ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘স্মার্ট সিটি চট্টগ্রাম’ গোলটেবিল আলোচনায় এলজিআরডি মন্ত্রী

শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বেই দেশের র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ

প্রকাশিত: ১১:২৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বেই দেশের র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের র‌্যাডিক্যাল চেঞ্জ এনেছেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ যে অবস্থানে এসেছে তা তাঁর যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই হয়েছে। শনিবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘স্মার্ট সিটি চট্টগ্রাম’ শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথাগুলো বলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। এতে নগর উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন অভিমত তুলে ধরেন আলোচকগণ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী স্মার্ট সিটির ধারণা প্রসঙ্গে বলেন, স্মার্ট হয় সব মিলিয়ে। শরীরের একটি অংশকে যেমন আলাদাভাবে চিকিৎসা দিয়ে শক্তিশালী করা যায় না, তেমনিভাবে নগরীরও সকল উপাদানকে স্মার্ট করা গেলে তবেই হবে স্মার্ট সিটি। এর জন্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি দায়িত্বশীলতার দিক থেকে নাগরিকদেরও স্মার্ট হতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের গুরুত্ব আগেও ছিল, আজীবন থাকবে। এ উপযুক্ততা ধরে রাখতে হবে। এ গুরুত্ব ধরে রাখতে স্টাডি করতে হবে। বিশেষ করে ভবিষ্যতের চট্টগ্রাম কেমন হবে, এর জনসংখ্যা কেমন হবে, কেমন সেবা লাগবে তা ঠিক করে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বক্তব্যে তিনি নগর উন্নয়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যান ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, সারাবিশে^ সড়কের পাশে ইউটিলিটি লাইনের জন্য আলাদা জায়গা থাকে। কিন্তু আমাদের নেই। সে জন্য বিদ্যুত, ওয়াসা, টেলিফোনসহ বিভিন্ন সংস্থাকে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চালাতে হয়। তবে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার জন্য তিনি বিভিন্ন দাতা সংস্থার অনুদানে পরিচালিত উন্নয়ন কাজের বিষয়টিও অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন। বিদেশী সংস্থাগুলো একেকটি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে সময় বেঁধে দিয়ে থাকে। সব প্রকল্প একসঙ্গে শুরু বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না নির্ধারিত সময়সীমা থাকে বিধায়। তিনি বলেন, স্মার্ট সিটি বা উন্নয়নের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনার বিকল্প নেই। প্রসঙ্গক্রমে তিনি মীরসরাইয়ে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের প্রসঙ্গে এনে বলেন, সেখানে সমন্বিত প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছে। ওয়াসার পানি যাবে, বর্জ্য শোধনাগারও থাকছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর বর্তমান ও অতীত টেনে তিনি বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যখন মেয়র ছিলেন তখন তিনি শহরের ফুটপাথ, সড়ক, অবকাঠামো গড়ায় সফল হয়েছিলেন। বর্তমানেও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট কানেক্টিং সড়কের কাজ চার বছরেও শেষ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটা মেনে নেয়ার মতো নয়। বক্তব্যে তিনি প্রতিটি প্রকল্পই জনমুখী ও জনসম্পৃক্ত হওয়া উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। গোল টেবিল আলোচনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বা সংস্থা দুটির প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকায় প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি জানি না তাদের আমন্ত্রণ করা হয়নি, নাকি তারা আসেননি। সেবা সংস্থার প্রতিনিধি না থাকলে কার সঙ্গে কথা বলব। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে আরও আলোচনা করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য এমএ লতিফ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রফিকুল আলম, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বাহাউদ্দিন, স্থপতি ইকবাল হাবিব, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, প্রকৌশলী আলী আশরাফ, শিল্পোদ্যোক্তা আমিরুল হক চৌধুরী এবং নগর উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সমন্বয়কে একটি স্থায়ী আইনী কাঠামোয় আনলে সুফল পাওয়া যাবে। অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, স্মার্ট সিটির জন্য উন্নয়নের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের মতামত ও সুপারিশ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। সংসদ সদস্য এমএ লতিফ চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়নে কর্ণফুলী নদী ও বন্দরকেন্দ্রিক কর্মকা-ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম পোর্ট সিটি, বন্দর সচল রাখতে নদীর সুরক্ষা প্রয়োজন এবং বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহে সড়কগুলোর যথাযথ উন্নয়ন দরকার। বক্তব্যে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হয়ে যাচ্ছে। অথচ, পোর্ট কানেক্টিং সড়ক চার বছরেও শেষ হচ্ছে না। একইসঙ্গে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমরা যারা চট্টগ্রাম শহর থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তাদের কারোরই উন্নয়ন পরিকল্পনায় মতামত প্রদানের সুযোগ নেই। তেমন কোন প্লাটফর্মও নেই। উন্নয়নের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সকল প্রকল্পকে জনসম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত চট্টগ্রাম মহানগরের বর্তমান চিত্রে অনেকটা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমার মনে হয় চট্টগ্রাম আগে স্মার্ট সিটি ছিল। এখন বিমানবন্দর থেকে শহরে প্রবেশ করতে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। শুধু ফ্লাইওভারেই উন্নয়ন নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী ও নারীদের জন্য কেমন সুবিধা রাখছি, ফুটপাথ পথচারী হাঁটার জন্য উন্মুক্ত আছে কিনা, যানবাহনে শৃঙ্খলা আছে কিনা সব মিলিয়ে হয় স্মার্ট সিটি। প্রসঙ্গক্রমে তিনি ভুটানের রাজধানী থিম্পু ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত রুয়ান্ডার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, থিম্পুতে গত দশ বছরে কোন ক্রাইম হয়নি। ওই দুই শহরে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরেই জানিয়ে দেয়া হয় কোন প্লাস্টিকজাত দ্রব্য নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। ট্রাফিক আইন অত্যন্ত কড়া, যা মেনে চলতে হয়। সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি এবং ইনকিলাব সম্পাদক বাহাউদ্দিনও চট্টগ্রামের উন্নয়নে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের ওপর জোর দেন। স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, যে কোন প্রকল্প পরিবেশবান্ধব ও এর অর্থনৈতিক যুক্তিকতা রয়েছে কিনা তা আগে ভাবা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত গণপরিবহন নেই, এক্ষেত্রে ফ্লাইওভারের বন্যা আহম্মক শহরের কাজ। ফ্লাইওভারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরকে হত্যা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এত ফ্লাইওভার কার জন্য। হাজার হাজার কোটি টাকা ঢালা হচ্ছে উন্নয়ন কাজে। কিন্তু সে উন্নয়নের যদি জনসম্পৃক্ত না হয় তাহলে কোন কাজে আসবে না। এত ফ্লাইওভার প্রয়োজন কেন, সবাই কি প্রাইভেট কারে চড়ে? যখন আপনি নিজে স্মার্ট হবেন, তখন সকল প্রকল্প স্মার্ট হবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্মার্ট হওয়ার জন্য কোন প্রকল্প নেই। ব্রিফকেসনির্ভর ও প্রকল্পনির্ভর উন্নয়নে দেশ স্মার্ট হয় না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
×