ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত মৃত ৪১

চীনাদের বন্যপ্রাণী খাওয়ার আসক্তিকে দুষল পশ্চিমারা

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

চীনাদের বন্যপ্রাণী খাওয়ার আসক্তিকে দুষল পশ্চিমারা

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের হুয়ানান সিফুড মার্কেটে প্রচুর মাছ ও শেলফিস বেচাকেনা হয়। এ বাজারেরই কোথাও কোথাও বিক্রি হয় বিভার, কর্কুপাইন এবং সাপ। এই বাজার অদ্ভুত ও জীবন্ত প্রাণী বেচাকেনার জন্য সুপরিচিত বলে জানিয়েছেন একজন শিক্ষক। তিনি ওই বাজার থেকে কয়েক শ’ ফিট দূরেই পাঁচ বছর ধরে আছেন। তিনি বলেন, কেউই মোটেই বিস্মিত হয়নি যখন এটা ছড়াল যে, করোনা ভাইরাস অদ্ভুত সব প্রাণী থেকে আসতে পারে। এদিকে অনেক পশ্চিমা গণমাধ্যম চীনাদের বন্যপ্রাণী খাওয়ার প্রতি আসক্তিকে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কারণ হিসেবে দায়ী করেছে। টাইম। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে, হিউম্যান প্যাথোনেজের মতো ৭০ শতাংশ নতুন নিউমোনিয়া জাতীয় রোগ প্রাণী থেকে সংক্রমিত হয়েছে। তবে তারা এখনও গবেষণা করছেন প্রকৃতপক্ষে কোন প্রাণী করোনা ভাইরাসের উৎস হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে ভাইরাসটি সার্স ও মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়া মার্স একই গোত্রীয়। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ১২৮৭ জনেরও বেশি মানুষের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চীনের ১৩টি শহরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। গবেষকরা চীনাদের বণ্যপ্রাণী খাওয়ার আসক্তির বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন, যেটা কি না এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। ২০০২-২০০৩ সালের সারস মহামারীটি সিভেট বিড়াল থেকে ছড়িয়েছিল বলে সবশেষ তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল। দক্ষিণ গোয়াংদু প্রদেশে একটি আদ্র বাজারে একই কায়দায় ওই বিড়ালকে বিক্রি করা হয়েছিল। কিছু বিদেশী ট্যাবলয়েড অসমর্থিত দাবির ভিত্তিতে প্রচার করছে যে, বাদুড়ের স্যুপ থেকে শুরু করে ইঁদুর এবং জীবিত নেকড়ের ছানা খাওয়া সবকিছু থেকে করোনা ভাইরাস উদ্ভব হয়েছে। চীনে ছোট ছোট সুপার মার্কেটগুলোতে সামুদ্রিক প্রাণী বিক্রি হয়। দুষ্প্রাপ্য ও বেশি দামের কারণে চীনে বন্যপ্রাণী খাওয়া বিলাসিতা হিসেবে বিবেচিত হয়। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত কিছু চিকিৎসক মনে করেন, অদ্ভুত প্রাণী খেলে কিছু রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যেতে পারে এবং পুরুষের শক্তি বাড়তে পারে। কাউন্সিল ফর ফরেন রিলেশনসের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইয়াঞ্জ হং বলেন, এটা চীনের সংস্কৃতির অংশ। লোকজন জীবিত যে কোন কিছু খেতে ভালবাসে। প্রাণীরা রোগমুক্ত কি না তা নিশ্চিত হওয়া কঠিন। তাই তা খাওয়া বেশ সমস্যাযুক্ত। এই কারণে আফ্রিকায় লোকজনকে বন্যপ্রাণী খাওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে। এইডসসহ অসংখ্য রোগ ছড়ানোয় বন্যপ্রাণী খাওয়ার সংযোগ রয়েছে। তবে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এ্যাডাম কামরাদ-স্কট বলছেন এভাবে চিন্তা করা প্রায়ই ত্রুটিপূর্ণ। প্রথমে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন গিনির একটি গ্রামে বাদুড়ের মাংস খাওয়া থেকে ইবোলা ভাইরাসের সূত্রপাত হয়েছে। তবে এখন বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে দুই বছরের একটি মেয়ে বাচ্চা একটি পড়ে যাওয়া বাদুর মুখে পুরে নেয়ার মাধ্যমেই ইবোলা ছড়িয়েছে। অপরদিকে প্রাথমিকভাবে সংস্পর্শের মাধ্যমে জীবিত উট থেকে মানুষ মার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল, উটের মাংস খেয়ে নয়।
×