ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রঙের মেলা রমনায়

ফাল্গুনের আগেই ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে বাগান

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

ফাল্গুনের আগেই  ফুলে ফুলে ভরে  উঠেছে বাগান

মোরসালিন মিজান ॥ শীতের রুক্ষতা ক্রমে দূর হচ্ছে। সবুজ-সতেজ চেহারায় ফিরতে শুরু করেছে রমনা পার্ক। গাছে শুকনো পাতা যেমন দেখা যাচ্ছে তেমনি উঁকি দিচ্ছে নতুন কচিপাতা। নানা জাতের ফুলে ভরে উঠছে বাগান। রঙিন হয়ে ধরা দিচ্ছে চারপাশ। সব দেখে বোঝা হয়ে যায়, ফাল্গুন আসছে। বসন্ত বাতাসে সইগো বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে...। রমনাজুড়ে এখন বসন্তের বাতাস। ইতোমধ্যে মাঘের প্রায় অর্ধেক সময় গত হয়েছে। বাকিটুকু দেখতে দেখতে চলে যাবে। প্রকৃতি সে হিসাব রাখে বৈকি। এ কারণেই হয়ত শুরু গেছে প্রস্তুতি। উদ্যানের মোট আয়তন ৬৮দশমিক ৫একর। পুরোটাই গাছগাছালি। অসংখ্য প্রজাতির বৃক্ষ। তবে শীতকালটা বৃষ্টিহীন থাকে। জলের অভাবে সবুজ কিছুটা ম্লান হয়ে যায়। পাতা ঝরতে থাকে। তবে এখন ফাল্গুন আসি আসি করছে। বইতে শুরু করেছে বসন্তের হাওয়া। এর প্রভাবে গাছে গাছে দেখা দিচ্ছে নতুন পত্রপল্লব। দ্রুতই ফুটতে শুরু করেছে ফুল। উদ্যানের অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গাগুলোতে মৌসুমি ফুলের বাগান করা হয়েছে। গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জার্বেরা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, স্যালভিয়া ইত্যাদি ফুলের গাছ ভূমিভাগের খুব কাছাকাছি থেকে নিজেদের মেলে ধরেছে। একেক ফুলের একেকটি বাগান। কোনটিতে শুধুই চন্দ্রমল্লিকা। বড় বড় ফুলের ভারে গাছের উপরিভাগ কিছুটা নুইয়ে এসেছে। তাই নরম কা-ের সঙ্গে সরু খুঁটি জুড়ে দেয়া হয়েছে। একই ফুলের কোনটি সাদা, হলুদ, বেগুনি কিংবা গোলাপি। জার্বেরাও চন্দ্রমল্লিকার মতো কিছুটা। লাল, হলুদ, কমলা, সাদা, গোলাপি, বেগুনি ইত্যাদি রঙের ফুলে দারুণ সেজেছে রমনা। আছে হরেক জাতের গোলাপ। একাধিক গোলাপ বাগানে সদ্য ফোটা ফুল। কিছু ফুল। কিছু এখনও কলি। ফোটার অপেক্ষা করে আছে। বসন্তের রংটাকে বিশেষভাবে ধারণ করে গাঁদা ফুল। কোনটি হলুদ দেখতে। কোনটি কমলা রঙের। দূর থেকে দেখলে মনে হয় রঙের ফোয়ারা। বাসন্তী রঙে আগমনী ঘোষণা করছে ঋতুরাজ। গাঁদা ফুলের কাঁচা ঘ্রাণটাও টানছে খুব। স্যালভিয়া ফুলের রঙটা শুধু লাল নয়। গাড় লাল। মাটি থেকে সামান্য উঁচুতে ফুটে আছে। গাছ দেখা যায় না। পুরোটাই ফুলেল মনে হয়। অসংখ্য ফুল পাশাপাশি ফুটে আছে। অনেকদূর থেকে চোখ যায়। সঙ্গত কারণেই আকর্ষণ করে। জারুল, সোনাপাতি, কামিনী ইত্যাদি গাছেও ফুল ফুটেছে। এগুলো ঠিক বাগানের ফুল নয়। অপেক্ষাকৃত বড় গাছ। রমনার বিভিন্ন অংশে দেখা যাচ্ছে হলুদ সোনাপাতি। কড়া হলুদ রঙে ঢাকা পড়েছে পার্কের সবুজ। জারুলও কয়েকটি রঙে নিজেকে প্রকাশ করছে। ফুল উপহার দিয়েছে দীর্ঘ আকৃতির পথতরু নাগেশ্বর। ধবধবে সাদা ফুল। মাঝখানে সোনালি রঙের একথোকা পরাগ কেশর। সুন্দর দেখতে। আর পলাশের কথা তো না বললেই নয়। এরই মাঝে ফুলটি ফুটেছে। থোকা থোকা গাঢ় লাল ফুলে ফাগুনের আগুন! আরও অনেক ফুল ফুটে আছে রমনায়। পার্কের দর্শনার্থীরা এ সৌন্দর্য বেশ উপভোগ করছেন। গাঁদা ফুলের বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন রিহাব ও সুমি। দুই বন্ধু পার্কে বেড়াতে এসেছিলেন। ফুল দেখে যারপরনাই মুগ্ধ তারা। রিহাব বলছিলেন, গাঁদা ফুলটা এখন কম দেখা যায়। দোকানে আছে। বাগানে তেমন দেখা যায় না। এখানে দেখে খুব ভাল লাগল। বসন্ত যে আসছে, মনে পড়ে গেল। একইভাবে সুমি বলছিলেন, সাধারণত পহেলা ফাল্গুনে গাঁদা ফুলের মালা খোঁপায় পরি। এখানে এত ফুল দেখে আর তড় সইছে না। কিন্তু ফুল তো ছেঁড়া বারণ। তাই পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন বলে জানান তিনি। এদিকে, ফুল নয় শুধু, মৌমাছিরাও ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। গুনগুন করে গান গাইছে তারা। এ গানেও যে বসন্তের সুর, সে তো বলাই বাহুল্য। পাখিদের ডাকাডাকিও বেড়েছে। বেড়েছ বলেই মনে হয়। আড়ালে থেকে ডেকে যাচ্ছে ওরা। হয়ত ডাকছে আপনাকেই। বসন্তের প্রস্তুতিটা দেখতে চান? ঘুরে আসুন সবুজের রাজ্য থেকে। ফুলেদের, পাখিদের রমনায় আগেভাগেই এসেছে বসন্ত। দেখে আসুন।
×