীন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হাসনাইন, হারিস রউফের মতো তরুণ পেসাররা তার মুখে হাসি এনে দিয়েছেন। মিসবাহ বলেন, ‘বোলিং লাইনআপকে কৃতিত্ব দিতে হবে। আমাদের তরুণ বোলাররা বাংলাদেশকে কোনরকম সুযোগ দেয়নি, ওদের হুমকি হয়ে উঠতে দেয়নি। সবমিলিয়ে এটি ছিল দারুণ এক সিরিজ, পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য যা ভাল।’ আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিকের পারফর্মেন্স। অধিনায়ক বাবর আজমের চাওয়ায় এই সিরিজ দিয়েই তাদের দলে ফেরানো হয়। প্রথম ম্যাচে জয়ের নায়ক ছিলেন মালিক, দ্বিতীয় ম্যাচে বড় অবদান হাফিজের। মিসবাহ কোচ ও প্রধান নির্বাচক হওয়ার পর থেকে দলে ক্রমাগত পরিবর্তন আনছিলেন। তবে এই সিরিজের পর উপলব্ধি করতে পেরেছেন সাফল্যের জন্য অভিজ্ঞতার ও তারুণ্যের সমন্বয় প্রয়োজন, ‘ওই দুই সিনিয়র দলে না থাকার সময় আমাকে ক্রমাগত প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি কখনই বলিনি কারও ক্যারিয়ার শেষ। কিন্তু কখনও কখনও চারপাশে তাকিয়ে একটু রসদ পরীক্ষা করে নিতে হয়, পরখ করতে হয় কোথায় অবস্থান আমাদের, কি করতে হবে।’ বিশ্বকাপের পর দলে ব্যাপক পরিবর্তন এনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবং অস্ট্রেলিয়ার সফরে ভরাডুবির দিকে ইঙ্গিত করে মিসবাহ বলেন, ‘দুটি সিরিজ হারার পর আমরা বুঝতে পেরেছি, পুরোপুরি তরুণদের ওপর নির্ভর করা যাবে না, অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন আছে। বাবর ওদের সমর্থন করেছে, প্রত্যাশিতভাবেই ওদের অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লেগেছে। দরজা কখনই বন্ধ নয়। কোন ক্রিকেটার ফিট থাকলে, পারফর্ম করলে ও দলের প্রয়োজন হলে, অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।’ ঘরের মাটিতে টি২০তে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় সারির দলের কাছে ৩-০তে বিধ্বস্ত হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ২-০তে হারে পাকিস্তান। তাতে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে একটি ম্যাচ হারলেও হয়ে যেত তাদের অবনমন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিরিজটি পাকিস্তান জিতেছে ২-০তে। দলের বাজে পারফর্মেন্সে সমালোচনার শূলে চড়ানো হয়েছিল মিসবাহকেও। তিনি শুধু কোচই নন, প্রধান নির্বাচকও। ক্ষমতা যেহেতু প্রবল, দায়ও তারই সবচেয়ে বেশি। র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দলের জন্য পরপর দুই সিরিজে ওভাবে বিধ্বস্ত হলে কোচের তো দম বন্ধ লাগারই কথা। সেই অস্বস্তি থেকে আপাতত মুক্তি মিলেছে। টি২০তে বাংলাদেশকে হারানোর পর এখন সামনে তাকানোর ফুরসত পাচ্ছেন মিসবাহ।
×