ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যয় হবে ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা

মংলা বন্দর সচল করতে বিশেষ উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

  মংলা বন্দর সচল করতে বিশেষ উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মংলা বন্দর সচল করতে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য ‘মংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং’ নামের প্রকল্প হাতে নিচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে মংলা বন্দরের জেটিতে ৯.৫ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় গভীরতা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অনুমোদন পেলে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে।’ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১৩১ কিলোমিটার উজানে পশুর নদীর পূর্ব তীরে মংলা বন্দরের অবস্থান। বঙ্গোপসাগর থেকে চ্যানেলের প্রবেশ মুখ যা ‘আউটার বার’ এবং জয়মনিরগোল থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত যা ‘ইনার বার’ নামে পরিচিত। এই দুটি এলাকায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার ব্যাপী চ্যানেলে নাব্য ৫ থেকে ৬ মিটার। চ্যানেলের অবশিষ্ট অংশে গভীরতা ৯ মিটারের অধিক থাকায় শুধু আউটার বার ও ইনার বারে কম গভীরতার কারণে বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ৮.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজও আনা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশে যেসব কন্টেইনারবাহী জাহাজ আসে করে এসব জাহাজ পূর্ণ লোড অবস্থায় প্রায় ৯.৫ মিটার ড্রাফটের হয়ে থাকে। মংলা বন্দরের আউটার বার ও ইনার বারের নাব্য সঙ্কটের কারণে কন্টেইনারবাহী ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মংলা বন্দরে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে না। এতে মংলা বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনের খরচ ও সময় বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মংলা বন্দর ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য আউটার বারে ১১ কিলোমিটার এলাকায় ৮.৫০ মিটার সিডি গভীরতা ড্রেজিং করার জন্য মংলা বন্দর চ্যানেলের আউটার বারে ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ড্রেজিং শেষ হলে স্বাভাবিক জোয়ারে চ্যানেলের জয়মনিরগোল পর্যন্ত ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ নির্বিঘ্নে আসতে পারবে। এছাড়া জয়মনিরগোল থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার ব্যাপী ইনার বারে, আউটার বারের মতো ৮.৫০ মিটার সিডি গভীরতায় ড্রেজিং করা হলে মংলা বন্দরের জেটিতে স্বাভাবিক জোয়ারের সহায়তায় ৯.৫০ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ নির্বিঘ্নে হ্যান্ডল করা সম্ভব হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বোচ্চ ৯.৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডেল করা হচ্ছে। সেজন্য পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং করা হলে মংলা বন্দরকে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি কার্যকর বিকল্প বন্দরে পরিণত করা সম্ভব হবে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত সমীক্ষা অনুযায়ী মংলা বন্দরে ২০২৫ সালে ৮ লাখ ৭২ হাজার টিউজ কন্টেইনার ও ২০৫০ সালে ৪৫ লাখ ৩২ হাজার টিউজ কন্টেইনার এবং ৩০ হাজারেরও বেশি গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পর বার্ষিক ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা কাঁচামাল হিসেবে এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের কাঁচামাল মংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করতে হবে। ফলে ২০২১ সালের পর মংলা বন্দরের ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। মংলা বন্দরের বর্ধিত চাহিদা সুষ্ঠুভাবে মোকাবেলা করার জন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মংলা বন্দরের জেটিতে ৯.৫ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় গভীরতা পাওয়া হবে।’ এছাড়া বন্দরের বর্ধিত চাহিদা সুষ্ঠুভাবে মোকাবেলা করার জন্য মংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তিনি।
×