ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্চে আসছে ফ্রাইডে থিয়েটারের নতুন প্রযোজনা ‘ফানুস’

প্রকাশিত: ১২:০৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

মঞ্চে আসছে ফ্রাইডে থিয়েটারের নতুন প্রযোজনা ‘ফানুস’

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ অচিরেই যাত্রা শুরু হচ্ছে নতুন নাট্যদল ফ্রাইডে থিয়েটারের। নতুন এই নাট্য সংগঠনটি তাদের প্রথম প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চে আনছে ‘ফানুস’। তবে প্রযোজনাটিকে সংশ্লিষ্টরা মঞ্চ সিনেমা হিসেবে বলছেন। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন এই প্রযোজনায় মঞ্চনাটক এবং সিনেমার দুই ধরনের আয়োজন থাকছে। যা দর্শকদের অনেকটাই চমকে দেবে বলে তাদের বিশ্বাস। নতুন প্রযোজনা ‘ফানুস’-এর গল্প রচনা, সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করছেন তরুণ মঞ্চ ও টিভি অভিনেতা নিকুল কুমার ম-ল। তিনি জানান প্রযোজনার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন চৈতী চক্রবর্তী, তারেক, পাইলট, সাকিব, আলিনূর, আপন, শাওন, কাউছার, সোহান, সাগর, রাহাত, জাহিদ, সাগর রেইন, ইতিশা, জীবন, আহমেদ জীবন, এলিন, রাজুসহ অনেকে। সঙ্গীত শান স্বপন, পোশাক ফারজানা এনি, আলো তানজিল, রূপসজ্জা তন্ময়, প্রজেকশন মোহাম্মদ সাগর, প্রকাশনা বিজয় খান হাসু, মঞ্চ-ব্যবস্থাপনায় সজীব। মঞ্চ সিনেমা ‘ফানুস’ প্রসঙ্গে ফ্রাইডে থিয়েটারের প্রধান পরিচালক নিকুল কুমার ম-ল বলেন আমাদের সমাজের সমসাময়িক সমস্যা ও সম্ভাবনা, সমাধান আর বাস্তবতা মাথায় রেখেই কাজ করেন সমাজের অগ্রগামী কিছু মানুষ। সমাজ সংস্কারক, নির্দেশক, চিত্রশিল্পী, লেখক তথা সব শিল্পী, এমনকি কিছু ব্যবসায়ী। আরও উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে তাদের চিন্তাকে মানুষের কাছে পৌঁছানোর নিরন্তর চেষ্টা করেন। পেশাগত জীবনে অভিনেতা হিসেবে আমার চিন্তাকে চারপাশের অনুসঙ্গের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করি। যে যার ভাষার মাধ্যমকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তার একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তাকে সার্বজনীন করার জন্য। আমিও আমার চিন্তাকে সার্বজনীন করতে মঞ্চে নাটক করি। আমি বিশ্বাস করি প্রকৃতিগতভাবেই কিছু মানুষ আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য পৃথিবীতে নিয়ে আসেন। সমাজের প্রতি স্তরে কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আলাদা প্রগতিশীল চিন্তার কারণেই পৃথিবী সামনের দিকে এগিয়ে চলে। সেই চিন্তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে খুব কম মানুষই শামিল হতে পারেন। যখনই ভাল চিন্তার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শামিল হয়, তখনই সামাজিক বিপ্লব ঘটে। ইউরোপীয় রেনেসা শুরুর আগে মানুষ যেখানে সেখানে বই পড়তে শুরু করেছিলেন। নিকুল আরও বলেন, আমাদের শিল্পমাধ্যমে এই মুহূর্তে দারুণ কিছু প্রযোজনা মঞ্চায়িত হচ্ছে। বিশেষ করে হৃদী হকের ‘আঁকাছে ফুইটেছে ফুল’, পান্থ শাহরিয়ারের ‘ধলেশ্বরী অপেরা’, মাসুম রেজার ‘জলবাসর’, মুক্তনীলের ‘হিমুর কল্পিত ডায়েরি’ প্রভৃতি কাজ আমার ‘ফানুস’ গল্প বলার ক্ষেত্রে সাহস জুগিয়েছে। ‘ফানুস’ গল্প সমসাময়িক সমস্যা ও বাস্তবতার ফিউশান উপস্থাপন। মানুষ মানুষকে ক্ষমা করে, মালিক অদৃশ্য দৃশ্যমার আল্লাহ্, ঈশ্বর, ভগবান, মানুষকে ক্ষমা করে কিন্তু প্রকৃতি মানুষকে ক্ষমা করে না। ‘ফানুস’ যে আগুনে আত্মহারা আনন্দে ফুলে ফেঁপে দূর আকাশে পুড়ে হয় ছাই, মানুষ তার জ্ঞানত, অজ্ঞানত ভুলের বেড়াজালে আবদ্ধ। এই বক্তব্যকে উপজীব্য করেই নতুন নয় বরং সম্ভাব্য সুন্দর সমাধান খুঁজতে গিয়ে, ‘জনগণই যে মূল হাতিয়ার সমাজ সংস্কারের জন্য’- ‘ফানুস’ গল্পের মাধ্যমে সে কথাই বলতে চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি মঞ্চ-নাটকের প্রায়োগিক ভাষা কৌশল, উপস্থাপন সবকিছুই আধুনিক মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু আমার চিন্তার দৃশ্যমান উপস্থাপনের জন্য মঞ্চই উত্তম। তাই আমরা ‘ফ্রাইডে থিয়েটার’ এর ব্যানারে চেষ্টা করেছি ‘ফানুস’ গল্পটি মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে আধুনিক সরঞ্জামের বাঙলা, হিন্দি, ইংরেজি নৃত্য-গান, প্রজেক্টর সবকিছুর সর্বাধিক ব্যবহারের মাধ্যমে বানিজ্যিক উপস্থাপন করার। সে জন্য আমরা ভাষাগত দিকেও ‘ফানুস’ গল্পকে মঞ্চ-সিনেমা বলছি। আমরা সল্প সময়ে সহজ ভাবে সর্বাধিক মানুষের কাছাকাছি যেতে চাই। ‘ফানুস’ নাচগানে ভরপুর বানিজ্যিক ধারার গল্প। এ গল্প মঞ্চে প্রদর্শন হলেও, অনুভবে বানিজ্যিক সিনেমা। আমাদের উদ্দেশ্য মানুষের চিন্তাকে নাড়া দিয়েই ক্ষান্ত হবার নয়, আমরা সর্বাধিক মানষিক পরিবর্তন চাই। ‘মানুষ ধরো, মানুষ ভোজো শোন বলিরে পাগল মন’। লালনের ভাষায়, আমরা ফ্রাইডে থিয়েটার আমাদের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে চিন্তার সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের লক্ষ্যে ‘ফানুস’ এর মাধ্যমে মানুষ ভোজবার চেষ্টা করছি। ‘ফানুস’ লোভ লালসা উর্ধ্বে রেখে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য, স্বপ্নবাজি এক মানবিক গল্প। সমাজের শিশু-কিশোরদের কর্তব্য ভাল মানুষ হওয়া, আর প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দায়িত্ব শিশুকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। ‘ফানুস’ আঠারো বছরের উপরে বয়সী মানুষের জন্য দর্শনীর বিনিময়ে প্রদর্শিত হবে। আশা করি আমাদের চিন্তার জায়গায় সবাই একমত হবেন।
×