ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে করণীয় ॥ প্রেক্ষাপট উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে করণীয় ॥ প্রেক্ষাপট উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা

একটা সময় ছিল যখন প্রযুক্তির দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে ছিল। কিন্তু এখন বহির্বিশ্বের প্রযুক্তির ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। একসময়ের স্বল্প উন্নত দেশ বাংলাদেশ, এখন সবক্ষেত্রেই উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার হার। কিন্তু এখনও বাড়েনি কর্মসংস্থানের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত) বলা হয়েছে যে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে, যা ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশে এ হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রতি বছর শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মানুষ চাকরি পাচ্ছে, কিন্তু যে বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন করেছে সেই বিষয়ের সঙ্গে তাদের কর্মক্ষেত্রের কোন প্রকার সংযোগ থাকছে না। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দেশের বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হচ্ছে, যাতে কোটি কোটি টাকা দেশের বাইরে যাচ্ছে। দেশের জনশক্তি দেশের বাইরে কাজ পাচ্ছে না ভাষাগত অজ্ঞতার কারণে। এসব সমস্যার একটি সমাধান হলো দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, যারা শিক্ষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মেও দক্ষ হবে। এরই সঙ্গে বাড়াতে হবে যথেষ্ট কর্মসংস্থান, যাতে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা না বাড়ে। সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে এই সমস্যার সমাধানে। প্রয়োজন উপযুক্ত পরিকল্পনা। ইউজিসির তথ্যানুসারে বাংলাদেশে গত ২০১৮ সালে প্রযুক্তি/কারিগরি শিক্ষায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী জনগোষ্ঠী : প্রায় সব ইউনিভার্সিটিতেই কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আরও নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে, যা আইটি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। দীর্ঘ চার বছরের ডিগ্রী অর্জন করে যখন এই সকল শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে, তাদের অনেকেরই অদক্ষতার জন্য উপযুক্ত চাকরি হচ্ছে না । আর যদি চাকরি হয়েও যায় তারা তাদের পুঁথিগত বিদ্যাকে বাস্তবিক জীবনে কাজে লাগাতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থা যে, তারা চাকরির সাক্ষাতকারেও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হতে পারে না। যে কাজগুলো করতে পারা তাদের জন্য খুব স্বাভাবিক ছিল, পুঁথিগত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও সেই জ্ঞানের প্রয়োগ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাকরিদাতাদের অভিযোগ থাকে যে, তারা দক্ষ কর্মী পাচ্ছে না। ঠিক তেমনি এসব সদ্য ডিগ্রীপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীও কর্ম ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের আলাদা করে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে চাকরিদাতাদের। এ কারণেই বেশিরভাগ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকার কথা বাধ্যতামূলক করা হয়। ফলে অনেক ভাল ফল থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। এবার আসা যাক কর্মসংস্থানের বিষয়ে। প্রতিবছর যত সংখ্যক শিক্ষার্থী ডিগ্রী লাভ করছে, তত সংখ্যক উপযুক্ত চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে- ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী কোন আইটি কোম্পানিতে চাকরি না করে চাকরি করছে একটি স্বল্প বেতনের কল সেন্টারে। এর কারণ হচ্ছে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকা। যখন তার ডিগ্রী সম্পর্কিত চাকরির জন্য সে যাচ্ছে তার কাছে অভিজ্ঞতা চাওয়া হচ্ছে, কিন্তু সে চাকরি প্রার্থীর চাকরির অভিজ্ঞতা তো থাকছে তা কিন্তু কল সেন্টারের, যা কল সেন্টারগুলো ছাড়া অন্য কোথাও কাজে লাগবে না। কেউ কেউ আইটি ক্ষেত্রে লেখাপড়া করেও বিভিন্ন সরকারী চাকরি, ব্যাংক বা নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। এ সবই হচ্ছে যথাযথ কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে। অনেককেই দেখা যায় যে, হয়ত কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হচ্ছে, কিন্তু ভবিষ্যত চাকরি জীবনের কথা চিন্তা করে পরবর্তীতে তাদের লেখাপড়ার সাবজেক্ট পরিবর্তন করে হয়ত বিবিএতে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। কারণ এই বিষয়ে লেখাপড়া করলে চাকরি