ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আসন্ন বাফুফে নির্বাচনে যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার আহ্বান

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

 আসন্ন বাফুফে নির্বাচনে যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার আহ্বান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচন-২০২০ সামনে রেখে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে স্বচ্ছ নেতৃত্ব সময়ের দাবি, কেমন নেতৃত্ব চাই শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা বিগত ১২ বছরে ফুটবল যে এক চুলও এগোয়নি সেই বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি বাফুফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের কর্মকা-ের সমালোচনা করেন। সভায় বক্তারা সালাউদ্দিনকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি, তাকে আগামীতে নির্বাচিত না করার জন্য কাউন্সিলরদের (ভোটার) প্রতি আহ্বান জানান। আগামী ২৮ এপ্রিল বাফুফের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্যে দিয়ে নিজের তৃতীয় মেয়াদ পূর্ণ হবে বাফুফের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত, সমালোচিত, ব্যর্থ সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের। ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে নতুন নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনে সালাউদ্দিন জোটকে রুখতে একাট্টা সাবেক খেলোয়াড়, সংগঠকরা। গোল টেবিলে বৈঠকে এমনটাই জানান তারা। প্রারম্ভে বক্তব্যে সাবেক ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু বলেন, কাউন্সিলরা পয়সা খেয়ে ভোট বিক্রি করে দেয়। সালাউদ্দিন একজন বাজে লোক। বাফুফের টাকায় তার সংসার চলে। প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে নির্বাচনে লড়তে আসে। প্রধানমন্ত্রী কারোর একার নয়। তিনি আমাদেরও প্রধানমন্ত্রী। সালাউদ্দিন একটা ফুটবল সন্ত্রাস। বর্তমান সরকার ধর্মীয় মৌলবাদ, সন্ত্রাস রুখেছে। সালাউদ্দিনকেও আমাদের রুখতে হবে। ১২ বছরে ১২ জন ভালমানের ফুটবলার তৈরি করতে পারেননি কাজী সালাউদ্দিন, মন্তব্য সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলামের। এখানে উপস্থিত কেউ যদি বর্তমানে জাতীয় দলে খেলছে এমন ১২ জন প্লেয়ারের নাম বলতে পারে তাহলে আমি চুড়ি পরে এখান থেকে চলে যাব। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন আসলাম। সালাউদ্দিনের কর্মকা-ের সমালোচনার পাশাপাশি তাকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক বলেও অ্যাখ্যায়িত করেন। বাফুফে নির্বাচনে যে ১৩৪ কাউন্সিলর আছেন তাদের আগামী নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যক্তিকে বেছে নেয়ার অনুরোধ করেন আরেক সাবেক ফুটবলার আবদুল গাফফার। সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের পারফর্মেন্স নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাবেক ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু। টুর্নামেন্টে উদ্বোধনী থেকে সমাপনী অনুষ্ঠানে তাদের মতো রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের বাফুফে সভাপতি দাওয়াত দেননি বলে সমালোচনা করেন এবং সাবেক খেলোয়াড়দের যে সালাউদ্দিন সম্মান দিচ্ছেন না এ জন্য আগামী নির্বাচনে তাকে খেসারত দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন চুন্নু। তিনি বলেন, ১২ বছরে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল শেষ করে দিয়েছে সালাউদ্দিন। আমাদের হাতে তিন মাস সময় আছে। নির্বাচন সামনে রেখে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে। বর্তমান কমিটির অনেকেই বলেন আমাদের কাজ দেয়া হয় না। সালাউদ্দিন জনপ্রিয় ফুটবলার ছিলেন। সেই জনপ্রিয়তা দিয়ে ফুটবলকে অনেকদূর নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী ব্যর্থতার দায় শুধু একা সালাউদ্দিনকে দিতে রাজি নন। কারণ ২১ সদস্যবিশিষ্ট বাফুফের কমিটিতে দুটি পদে মাত্র দু’জন ব্যক্তি আসীন। একটিতে সভাপতি পদে কাজী সালাউদ্দিন; দ্বিতীয়টি সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে আছেন সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি। ব্যর্থতার দায় সালাম মুর্শেদীর ঘাড়েও বর্তায়। তিনি যদি সভাপতিকে ঠিকমতো পরিচালনা করতেন তাহলে ফুটবলের এই অবস্থা হতো না। সাবেক ফুটবলার এবং জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু সালাউদ্দিনের সমালোচনার পাশাপাশি নিজেদের দিকেও অঙ্গুল দেখান। গোল টেবিল বৈঠকে সাবেক ফুটবলার, সংগঠকদের বরং বাফুফে নির্বাচনে যারা ভোট দেবেন সেই সমস্ত কাউন্সিলরদের ডেকে এমন একটি সভা করার পরামর্শ টিপুর। সভায় উপস্থিত স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু বরাবরের মতো সালাউদ্দিনকে সভাপতির পদ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে গেল ১২ বছরে তার বিভিন্ন কর্মকা-ের সমালোচনাও করেন। যমুনা টিভির সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার মানজুর মোর্শেদও সঞ্চালনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাফুফের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি বাদল রায়, বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান বাবুল, সাবেক ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলু, ওয়াহিদুজ্জামান পিন্টু, কায়সার হামিদ, খুলনা বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ সাইফুল, ক্রীড়া সংগঠক আলিমুজ্জামান আলম, ক্রীড়া সংগঠক আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স, ক্রীড়া সংগঠক শাকিল মাহমুদ চৌধুরী এবং প্রবীণ সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। উল্লেখ্য, আলোচনা সভায় সাবেক ফুটবলার, ক্লাব সংগঠক, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন পত্রিকার সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার মোজাম্মেল হক চঞ্চল।
×