ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান-বাংলাদেশ সিরিজ;###;টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ পাকিস্তানের, হোয়াইটওয়াশের শঙ্কায় মাহমুদুল্লাহরা

দ্বিতীয় টি২০তে আরও বেহাল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:৩৯, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

দ্বিতীয় টি২০তে আরও বেহাল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম টি২০তে যে বেহাল দশা হয়েছিল, দ্বিতীয় টি২০তে আরও খারাপ অবস্থা হয়েছে বাংলাদেশের। ব্যাটসম্যানরা কয়েকদিন আগেই টি২০ লীগ (বিপিএল) খেলে পাকিস্তান সফরে টি২০ সিরিজ খেলতে গেছেন। অথচ টি২০ ব্যাটিং যেন ভুলেই গেছেন। পাকিস্তান পেসার আর স্পিনাররা এমনই চাপে রাখেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের, তাতে ব্যাটিংয়ে ধস নামে। এক তামিম (৬৫) ছাড়া কেউই ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। এরপর ওপেনার বাবর আজম (৬৬*) ও মোহাম্মদ হাফিজ (৬৭*) মিলে এতটাই স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করেন, দ্বিতীয় টি২০তে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হার হয় বাংলাদেশের। ১৩৭ রানের টার্গেট পাকিস্তানের সামনে ছুড়ে দিতে পারে বাংলাদেশ। অনায়াসেই ২০ বল বাকি থাকতে ১৩৭ রান করে জিতে যায় পাকিস্তান। তাতে করে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হার হয়ে গেছে বাংলাদেশের। সিরিজের প্রথম টি২০তে মন্থর ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে তার খেসারত দিতে হয়েছে। এরপর বোলাররা ভাল বোলিং করলেও ফিল্ডিং এতটাই খারাপ হয় যে তাতে হারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টি২০তে শনিবার লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামেও মন্থর ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীই দেখার মিলে। প্রথম টি২০’র চেয়েও শুরুতে ধীরে ব্যাটিং চলতে থাকে। টস জিতে আগে এবারও ব্যাটিং নেয়ার লক্ষ্যই ছিল প্রথম টি২০’র ভুলগুলো শুধরে নিয়ে খেলা। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা সেই কাজটি করতে পারলেন কোথায়। তামিম ইকবাল যদি নিজেকে মেলে ধরতে না পারতেন তাহলে স্কোরবোর্ড আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়তো। প্রথম টি২০তে তাও উদ্বোধনী জুটি ৭১ রান পর্যন্ত গিয়েছিল। এবার তো দলের ৫ রানেই নাঈম গোল্ডেন ডাক মারেন। মোহাম্মদ মিঠুনকে একাদশের বাইরে রাখা হয়। স্পিনে ভাল এবং ব্যাটিংটা দুর্দান্ত করেন এমন একজনকে একাদশে নেয়া হয়। তিনি বিপিএলে আলো ছড়ানো মেহেদী হাসান। ২০১৮ সালে দলের হয়ে একটি টি২০ খেলা এ স্পিন অলরাউন্ডার আবার দলে ফিরেছেন। একাদশেও সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু কাজে আর লাগাতে পারলেন না। একটি ছক্কা হাঁকিয়ে আশা জাগান। কিন্তু পরক্ষণেই সাজঘরে ফিরেন। একদিকে স্পিনে শাদাব খান, শোয়েব মালিকের ঘূর্ণি জাল। আরেকদিকে শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হাসনাইন আর হারিস রউফের গতি আর হাল্কা উঁচুতে উঠে আসা বলগুলো ভুগিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের। তামিম শুরুতে একই তালে ব্যাটিং করতে থাকেন। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু তাকে যোগ্য সঙ্গ কেউ দিতে পারছিলেন না। লিটন কুমার দাসই যেমন ব্যাট হাতে নামার পর নিজের ১৪ বল পর্যন্ত স্থায়ী হন। ৪১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারাতেও পড়ে যায় বাংলাদেশ। আফিফ হোসেন ধ্রুব ব্যাটিংয়ে আসার পর রানের গতিতে প্রাণ ফিরে আসে। তিনি যে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। তামিমও নিজের মন্থর ব্যাটিং থেকে বের হয়ে আসেন। ছক্কা হাঁকান। তামিম-আফিফের ব্যাটে খানিক প্রতিরোধও গড়ে বাংলাদেশ। দলের ৮৪ রানের সময় ৪৪ রানে থাকা তামিম রিভিউ নিয়ে একবার এলবিডব্লিউ হওয়া থেকে বাঁচেন। আম্পায়ার আউট দেন। কিন্তু তামিম সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন। নিজের ১৬ রানের সময়ও তামিম ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন। তবে বাঁচতে পারেননি আফিফ। হাসনাইনের একটু উঠে আসা বলটি শট করেন। থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ আউট হয়ে যান আফিফ (২০ বলে ২১ রান)। দলের ৮৬ রানে গিয়ে আউট হন। তামিম ও আফিফের জুটি থেকে ৪৫ রান আসে। ১৫ ওভারে ৮৮ রান করতে পারে বাংলাদেশ। কি যে করুণ দশা ব্যাটসম্যানদের তাতে বোঝাই যাচ্ছে। তামিম উজ্জ্বলতা ছড়ান। ৪৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু আর ১৫ রান করতেই আউট হয়ে যান। তখন কোন গতিও ছিল না। মারমুখী হতেই হবে। অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে যে কোন সমর্থন মিলেনি। তাই ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে গিয়েই আউট হন। তবে আউটটি হন প্রথম টি২০’র মতো রান আউট। দল ১৬তম ওভারে গিয়ে ১০০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে। শাদাব খানের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে হাফ সেঞ্চুরি করার পর টানা দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকান তামিম। দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। কিন্তু দলের স্কোরবোর্ডে আর ১৭ রান যোগ হতেই তামিম আউট হন। এর কিছুক্ষণ পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও (১২) আউট হয়ে যান। শেষে গিয়ে সৌম্য সরকার (৫*) ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব (৮*) মিলে দলকে ১৩৬ রানে নিয়ে যান। ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে এই রান করে বাংলাদেশ। প্রথম টি২০তে তাও ১৪১ রান করা গিয়েছিল। দ্বিতীয় টি২০তে তো আরও ৫ রান কম করা গেছে। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে সর্বনিম্ন স্কোরটি বাংলাদেশই প্রথম টি২০তে করেছিল। দ্বিতীয় টি২০তে স্কোর আরও কমল। তামিম যদি হাল না ধরতেন তাহলে এই রানও হতো না বাংলাদেশের। প্রথম টি২০তে বাংলাদেশের বোলিংটা দারুণ হয়েছিল। এবার বোলিংটাও আশানুরূপ হলো না। শুরুতে এহসান আলিকে আউট করা গেলেও আর কোন উইকেট ফেলা যায়নি। অধিনায়ক, ওপেনার বাবর আজম (৪৪ বলে অপরাজিত ৬৬ রান) ও মোহাম্মদ হাফিজ (৪৯ বলে অপরাজিত ৬৭ রান) মিলে দ্বিতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৩১ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় উইকেটে টি২০তে সেরা জুটি গড়ে পাকিস্তান। ১ উইকেট হারিয়ে ১৬.৪ ওভারে ১৩৭ রান করে সহজেই ম্যাচ জিতে পাকিস্তান। বেহাল দশার বৃত্তেই আটকে থাকে বাংলাদেশ।
×