পাবার সম্ভাবনা বেশি মনে করছে তারা। খুব কম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগের কোন শিক্ষা দেয়া হয়। যেহেতু শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগ শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে না। তার কারণেই শিক্ষার্থীরা যথাযথ জ্ঞান লাভ করতে পারছে না এবং অদক্ষ কর্মী হয়ে উঠছে। যার কারণে তারা দেশের উন্নতিতে আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা কোন আইটিনির্ভর বিষয়ে লেখাপড়া করছে। কারণ তাদের অনেকেরই লক্ষ্য থাকে দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষার্থে যাওয়া। দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে দেশের বাইরে বসবাস করাও অনেকের ইচ্ছা থাকে। এখানেও রয়েছে বিপত্তি। অনেক দেশেই শিক্ষাগত কারণে যেতে হলে বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হতে হয়। ইংরেজী ভাষায় তো অবশ্যই পারদর্শী হতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, অনেক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা লাভ করতে পারে না। দেশের বাইরে লেখাপড়া বা কাজের জন্য যেতে চাইলেও দিতে হবে ভাষাগত বিভিন্ন পরীক্ষা, যা ভাষার দক্ষতা পরিমাপ করবে। যেমন, ইংরেজী ভাষা দক্ষতা পরিমাপ করা হয় আইইএলটিএস পরীক্ষার মাধ্যমে। এই পরীক্ষায় নির্দিষ্ট পয়েন্ট অর্জন করতে পারলেই শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন করতে পারে। ঠিক তেমনি চাকরি ক্ষেত্রে দেশের বাইরে আবেদন করতে চাইলেও এই পরীক্ষার প্রয়োজন। কিছু দেশে চাকরি ক্ষেত্রে ইংরেজী ছাড়াও অন্য ভাষায় পারদর্শী হওয়া প্রয়োজন। যেমন, জাপান বা চীনে চাকরি প্রার্থীদের অবশ্যই জাপানী ভাষা বা চায়নিজ ভাষায় পারদর্শী হতে হয়। এসব ভাষার দক্ষতা পরিমাপ করার জন্যও রয়েছে পরীক্ষার ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট ভাষাগত লেভেল অর্জন করার পরেই চাকরির জন্য আবেদন করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশের খুব কম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা শিক্ষার বিভিন্ন কোর্সের ব্যবস্থা থাকে। যার ফলে যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন থাকা সত্ত্বেও অনেকেই জাপান, কোরিয়া বা চীনের মতো দেশে চাকরি করার সুযোগ হারায়। আর এ কারণেই উন্নত বিশ্বের উচ্চ শিক্ষার তুলনায় বাংলাদেশে সেই তুলনায় না সুযোগ্য শিক্ষক বাড়ছে, না শিক্ষার্থীগণ আশানুরূপ শিক্ষা লাভ করে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারছে! প্রযুক্তিগত দিক থেকে উন্নত দেশগুলোর কথা বলতে গেলে বেশ কিছু দেশের নাম সামনে চলে আসে। এর মাঝে আছে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরাইল, জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং আরও অনেক দেশের নাম। কেন এই দেশগুলো এত উন্নত তা একটু ভাবলেই সবার আগে তাদের প্রযুক্তির কথাই মনে পড়বে। জাপানের কথাই ধরি। জাপানের বিশেষজ্ঞদের উন্নত মানের গবেষণা তাঁদের প্রযুক্তিতে অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছে। বিভিন্ন খাতে জাপান উন্নতি সাধন করেছে যেমনÑ অটোমোবাইল, ইলেক্ট্রনিক্স, মেশিনারি, অপটিক্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটিক্স এবং আরও নানা ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করেছে। তাদের এই উন্নতির কারণ খুঁজলে সর্ব প্রথম বলতে হয় শিক্ষা ব্যবস্থার কথা। ঝযড়লর গঁৎধঃধ এবং ঝধস ঝঃবৎহ তাঁদের আর্টিক্যাল ‘ঔঞঊ া৫হ১-ঞবপযহড়ষড়মু ঊফঁপধঃরড়হ রহ ঔধঢ়ধহ’-এ উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৫৮ সাল থেকেই জাপানে নিম্ন মাধ্যমিক লেভেলেই প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়। পরবর্তীতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বৃত্তিমূলক প্রযুক্তি শিক্ষাকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়। নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্দেশ্যই ছিল শিক্ষার্থীদের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তিকে হাতে কলমে শেখা এবং বাস্তবিক অর্থেই আধুনিক মেশিন তৈরি এবং চালনা করার মাধ্যমে জীবন এবং প্রযুক্তির মাঝের সম্পর্ক বোঝা এবং আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করা, যাতে দৈনন্দিন জীবনের মান বৃদ্ধি পায়। এবার আশা যাক বাংলাদেশে কিভাবে প্রযুক্তি শিক্ষার বিকাশ ঘটানো যায়, সে বিষয়ে। জাপানের মতোই আমরাও মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রযুক্তি নির্ভর বৃত্তিমূলক কোর্সের ব্যবস্থ্যা করতে পারি, যাতে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, থাকতে হবে বাস্তবিক প্রয়োগ। এ সব কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যাতে সহজেই