ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হেলিকপ্টার ভেঙ্গেই মৃত্যু কিংবদন্তি ব্ল্যাক মাম্বার

প্রকাশিত: ১২:০১, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

হেলিকপ্টার ভেঙ্গেই মৃত্যু কিংবদন্তি ব্ল্যাক মাম্বার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাস্কেটবল কোর্টে প্রতিপক্ষকে চূর্ণবিচূর্ণ করে জয় ছিনিয়ে আনার জাদু দেখিয়েই তিনি পরিণত হয়েছিলেন কিংবদন্তিতে। রবিবার রাতে আকস্মিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রয়াত হলেন সেই কিংবদন্তি খেলোয়াড় কোবি ব্রায়ান্ট। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গে পড়ে তার হেলিকপ্টার। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এই প্রাক্তন মার্কিন বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের। তার বয়স হয়েছিল ৪১ বছর। সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী দুর্ঘটনার সময় ব্রায়ান্টের সঙ্গে সেই অভিশপ্ত কপ্টারে ছিলেন তার ১৩ বছরের কন্যা জিয়ান্না। যে ব্রায়ান্টের মতোই বাস্কেটবল খেলোয়াড় হওয়ার দিকে এগোচ্ছিল। এ ছাড়াও ছিলেন চালকসহ সাত যাত্রী। যার মধ্যে ছিলেন স্থানীয় কলেজের বেসবল কোচ জন আলতোবেলি, তার স্ত্রী কেরি ও কন্যা এ্যালিসা। জিয়ান্না ও এ্যালিসা দু’জনেই ব্রায়ান্টের মাম্বা স্পোর্টস এ্যাকাডেমিতে সতীর্থ। সেখানেই যাচ্ছিল এই দুই পরিবার। উল্লেখ্য, কোর্টে ক্ষিপ্রতার জন্য ব্রায়ান্টের নাম হয়ে গিয়েছিল ‘ব্ল্যাক মাম্বা’। সেই নামেই এই এ্যাকাডেমি। বিবিসি’র খবর, এরা ছাড়াও কপ্টারটিতে ছিলেন জিয়ান্নার বিদ্যালয়ের বাস্কেটবল কোচ ক্রিস্টিনা মোজেরও। এ ছাড়াও সারা চেস্টার নামে এক অভিভাবক ও তার কন্যা পেটনের নামও জানা গেছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রাথমিক কারণ হিসেবে উঠে এসেছে খারাপ আবহাওয়ার কথা। আরও জানা গেছে, কুয়াশার মধ্যে লস এ্যাঞ্জেলেস শহরতলীর পাহাড়ী এলাকা কালাবাসাস অঞ্চলের খুব নিচু দিয়েই উড়ে যাচ্ছিল কপ্টারটি। সংবাদ সংস্থা লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে উদ্ধৃত করে আরও জানিয়েছে, বিমানবন্দরের স্থানীয় পুলিশ কুয়াশার জন্যই কপ্টারটিকে দুপুরে উড়তে বলেছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেন চালক। তিনি বাকিদের নিয়ে উড়ে যান ৮৫ মাইল দূরের নিউবারি পার্কে অবস্থিত মাম্বা স্পোর্টস এ্যাকাডেমির উদ্দেশে। নিচু দিয়ে ওড়ার জন্য সতর্কও করা হয়েছিল কপ্টারটির চালককে। ওড়ার কিছুক্ষণ পরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কুয়াশায় ঢাকা পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গে পড়ে কপ্টারটি। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। লস এ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির শেরিফ এ্যালেক্স ভিয়ানুয়েভা জানিয়েছেন, চালকসহ সব যাত্রীই প্রয়াত। শেরিফের দফতর সূত্রেই জানা গেছে, মার্কিন সময় রবিবার সকাল ৯টা ৬ মিনিটে স্থানীয় জন ওয়েন বিমানবন্দর থেকে উড়েছিল কপ্টারটি। বিবিসি এই মর্মান্তিক ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীকে উদ্ধৃত করেছে। গাভিন মাসাক নামে সেই ব্যক্তির কথায়, দুর্ঘটনার মুহূর্তে বিস্ফোরণের মতো না হলেও বিকট শব্দ শুনেছিলাম। বাড়ির বাইরে এসে দেখি সামনের পাহাড়ে যেটি আছড়ে পড়েছে। পাহাড়ের ওই জায়গা থেকে তখন ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। ঘটনার দু’মিনিটের মধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে চলে আসেন দমকলকর্মীরা। কিন্তু তখন কিছুই করার ছিল না। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী ১৮ সদস্যের তদন্তকারী দল গিয়ে পরীক্ষা করছেন কিভাবে, কার গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা। একই সঙ্গে এই দুর্ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্যও। ডট নোসো নামে জনৈক ব্যক্তি ২০১২ সালের ১৪ নবেম্বর টুইট করে জানিয়েছিলেন, হেলিকপ্টার ভেঙ্গে পড়েই মৃত্যু ঘটবে কোবির। এদিন সেই টুইটের সত্যতা নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোড়ন পড়েছে। তদন্তকারী দলের সদস্য জেনিফার হোমেন্ডি বলেছেন, চালকের অতীত খতিয়ে দেখছি আমরা। কপ্টারটি যে সংস্থার, তার মালিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। কিভাবে হেলিকপ্টারটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো, তার বিশদ তথ্য নেয়া হচ্ছে। খোঁজ চলছে ব্ল্যাক বক্সেরও। জানা গেছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত কপ্টারটি ছিল সিকোরস্কি এস-৭৬ মডেলের। উল্লেখ্য, ২০০৮ ও ২০১২ অলিম্পিক্সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে সোনাও জিতেছিলেন কোবি। ১৯৯৬-২০১৬ দশকে লস এ্যাঞ্জেলেস লেকার্সের হয়ে ১,৩৪৬টি এনবিএ ম্যাচে তার অর্জিত পয়েন্টের সংখ্যা ৩৩,৬৪৩। এই প্রতিযোগিতায় তিনি পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি ১৮ বার এনবিএ অলস্টার খেতাব পেয়েছিলেন। ব্রায়ান্টের বাবা জো ‘জেলিবিন’ ব্রায়ান্টও ছিলেন বাস্কেটবল খেলোয়াড়। অবসরের পর ২০১৮ সালে স্বল্পদৈর্ঘ্যরে এ্যানিমেটেড ফিল্ম ‘ডিয়ার বাস্কেটবল’-এর জন্য অস্কারও পেয়েছিলেন কোবি ব্রায়ান্ট।
×