ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগামীকাল থেকে উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক

উন্নয়ন কার্যক্রমে দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়ার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

উন্নয়ন কার্যক্রমে দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়ার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

এম শাহজাহান ॥ বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিতে দাতাদেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থ দেশে আনার বিষয়ে সর্বোচ্চ জোর দেয়া হচ্ছে। সহযোগীদের প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়া গেলে এমডিজির মতো এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বে দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এলক্ষ্যে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থের নিশ্চয়তা চায় সরকার। অগ্রাধিকার দশ মেগা প্রকল্পসহ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের চিত্র সহযোগী দেশগুলোর কাছে তুলে ধরা হবে। এছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং রোহিঙ্গাদের নিজদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনসহ দ্বিপক্ষীয় নানা ইস্যুতে দাতাদেশগুলোর সহযোগিতা চাওয়া হবে। জানা গেছে, আগামীকাল ও ৩০ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুদিনব্যাপী বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সভায় সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশের উন্নয়নে দাতাদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। এ কারণে বাজেট বাস্তবায়নসহ সব ধরনের উন্নয়নে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়ার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন তিনি। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায়ও এ বিষয়টিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া দাতাদের পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নেও দেশের উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে শীর্ষ অবস্থান করছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন দ্রুত এগিয়ে চলছে। অবকাঠামো খাতে সরকারী বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি অর্জনের বছর ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া দ্রুত মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত পাওয়া প্রয়োজন। জানা গেছে, এসডিজি অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৪ লাখ কোটি টাকার বাড়তি প্রয়োজন হবে। এই অর্থের জোগানে সহযোগী দেশ ও উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এসডিজি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার রূপকল্প-২১ ঘোষণা করেছে। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এসডিজি অর্জনের সব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) অর্জনে আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে দেশকে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত করতে চায় সরকার। এছাড়া বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়িয়ে রূপকল্প-২১ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। এজন্য এসডিজির লক্ষ্যসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েই বাজেট বাস্তবায়ন করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উদ্যোগে (ইআরডি) বিডিএফের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের বৈঠকে প্রায় ৩০টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে ইআরডি। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য আলোচ্যসূচীর খসড়াপ্রণয়ন করেছে ইআরডি। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা ও এর অর্থায়ন, গ্রামীণ রূপান্তরের মাধ্যমে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা, টেকসই নগরায়ন, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও মানসম্মত শিক্ষা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, সৃজনশীল অর্থায়ন, রোহিঙ্গাদের নিজদেশে ফিরিয়ে নেয়া, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়গুলো আনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ জানিয়েছেন, এবারের বৈঠকে মূল প্রবন্ধ হিসেবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে। প্রতিবারের মতো এবারও এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই যে উন্নয়ন এখানে দাতাদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এই উন্নয়ন দ্রুত ও টেকসই করতে হলে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ সঠিক সময়ে দিতে হবে। এদিকে এবারের বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এছাড়া জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা বৈঠকে যোগ দিবেন। বিডিএফের মূল প্রতিবেদন হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এটি ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের জন্য তৈরি হচ্ছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারকে পরিকল্পনা তৈরিতে দিকনির্দেশক হিসেবে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূর করাই লক্ষ্য। বৈঠকে বেসরকারী বাণিজ্য উন্নয়নে নীতিগত সহায়তাসহ ৮টি ইস্যু উপস্থাপন করা হবে। জানা গেছে, এবারের বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কী ধরনের অর্থনৈতিক কৌশল নিচ্ছে তা উন্নয়ন সহযোগীদের সামনে তুলে ধরা হবে। ফলে নতুন কী কী ক্ষেত্রে, কী ধরনের বিনিয়োগ ও সহায়তা প্রয়োজন এবং উন্নয়ন সহযোগীরা কীভাবে কোন ধরনের সহায়তা দিতে পারবে সেসব বিষয় উঠে আসবে। এছাড়া বেসরকারী বিনিয়োগে গতি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ১৬টি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারকে পরিকল্পনা তৈরিতে দিক নির্দেশক হিসেবে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূর করাই মূল উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে থাকছে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছানোর পরিকল্পনা।
×