প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে, সে জন্য যথেষ্ট পরিমাণে বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা উচিত। যে বিষয়েই ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী নেয়া হোক না কেন, শিক্ষার্থীগণ চাইলে যেন এসব কোর্সের মাধ্যমে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পাস করার পরেই কোন চাকরি পেতে পারে বা নিজেই আয়ের উৎস নিজেই তৈরি করতে পারে। হাতে কলমে শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলে আমরাও প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কারে ভূমিকা রাখতে পারব। তারাও বিভিন্ন মেশিন আবিষ্কার ও পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। এরকম কিছু কোর্সের নাম হচ্ছে কম্পিউটার স্পেশালিস্ট, ওয়েব ডেভেলপার, অটোমেশন কন্ট্রোল, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, অর্গানাইজেশনাল স্কিল, মেশিনিস্ট ইত্যাদি। এ ছাড়াও ভাষাগত জ্ঞান অর্জনের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানিজ, স্প্যানিশ, রাশিয়ান, ফ্রেঞ্চ ইত্যাদি ভাষা শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানের টেস্টের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই দেশের বাইরে শিক্ষা বা চাকরি লাভের জন্য যেতে পারে। এ ছাড়াও বেকারত্ব দূর করতে ২৮টি হাইটেক পার্কের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংযুক্তির ব্যবস্থা করা উচিত যাতে, ডিগ্রী লাভের পর তরুণ-তরুণীরা সহজেই চাকরি লাভ করতে পারে। উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত শ্রেণীকক্ষ পরিবর্তন, পরিমার্জন এবং এমন পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করবে, যা পরিবর্তিত আধুনিক ও সমসাময়িক প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। একটি দেশের ভবিষ্যত তার উৎপাদিত কর্মীদের মানের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে জাতীয় শিক্ষানীতিকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে মিল রেখে উচ্চ শিক্ষার কৌশল নির্ধারণ করা হয় । যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ যেমন : সারে, লিসেস্টার, লিভারপুল ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে নিয়োগের যোগ্য করে গড়ে তুলতে ছাত্রদের শেখায় কিভাবে একটি চাকরি পাবে, এমনকি পোশাক, সাক্ষাতকার এবং বায়োডাটা কিভাবে তৈরি করা যায়, তাও শেখানো হয়। প্রচলিত স্নাতক প্রোগ্রামসমূহের জন্য সুপারিশমালা প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কলেজগুলোতে একটা মাল্টিমিডিয়া ডিসিপ্লিনারি সেন্টার থাকবে। সেই সেন্টার থেকে নন-একাডেমিক কোর্স যেমনÑ প্রশিক্ষণ, ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি বিষয় প্রতিনিয়ত অফার করবে, যা থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো কোর্স বিভিন্ন সময়ে গ্রহণ করবে এবং এগুলো অবশ্যই বাধ্যতামূলক হবে। এই সেন্টারের কাজই হবে যুগের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন কোর্স চালিয়ে যাওয়া, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা চাকরির দুনিয়ায় নিজেদের প্রস্তুত করবে। ভাষার জন্য ২ ক্রেডিট এবং বিশেষায়িত কোর্সের জন্য ৬ ক্রেডিট। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কেন্দ্র করে শেষবর্ষে গিয়ে একটা প্রকল্প/ ইন্টার্নশিপ করতে হবে। এ সব কিছু সম্পূর্ণ করলে কেবল একজন শিক্ষার্থী ডিগ্রীপ্রাপ্ত হবে। এ ছাড়াও- ১। শিক্ষকদের নতুন নতুন বিষয় ও প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান। ২। মাল্টিডিসিপ্লিনারি এডুকেশন সেন্টার স্থাপন। ৩। বাধ্যতামূলক কোর্স হিসেবে : ক) বিশেষায়িত কোর্স (প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্কিং, আইওটি, এআই, এমএল, ট্রেড কোর্স) খ) ভাষা : যেমন জাপানিজ, চাইনিজ, কোরিয়ান ইত্যাদি। ৪। ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন। ৫। বাধ্যতামূলক প্রজেক্ট অথবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট। বাংলাদেশ যেমন সম্ভাবনার দেশ ঠিক তেমনি সম্ভাবনাময় এদেশের তরুণ-তরুণীরা। শুধু শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু পরিবর্তন এবং শিক্ষার্থীদের াড়পধঃরড়হধষ কোর্সের সুযোগ করে দিলে তারা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। আর নতুন প্রজন্মের উন্নতি মানেই দেশের সার্বিক উন্নতি সংঘটিত হওয়া। এদেশের তরুণরা যত প্রযুক্তিতে উন্নত হবে, বাংলাদেশও তত উন্নতি সাধন করবে। সেই দিন খুব বেশি দূরে থাকবে না, যখন আমরাও পৃথিবীর বড় বড় দেশের সমকক্ষ হতে পারব। এর জন্য প্রয়োজন চেষ্টা এবং সুপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থার। লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন
×