ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের গণতন্ত্র বাঁচাতে পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

ভারতের গণতন্ত্র বাঁচাতে পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই

জানুয়ারির এক শীতের সন্ধায় মুখোশপরা একদল যুবক লাঠি ও রড নিয়ে ভারতের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি দিল্লীর জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সুসজ্জিত ও সুরক্ষিত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা হোস্টেলের আবাসন চার্জ বৃদ্ধির বিষয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনারত অনুষদ সদস্য এবং শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালাল। যা ভারতীয় গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি হুমকি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আলজাজিরা। এরপর তারা ছাত্রাবাসে ভাংচুর চালায়। তাদের নিশানায় ছিল মূলত দলিত, মুসলিম ও কাশ্মীরী ছাত্রছাত্রীরা। হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় জেএনইউ শিক্ষার্থীরা শাসক দল বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) দিকে অভিযোগরে আঙ্গুল তোলে। লক্ষণীয় যে এ সময় পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরেই অবস্থান করছিল। অথচ তারা আক্রান্তদের সাহায্যের ডাকে সাড়া দেয়নি। তারা অজুহাত দেখায় যে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের জন্য ভিসির অনুমতির অপেক্ষা করছিল। ওই হামলায় ৩০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ছিলেন জেএনইউর ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান ঐশি ঘোষ। তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এ ঘটনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যামে ব্যাপক প্রচার পায়। পীড়াদায়ক সম্পাদকীয়ও লেখা হয়। তাবত বিশ্বের শিক্ষাবিদরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ওই ধরনের সহিংস হামলা আজ ভারতে নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেএনইউর ঘটনার আগে দুটি ঐতিহাসিক মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় দিল্লীর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া এবং উত্তর প্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় আক্রান্ত হয়েছে। তবে তা দাঙ্গাকারীদের দ্বারা নয়, বরং স্বয়ং পুলিশের দ্বারা। তারা বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ব্যাপক মারধর করে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে যেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বৈষম্য ও সহিংসতার জন্য বেছে নেয়া হচ্ছে তখন জেএনইউকে টার্গেট করার বিষয়টি কিছু ভারতীয় পর্যবেক্ষককে হতবাক করেছে। যা ঘটেছে তাতে বুঝতে হবে নতুন নতুন দ্বন্দ্বের দুয়ার খুলছে যা খুব দ্রুত একটি আদর্শিক গৃহযুদ্ধ হয়ে উঠছে। এটি এমন একটি ভারত যেখানে কেবল সংখ্যালঘু নয়, যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শাস্তিমূলক সহিংসতার হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। সরাসরি রাষ্ট্র অথবা রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট দাঙ্গাকারীদের কাছ থেকে। ঐশি ঘোষসহ জেএনইউয়ে হামলায় আহতদের বিরুদ্ধেই আবার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অথচ হামলার প্রস্তুতির ছবি ক্যামেরায় ধরা পড়ার পরও ওই উগ্র ডানপন্থী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এই আদর্শিক গৃহযুদ্ধ কয়েক বছর ধরেই ধীরে দানা বেঁধেছে। নতুন নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে এটি প্রকাশ্যে এসেছে। এই আইনটিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার হাই কমিশনারের পক্ষ থেকে প্রকৃতিগতভাবেই মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এসব ঘটনা স্পষ্টভাবে লক্ষণ প্রকাশ করছে যে ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিত ভাঙতে আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরাই একটি রাজনৈতিক বিভক্তির অংশ।
×