ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নজর দিন নিত্যপণ্যে

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

নজর দিন নিত্যপণ্যে

সত্যি বলতে কি, গত কয়েক বছরের মধ্যে অকস্মাৎ পেঁয়াজের দামের আকাশচুম্বী উল্লম্ফনের পর থেকেই অস্থির হয়ে উঠেছে বাজার পরিস্থিতি। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম কারণ অতি বৃষ্টি ও বন্যায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারত কর্তৃক হঠাৎ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করে দেয়া। বাংলাদেশের করিতকর্মা ব্যবসায়ীরা এর তাৎক্ষণিক সুযোগ নিতে ছাড়েননি। দেশী ও ভারতের পেঁয়াজের তিন মাসের অভ্যন্তরীণ মজুদ সত্ত্বেও রাতারাতি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে করা হয় দুই শতাধিক টাকা প্রতি কেজি। এরপরই কোন কারণ ছাড়াই বাড়ানো হয় চালের দামÑ প্রতি কেজিতে ৫-৬ টাকা। অজুহাত হঠাৎ বৃষ্টি, শৈত্যপ্রবাহ, হিম-কুয়াশা ইত্যাদি। আগে ধারণা করা হতো, চালের দাম বড়লে বেড়ে যায় অন্যসব নিত্যপণ্যের দাম। এবার দেখা গেল পেঁয়াজের সঙ্গে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম, বেড়ে গেছে। গত কয়েক মাসে ধাপে ধাপে বাড়ছে অন্তত ১০টি নিত্যপণ্যÑ চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। এর পাশাপাশি আদা, রসুন, এলাচ, শুকনো মরিচ, দারুচিনি ইত্যাদি তো আছেই। ইতোমধ্যে বাজারে মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। অনেকটা এই প্রেক্ষাপটেই আসছে রমজান। সরকারের নানামুখী আন্তরিক উদ্যোগ-আয়োজন সত্ত্বেও বাজার পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক নয়, তা স্বীকার করতে হবে। আর এর জন্য প্রধানত দায়ী এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, আড়তদারসহ পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। তারা এই অসৎ পন্থাটি অবলম্বন করা শুরু করেছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বুলবুলের পর থেকেই। যদিও সেই দুর্যোগে দেশের ক্ষয়ক্ষতি ও ফসলহানি হয়নি তেমন। সপ্তাহের ব্যবধানে কোন কারণ ছাড়াই মোটা চালের দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে দুই থেকে পাঁচ টাকা। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করেন ক্রেতারা। দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাত দিচ্ছেন। রমজান আসতে এখনও প্রায় আড়াই মাস বাকি। অথচ এর মধ্যেই অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্য ভোগ্যপণ্যের বাজার। ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ, ছোলা, ডাল ও গুঁড়া দুধের দামের পারদ ক্রমশ উঠছে ওপরে। আটা-ময়দার পাশাপাশি চালের বাজারেও অস্থিরতা। এর অনিবার্য প্রভাব পড়েছে শাক-সবজির বাজারেও। বেশি দামের প্রভাব পড়েছে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের বাজারে। এ থেকে যা বোধগম্য তা হলো, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে সুযোগ নিতে চাইছেন ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর জনগণ বহুল উচ্চারিত এই সিন্ডিকেটের সামনে অনেকটা অসহায়, প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছে। কোন কারণ ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের অজুহাতে জাত ও মান ভেদে সব রকম ডালের দাম বেড়েছে। গুজবের কারণে বেড়েছে লবণের দাম। আকস্মিক লবণের এই কয়েকগুণ মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেয়া যায় না কিছুতেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ও পুলিশকে মাঠে নামতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, ডাল, লবণ, গুঁড়া দুধ, চিনি ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যের দাম তেমন না বাড়া সত্ত্বেও দেশীয় বাজারে কেন অযৌক্তিকভাবে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করে দেখতে হবে সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকদের। গরম মসলার দামও মনিটরিং করা বাঞ্ছনীয়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে অন্যতম দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসাধু আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি, সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকা। যে কারণে ভোক্তা ও ক্রেতাস্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশা, আসন্ন রমজানে যেন নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অহেতুক বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে না হয়। টিসিবির ট্রাকের পেছনে নায্যমূল্যে পেঁয়াজের জন্য এক দঙ্গল ভোক্তার শ্বাসরুদ্ধকর ধাবমান দৃশ্য আমরা আর দেখতে চাই না। পবিত্র রমজানে মানুষ স্বস্তি চায়, শান্তি চায়।
×