ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভরাট হচ্ছে নদী

ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে ছোট যমুনা

প্রকাশিত: ১০:০৮, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে ছোট যমুনা

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ নওগাঁ শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর দু’পাশ আবারও ভাগাড়ে পরিণত হতে চলেছে। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোল ঘেঁষে বয়ে চলা ছোট যমুনা নদীতে নির্মিত নতুন ব্রিজের ধারে অবাধে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ফলে দূষিত হচ্ছে নদী ও এর আশপাশের পরিবেশ। ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর একটি অংশ। ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার খ্যাত বদলগাছীর ছোট যমুনা নদীর পাশেই রয়েছে হাট-বাজার। রয়েছে অনেক হোটেল, মাছের বাজার, মুরগির দোকান, মাংসের দোকান, কাঁচা তরকারির বাজারসহ নানা ধরনের দোকান। এসবের সব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীর নতুন ব্রিজের ধারে। সরজমিনে দেখা যায়, পাশর্^বর্তী হাটখোলা বাজারের বিভিন্ন বর্জ্য এবং সাপ্তাহিক দুটি হাটের সব ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। ছোট যমুনা নদীর নতুন ব্রিজের পাশে থেকে নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলছে বাজারের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। দুর্গন্ধে ভরপুর হয়ে উঠেছে চারপাশ। দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। অপরদিকে দেখা যায়, নদীর যে স্থানে ময়লা ফেলা হচ্ছে সেখান থেকে থানার ওসির আবাসিক ভবনটি মাত্র ২০ গজ দূরে। ওই এলাকার বসবাসকারী রজত, মুকুল, রিপনসহ অনেকেই বলেন, গরমের সময় আমরা বিকেলে নদীর পাড়ে বসে বিশ্রাম নেই। আবার স্বাস্থ্য সচেতন মানুষরা শরীর ভাল রাখার জন্য নিয়মিত নদীর ধারে হাঁটাহাঁটি করে। কিন্তু নদীর ধারে ময়লা ফেলার কারণে দুর্গন্ধে ভরপুর হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ। তাই আর এদিক দিয়ে মানুষ হাঁটতে পারছে না। কেন এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে জানতে চাইলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী চঞ্চল জানায়, আমাদের ময়লা ফেলার জন্য কোন নির্দিষ্ট জায়গা দেয়া হয়নি। যদি কোন জায়গা আমাদের নির্দিষ্ট করে দেয়া হতো, তাহলে আমরা সেখানেই ময়লা ফেলব। বদলগাছী হাটখোলা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া বলেন, নদীতে ময়লা ফেলা ঠিক নয়। ময়লা ফেলার জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গা থাকা দরকার। এ বিষয়ে বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ চৌধুরী জুবায়ের আহাম্মদ বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এখানে ময়লা ফেলার জন্য নিষেধ করেছি। তারপরও তারা শুনছে না। এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহারুল ইসলাম বলেন, বদলগাছীতে ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার অবস্থিত হওয়ায় এখানে প্রতিনিয়ত দেশী-বিদেশী পর্যটক আসেন। সে কারণে এই উপজেলাটি সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। আর সেখানে নদীতে ময়লা ফেলে কোনভাবেই নদীকে দূষিত করতে দেয়া যাবে না। তাই অতি শীঘ্রই এখানে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে ময়লা না ফেলার নির্দেশ দেয়া হবে। বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছামসুল আলম খান বলেন, নদীতে ময়লা ফেলা যাবে না। কিন্তু ময়লা ফেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা দরকার। আমি সরজমিনে দেখে ময়লা ফেলার জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা করব। কুয়াকাটা সৈকত নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, এবার কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ময়লা আবর্জনা ফেলছে কুয়াকাটা সৈকতের বেলাভূমে। সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে পূর্বদিকে গঙ্গামতি লেকপাড়ে যেখানটায় সূর্যোদয় দেখতে পর্যটকরা প্রত্যুষে ভিড় করেন ওই পথে যেতেই বিচের উপরের অংশে ময়লা আবর্জনা ফেলে একাকার করে রাখা হয়েছে। অনেক ময়লা আবর্জনা ভরা জোয়ারের ঢেউতে সাগরের পানিতে মিশছে। একেতো বিচের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয় না নিয়মিত, তার উপরে খোদ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এসব ময়লা আবর্জনা গড়িতে বোঝাই করে বিচের পাশে ফেলে রাখায় বিচ নোংরা হয়ে যাচ্ছে। দূষণে হুমকিতে পড়ছে পরিবেশ-প্রতিবেশ। প্রায় তিন শ’ বর্গফুট এলাকাজুড়ে বিভিন্ন ধরনের ময়লা আবর্জনার স্তূপ পড়ে আছে। স্থানীয় এক জেলে জানান, পৌরসভার গাড়িতে করে এসব ময়লা এখানে ফেলা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ময়লা বর্জ্যে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দোকানপাটের পচনশীল ময়লা-আবর্জনায় ওই পথে বিচ পারে হাঁটা যায় না। পূর্ণিমা কিংবা অমাবস্যার অস্বাভাবিক জোয়ারের ঝাপটায় ফেলে রাখা কয়েকটন ময়লা আবর্জনা সাগরের পানিতে মিশলে দূষণের শঙ্কা রয়েছে। সাগরের মাছ ধরা জেলেরা পর্যন্ত এ নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, ওই স্পটে ময়লা আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে। বর্তমানে এসব ময়লা ছাড়াও বিচের জিরো পয়েন্টের পশ্চিম দিকে কাঁকড়া ফ্রাই করার দোকানের পাশেই ময়লা আবর্জনাসহ বিভিন্ন বর্জ্যে একাকার হয়ে আছে। পর্যটকরা এসব পথে স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পর্যন্ত পারছে না। পরিচ্ছন্ন কুয়াকাটা সৈকতের পরিবেশ রক্ষায় পর্যটকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×