ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেরা দল গড়েছে সাবিনার বসুন্ধরা কিংস

প্রকাশিত: ১২:০১, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

সেরা দল গড়েছে সাবিনার বসুন্ধরা কিংস

রুমেল খান ॥ অনিশ্চয়তা কাটিয়ে শেষ হলো নারী ফুটবল লীগের বহুল আলোচিত দল বদল। ক্লাবগুলোর নিবন্ধন সম্পন্ন হলেও কবে মাঠে গড়াবে লীগ, সেই অনিশ্চিয়তা কাটেনি। ৩১ জানুয়ারি থেকে ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তাফ কামাল স্টেডিয়ামে লীগ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা আপাতত হচ্ছে না। শুরুর তারিখ পরে জানাবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। আসলে ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। এ উপলক্ষে দুদিন যানবাহন বন্ধ থাকবে। তাই নির্ধারিত সময়ে লীগ শুরু নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা। রবিবার শেষ পর্যন্ত বাফুফে ভবনে এসে আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে আট ক্লাব। যেখানে পেশাদার লীগের একমাত্র দল হচ্ছে বসুন্ধরা কিংস। ঢাকঢোল আর ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে জাঁমজমকপূর্ণ দল বদল করেছে কিংস। ঢাকঢোল, বাদ্য-বাজনায় মুখর বাফুফে। উপলক্ষ দলবদল। তবে সেটা পেশাদার লীগের নয়। উৎসবের আমেজে ছয় বছর পর শুরু হতে যাওয়া নারী ফুটবল লীগের অনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করে বসুন্ধরা কিংস। বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দল থেকে মোট ১৯ ফুটবলার আছে এই দলে। অভিজ্ঞ সাবিনা খাতুনের সঙ্গে কিংস জার্সি পরার অপেক্ষায় মনিকা, মারিয়া, সানজিদারা। আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নকালে সব দলগুলোর নাম অবশ্য বলতে পারেনি ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। এই লীগে আবাহনী, মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলো অংশ নেয়নি। অংশ নেয়নি বিজেএমসিও। শুরুতে নাম দিয়েও পরে নাম প্রত্যাহার করে নেয় শেখ জামাল ধানম-ি এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। কিংস স্কোয়াডের মাত্র চার ফুটবলারদের আছে লীগে খেলার অভিজ্ঞতা। তবে জাতীয় দলের ফুটবলাররা ক্যাম্পে থাকায় কোচের দুশ্চিন্তায় নেই ফিটনেস। এই লীগে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন তারকা ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুন। তিনি পাচ্ছেন ৫ লাখ টাকা। জাতীয় দলের মতো বসুন্ধরা কিংসেরও অধিনায়কত্ব করবেন তিনি। নতুন দলকে শিরোপা এনে দিতে চান, হতে চান সর্বোচ্চ গোলদাতা। এর আগে সাবিনা ২০১১ সালের লীগে খেলেছিলেন মোহামেডানে এবং ২০১৩ সালের লীগে খেলেছিলেন শেখ জামালের হয়ে। জাতীয় দলের ১৯ জনসহ মোট ২৩ খেলোয়াড়কে দলে নিয়েছে বসুন্ধরা। সাবিনা খাতুন, মারিয়া মান্দা, কৃষ্ণা রানী সরকার, মিশরাত জাহান মৌসুমী, মনিকা চাকমা, রূপনা চাকমাকে নিয়ে তারাই সবচেয়ে শক্তিশালী ও দামী দল। ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসানের লক্ষ্য শিরোপা, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দল গড়েছি। মেয়েদের ভাল পারিশ্রমিক দিচ্ছি। আশা করি, চ্যাম্পিয়ন হতে পারব।’ কোচ মাহমুদ শরীফা অদিতিরও একই লক্ষ্য, ‘আমরা শক্তিশালী দল গড়েছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলব।’ প্রিমিয়ার লীগের একমাত্র এই ক্লাবটি অংশ নিচ্ছে নারী ফুটবল লীগে। বাকিগুলো সাড়া দেয়নি বাফুফের ডাকে! ফলে তড়িঘড়ি করে অচেনা কিছু ক্লাব এনে লীগ শুরু করতে যাচ্ছে বাফুফে। তাদের নামগুলো শুনলেই বোঝা যাবে ব্যাপারটাÑ বেগম আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাব (উত্তরা), এফসি উত্তর বঙ্গ (রংপুর), কাঁচারীপাড়া একাদশ (জামালপুর), কুমিল্লা ইউনাইটেড, নাসরিন স্পোর্টিং ক্লাব (যাত্রাবাড়ী), স্বপ্নচূড়া এ্যান্ড আক্কেলপুর ফুটবল একাডেমি (সুনামগঞ্জ) এবং স্পার্টান এমকে গ্যালাকটিকো সিলেট ফুটবল ক্লাব। এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে এবং ২০১৯ সালের এপ্রিলে বাফুফে ঘোষণা দিয়েও এই লীগ শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ডাবল লীগ ভিত্তিতে হবে খেলা। প্রতিটি দল খেলবে ১৪টি করে ম্যাচ। এরপর সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল করা যায় কিনা তা নিয়েও ভাবছে বাফুফে। অর্ধযুগ পর লীগ শুরু হতে যাওয়ায় নারী ফুটবলাররা অনেক প্রীত। কেননা ক্লাব পর্যায়ের ফুটবল লীগ খেলে তারা যে অর্থ পাবেন, সেটা বেশ আকর্ষণীয়। লীগ উপলক্ষে ১১-২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় হবে দল বদল। লীগের ৮ ক্লাব ২৩ জন করে ফুটবলার নিবন্ধন করতে পারবে। সে হিসেবে ১৮৪ মহিলা ফুটবলার খেলার সুযোগ পাবেন। দক্ষিণ এশিয়ান নারী ফুটবলের বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অন্যতম পরাশক্তি বাংলাদেশ। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সে অর্থে আসছে না সাফল্য। জাতীয় দল হিসেবে এখন ঠিক ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না মারিয়া-সাবিনারা। এই ব্যর্থতার পেছনে পেশাদার লীগের অভাবই দায়ী, যা গত ছয় বছর ধরেই আয়োজন করতে পারেনি বাফুফে। ২০১১ ও ২০১৩ সালে হয়েছিল মেয়েদের দুটি ফুটবল লীগ। ২০১১ সালে হয়েছিল একটি কর্পোরেট লীগও। এছাড়া মেয়েদের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ সর্বশেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। তারপর সিনিয়র মেয়েদের ঘরোয়া কোন খেলাই নেই! ২০১১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম লীগ শুরু হয়েছিল। দুই গ্রুপে অংশ নেয়া দলগুলো ছিলÑ ‘ক’ গ্রুপে : শেখ জামাল ধানম-ি, ওয়ারী, আরামবাগ ও দিপালী যুব সংঘ; ‘খ’ গ্রুপে : মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ও ফরাশগঞ্জ ক্লাব। বাজেট ছিল সাড়ে চার লাখ টাকা। স্পন্সর ছিল ওয়ালটন। টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ও রানার্সআপ মোহামেডানকে যথাক্রমে ৫০ ও ৩০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মাঠে গড়িয়েছিল ‘ওয়ালটন এ্যানড্রয়েড প্রিমো ঢাকা মহানগরী মহিলা ফুটবল লীগ’-এর দ্বিতীয় আসর। সেবারও অংশ নিয়েছিল আট দল। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবাহনী, রানার্সআপ মোহামেডান। লীগের বাজেট ছিল সাড়ে ৫ লাখ টাকা। অংশ নেয়া প্রতিটি দলই পার্টিসিপেশন মানি হিসেবে ৩০ হাজার টাকা এবং লীগের চ্যাম্পিয়ন দল ৫০ হাজার টাকা, রানার্সআপ দল ৩০ হাজার টাকা করে পেয়েছিল। সেবার লীগ খেলে সাবিনা খাতুন প্রথম বছর শেখ জামাল থেকে পেয়েছিলেন ৬০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় আসরে মোহামেডান থেকে পেয়েছিলেন ৮০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় আসরের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী কয়েকজনকে ১ লাখ টাকা করেও দিয়েছিল। দুই লীগের মাঝে কর্পোরেট লীগ হয়েছিল। তাতে চ্যাম্পিয়ন বিজেএমসি। ২০১৫ সালে হওয়া জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিও জিতেছিল বিজেএমসি। তবে ঘরোয়া লীগ না হওয়াতে ফুটবলারদের অর্থ আয়ের পথ বন্ধ থাকলেও নিজেদের প্রতিভা দেখিয়ে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে ঠাঁই করে নেয়া ফুটবলাররা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের পুরস্কার হিসেবে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক পুরস্কার পেয়ে নিজেদের পরিবারকে সহায়তা করার সুযোগ পাচ্ছে। তবে এটাই যথেষ্ট নয়। তাই তারা ক্লাব ফুটবল লীগে খেলতে মুখিয়ে আছে।
×