ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর জেনারেল হাসপাতালে বার্ন ইউনিট নেই

প্রকাশিত: ১২:১১, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

যশোর জেনারেল হাসপাতালে বার্ন ইউনিট নেই

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে গরম পানি কিংবা শীত নিবারণের জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে শিশু নারী ও পুরুষের শরীর ঝলসে ও দগ্ধ হওয়ার তথ্য মিলছে প্রতিনিয়ত। চলতি জানুয়ারি মাসের ২৭ দিনে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দগ্ধ হয়ে বৃদ্ধাসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। শরীর ঝলসানোর যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বেডে রয়েছেন ২৩ রোগী। যাদের অধিকাংশই শিশু। এদিকে পোড়া ও ঝলসানো রোগীর সংখ্যা বাড়লেও তাদের থাকার সুনির্দিষ্ট কোন বেড (বিছানা) নেই। মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডের ফ্লোরেই ঠাঁই মিলছে তাদের। চিকিৎসকরা রোগীদের উন্নত ব্যবস্থাপত্র দিলেও সুরক্ষা নিয়ে তাদের অভিভাবকরা চিন্তিত রয়েছেন। হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি মাসের ১৮ তারিখে মিষ্টির গরম চিনির সিরায় পড়ে মনিরা খাতুন (২৮) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি ওইদিন সকালে হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মারা যান। তিনি বাঘারপাড়া উপজেলার নারকেলবাড়িয়া গ্রামের আবু সাইদের স্ত্রী। অপরদিকে, আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন শুকুরুন নেছা (৬০) নামে এক বৃদ্ধার। তিনি অগ্নিদগ্ধ হয়ে গতবছর ১২ ডিসেম্বর হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই জানুয়ারি বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মারা যান। এদিকে, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মাগুরা গ্রামে শনিবার রাতে ১০ মাসের শিশু সোয়েবের গায়ে গরম পায়েস পড়ে। এতে তার ডান হাত ঝলসে যায়। তাকে রবিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটির মা জানান, অসাবধানতাবশত তার ছেলের হাতে শনিবার রাতে গরম পায়েস পড়ে ঝলসে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছি। শিশুটির পিতা আব্দুস সালাম ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকা অফিসের বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা। অপরদিকে, চলতি মাসের ১৭ তারিখে ধান সিদ্ধ করা পাতিলে পড়ে ঝিকরগাছা উপজেলার আজমপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে ৪ বছরের আরাফাতের শরীর ঝলসে যায়। একইদিন গরম সবজি গায়ে পড়ে বাঘারপাড়া উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের হোসাইন আহম্মেদের একবছরের মেয়ে নাহিদা খাতুনের শরীর ঝলসে গেছে। স্বজনরা তাদের হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এ বাদেও চলতি মাসের ৯ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০ মাসের শিশু আরাফাত, তিন বছরের মাসফিয়া, নুসরাত আরা, ১২ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছে সাত মাসের শিশু জিসান, তিন মাসের নুহা বাবু, ১৪ মাসের নীরব, আট বছরের সাদিয়া, ১৩ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছে দেড় বছরের আরাফাত, ১৪ জানুয়ারি ১৮ মাসের জেসমিন ও এক বছরের নাহিদা ভর্তি হয়। ১৭ জনুয়ারি ২৮ দিনের মানিবা, ১৮ জানুয়ারি ১৪ মাসের ছোয়া, এক বছরের সামিয়া দীপকে ভর্তি করা হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি তিন বছরের মীনা, আড়াই বছরের আল সাহাদ, ২২ জানুয়ারি ইসরাফিল, ১৮ মাসের আমান, ১৪ মাসের জাবির, রানী (৩০), দুই বছরের জান্নাতুল দগ্ধ হয়। এদিকে এই ঝলসানো ও দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসা দিলেও হাসপাতালে রোগীদের থাকার আলাদা কোন ব্যবস্থা নেই। অনেক রোগীর স্বজনরা সাধারণ বেড না পেয়ে পেয়িং বেডে রোগী নিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাঃ আনছার আলী জানান, হাসপাতাল ২৫০ শয্যা হওয়ার কারণে এখানে বার্ন ইউনিট নেই। পোড়া ও ঝলসানো শিশু ও নারী রোগীদের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে এবং পুরুষদের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সকল রোগীদের বেড না থাকায় অধিকাংশের ফ্লোরে থাকতে হয়। মেডিক্যাল কলেজের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মাসফেকুর রহমান জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২-৩ জন গরম পানিতে ঝলসানো এবং অগ্নিদগ্ধ রোগী ভর্তি হচ্ছে। এ বাদেও ৫-৭ জন সামান্য ঝলসানো ও দগ্ধ রোগীরা হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিচ্ছেন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। তিনি আরও জানান, পরিবারের সদস্যদের অসতর্কতার কারণে হাসপাতালে ঝলসানো ও দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে যে সকল রোগীর অবস্থা গুরুতর তাদের ঢাকায় রেফার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে যশোর মেডিক্যাল কলেজের বার্ন বিভাগের সার্জন সহকারী অধ্যাপক ডাঃ জয়নুর আবেদীন মুকুল জানান, যশোর হাসপাতালে ঝলসানো ও দগ্ধ রোগীদের উন্নত সেবা দেয়া সম্ভব। যদি এই রোগীদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি আরও জানান, হাসপাতালে যে দুইজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে; তারা চিকিৎসা করার সময় দেয়নি। অধিক ক্ষত থাকায় ভর্তির পর ব্যবস্থাপত্র দেয়ার সময় একজনের মৃত্যু হয়। তিনি আরও বলেন, আরেক অগ্নিদগ্ধ শুকুরন নেছা অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। কিন্তু স্বজনরা নিয়ে যায়নি। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ দিলীপ কুমার রায় জানান, আগুনে পোড়া বা ঝলসানো রোগীদের আলাদা ওয়ার্ড বা রাখার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এই রোগীদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে এখানে। আগামীতে হাসপাতালে ৪র্থ তলা চালু হলে বার্ন রোগীদের জন্য আলাদা একটি ওয়ার্ড করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
×