ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যর্থতার জন্য দায়ী বাফুফের অদূরদর্শিতা!

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

ব্যর্থতার জন্য দায়ী বাফুফের অদূরদর্শিতা!

জাহিদুল আলম জয় ॥ ধারাবাহিক ব্যর্থতার মাঝে ২০১৯ সালে দেশের ফুটবলে জেগে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। পুরো বছরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্রশংসনীয় পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। কিন্তু ডিসেম্বরে এসএ গেমস থেকে আবারও সঙ্গী হয়েছে ব্যর্থতা। যে প্রমাণ আরেকবার মিলেছে সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবলে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ এই আসরে নির্লজ্জ ব্যর্থতার স্বাক্ষর রেখেছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে কোনরকমে সেমিফাইনালের টিকেট পেলেও ফাইনালে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন জামাল, আশরাফুল, সাদ, মতিনরা। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজন হলেও সফলতার দেখা পায়নি কোচ জেমি ডে’র দল। মাঠে দর্শকখরাও ছিল দৃষ্টিকটু। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আসর হলেও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) তৎপরতা তেমন ছিল না। বাফুফের কর্তারা মানসম্পন্ন আয়োজনের চেয়ে তোষামোদীতেই ছিলেন ব্যস্ত। মাঠে দর্শক আনতে তেমন প্রচার-প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়নি। বাফুফের কর্তারা ফাইনাল ম্যাচে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি হিসেবে আনতে পেরেই যেন খুশি। অথচ আসল কাজে তারা শতভাগ ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করেন ক্রীড়ামোদীরা। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ব্যর্থ হওয়া ও দর্শখরার জন্য বাফুফের অদূরদর্শিতাকেই দুষছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞ ও সাবেকরা। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় বাফুফের অনেক অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্টরা। সেখানে ব্যর্থতার কারণে বর্তমান বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করা হয়। প্রকৃতিগতভাবে স্টার না জন্মালে সাফল্য পাওয়া কঠিন। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের ফুটবলে প্রকৃতি প্রদত্ত ফুটবল তারকা এখন তেমন চোখে পড়ে না। যে কারণে গোলের খেলা ফুটবলে ভালমানের স্ট্রাইকারের অভাবটা প্রকট। কিন্তু স্ট্রাইকার খুঁজে পেতে বাফুফের তেমন তৎপতরতাও নেই। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে মূলত গোল না করতে পারার ব্যর্থতার কারণেই সেমি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। বুরুন্ডির বিরুদ্ধে দলগত পারফর্মেন্স খুব বেশি মন্দ ছিল না বাংলার টাইগারদের। কিন্তু ডি বক্সে যেয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন সাদ, জামালরা। কিন্তু বুরুন্ডি হাফ চান্সকে কাজে লাগিয়ে ম্যাচ জিতে নেয়। আসর শেষে গোল করতে না পারার এই আক্ষেপই পোড়াচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে’ও, ‘আমরা অনেক সুযোগ পেয়েছি। গোল করে এগিয়ে যেতে পারলে দৃশ্যপটটা বদলে যেতে পারত। আমি হতাশ, আর কি বলব?’ মূল জায়গায় কাজ না করলে এমন হা-পিত্যেই বারবার করতে হবে। কেননা দেশে খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য ফুটবল ফেডারেশনের নিজস্ব কোন একাডেমি নেই। যেখানে বছরব্যাপী অনুশীলনের পর অনুশীলন করে তৈরি হবে গোল করার মতো খেলোয়াড়। আবার ক্লাবের জার্সিতেও ঘরোয়া লীগে স্ট্রাইকারদের খেলার সুযোগ কম। প্রতি মৌসুমেই লীগে বিদেশী ফরোয়ার্ডদের দাপট দেখা যায়। অনেকের মতে ২০১৯ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামে হওয়া শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবল দর্শকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। ১৯ থেকে ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে বসেছিল শহীদ শেখ কামালের নামে আয়েজিত আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলের তৃতীয় আসর। ফাইনাল মহারণের মধ্য দিয়ে সফলভাবে শেষ হয় আসর। দেশীয় ক্লাব চট্টগ্রাম আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও জমজমাট পারফর্মেন্স ছিল উল্লেখ করার মতো। শুধু মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস বাদে বাকি সাতটি দলই ছিল চৌকস। যে কারণে প্রায় প্রতিটি ম্যাচই হয় উপভোগ্য। ম্যাচগুলো দেখতে গ্যালারিতে দর্শক উপস্থিতিও ছিল প্রত্যাশামতো। বিশেষজ্ঞদের মতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবলের চেয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ছিল সফল। শেখ কামাল কাপের প্রতিটি দলই ছিল মানসম্পন্ন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে নামকাওয়াস্তে দল আনা হয়। কয়েকটি দলের নামই ঠিকমতো জানতেন না ফুটবলপ্রেমীরা। এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো সিশেলস ও বুরুন্ডি। এ কারণে অনেকেই বলেছেন, এসব দল না এনে দক্ষিণ এশিয়ার পরিচিত দেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজন করলেও দর্শক উপস্থিতি বেশি হতো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাফুফের একজন কর্মকর্তা বলেন, এবার যেসব দল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খেলেছে সেগুলো মানসম্পন্ন ছিল না। যেনতেনভাবে আসরটা করাই যেন লক্ষ্য ছিল বাফুফের।
×