ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘নগরবন্ধু’ হোক নৌকারোহী আতিক-তাপস

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

‘নগরবন্ধু’ হোক নৌকারোহী আতিক-তাপস

হাড়ভাঙ্গা শীতে একটু উষ্ণতা খুঁজছে দেশবাসী। তাতে শারীরিক ও মানসিক রসদ যোগাচ্ছে আসন্ন ১ ফেব্রুয়ারির ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। চাঙ্গা হচ্ছে শরীর, ফুরফুরে হচ্ছে মন। দুই সিটিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে নগরবন্ধু ‘মেয়র’ পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত দুই প্রার্থী। ঢাকা উত্তরে আতিকুল ইসলাম আর ঢাকা দক্ষিণে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছেন বিএনপি (ও গা-লুকানো জামায়াত) প্রার্থী দুজন। (নাম নিচ্ছি না, কারণ নাম উল্লেখ করাটাও একটা প্রচার।) শতাধিক ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে লড়াইয়ে নেমেছেন বিভিন্ন প্রতীকের প্রার্থী। পুরুষ-নারী কেউ পিছিয়ে নেই এ লড়াইয়ে। তবে এদের মধ্যেও আছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির (পোশাকধারী জামায়াত) প্রার্থীরা। হাজার হাজার সমর্থকের গান-স্লোগান-মাইকের চিৎকারে ঢাকার জনজীবনে এখন প্রত্যাশিত শব্দোৎপাত। মিছিল-মিটিংয়ে রাস্তা বন্ধ হচ্ছে অনেকখানে, কিন্তু জনগণ বিরক্তিভরা আনন্দে মেনে নিচ্ছে এতকিছু আর কয়েকটা দিনের জন্য। ঠাণ্ডার মধ্যে ফিজিক্যাল ফিটনেসটা একটু বাড়িয়ে নিচ্ছে গোটা ঢাকার অধিবাসী। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সব প্রার্থী কিংবা প্রার্থিনী। উত্তর ঢাকায় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আতিকুল ইসলাম ও সঙ্গীরা, দক্ষিণ ঢাকায় ব্যারিস্টার তাপস আর সঙ্গীরা। তাদের বিরুদ্ধপক্ষের প্রার্থী কিংবা প্রার্থিনীরাও দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। সবাই বলছেন ঢাকা নগর হবে আরও উন্নত, এডিস মশামুক্ত, যানজটমুক্ত, গাড়ি-ঘোড়ার হর্নমুক্ত, পরিবেশ দূষণমুক্ত, জনবান্ধব এবং আরও কত কী। কারও প্রতিশ্রুতি কিন্তু এর বাইরে নয়। এর বাইরে প্রকৃতপক্ষে প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনও না তারা। কারণ নির্বাচিতদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন দ্বারা নির্ধারিত রয়েছে। যারা জিতবেন তাদের হাতেই হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার। তারাই ব্যয় করবেন ঢাকার জন্য। তো সবাই যদি একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে চান আর একই প্রতিশ্রুতি দেন, তাহলে জনগণ ও ভোটাররা এদের মধ্য থেকে কাউকে বেছে নেবেন কেন। নগরবন্ধু পদে আতিক-তাপসকে আর ওয়ার্ডরক্ষক হিসেবে তাদের সহযোগীদের পছন্দ করবেন কেন, আর কেনইবা বিরুদ্ধপক্ষকে বয়কট করবেন। এর উত্তর প্রধানত একটি এবং সঙ্গত আরেকটি। বলতে দ্বিধা নেই, কেউ অস্বীকারও করতে পারবেন না যে, আতিক-তাপসের প্রতীক নৌকা, মানে তারা বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার মনোনীত। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, সিনা-ফোলানো শেখ মুজিবের মতো শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর। আর বিপরীত দিকে যারা ডিগবাজি খেলা দেখিয়ে জনগণকে ভেল্কি দেখাতে চান তারা আর কেউ নন, সুযোগ পেয়ে সেজে-বসা মুক্তিযোদ্ধা এক সেনা অফিসারের আধুনিক সেনা, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যার ইশারাকারী একজন জেনারেলের আধুনিক সংস্করণ, বাঙালী জাতীয়তাবাদকে সংবিধান থেকে মুছে ফেলার সমর্থকগোষ্ঠী, রাইফেলের বেয়োনেট দেখিয়ে ক্ষমতা দখলকারী এবং গণতন্ত্ররোধী, যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী বিএনপি ও জামায়াতের ভক্তকুল। তারা আর কেউ নন, তারা জনহিতকর চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা মেরে খাওয়া খালেদা জিয়ার অন্ধ সমর্থক এবং ধুরন্ধর তারুণ্যের অহঙ্কার পলাতক আসামি তারেক জিয়ার হাওয়া ভবনের হাওয়ানির্ভর আত্মা। বোঝাই যাচ্ছে কারা ঢাকা সিটির অফিসে বসলে কী করবেন। আতিক-তাপসকে নির্বাচিত করার দ্বিতীয় ও সঙ্গত কারণও রয়েছে। সন্দেহ নেই, উত্তর দিকের নয় মাসের মেয়র হিসেবে অভিজ্ঞ ও জনগণের বিশ্বাস অর্জনকারী মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম আর দক্ষিণ দিকে সাধারণ মানুষের প্রিয়মুখ, সদাচার, যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির কনিষ্ঠ পুত্র তরুণ নেতা ব্যারিস্টার তাপস ঢাকা নগরীর বাহ্যিক ও মানসিক গঠন তৈরি করতে চাইবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনালোকে, মুজিববর্ষের শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুকে তথা বাঙালী জাতীয়তাবাদকে নতুন প্রজন্মের নিকট করে তুলবেন আরও বেশি বোধগম্য, আরও বেশি মানবপ্রিয়, আরও জনবান্ধব। কিন্তু যথেষ্ট সন্দেহ আছে বিপরীত ব্লকের খালেদা-তারেকের আশীর্বাদপুষ্টদের পরিকল্পনা নিয়ে। যেহেতু তারা এরকম আশীর্বাদপুষ্ট সেহেতু লক্ষ কোটি টাকা হাতে পেলে খালেদা-তারেককে দুর্নীতিতে ছাপিয়ে তারা বলতে দ্বিধা করবেন না, দেখুন মাতা, দেখুন ভ্রাতা, আপনাদের আশীর্বাদে আপনাদের চেয়ে মোরা কম কিসে! প্রমাণস্বরূপ তারা ঘোষণাই দিয়েছেন, এ নির্বাচনে তারা জিততে চান দুর্নীতির দায়ে আদালত কর্তৃক অপরাধী সাব্যস্ত কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে বেআইনীভাবে কারাগার থেকে বের করার উদ্দেশ্যে। ভেতর ভেতর পলাতক আসামি তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনাটাও যে তাদের উদ্দেশ্য নয় তা বলা যায় না। এই ২৩ জানুয়ারি জার্মানির বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (যার বাংলাদেশ শাখা হলো টিআইবি) একটি সুখবর দিয়েছে। বিগত বিএনপি-জামায়াতের জোট আমলে যে বাংলাদেশ গোটা পৃথিবীর মধ্যে (সম্ভবত ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে) ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত টানা পাঁচবার দুর্নীতি নামক অপরাধকর্মে শীর্ষে ছিল, যাকে সেখান থেকে টেনে আনতে তথা দুর্নীতির মাত্রা কমাতে আজীবন জীবনবাজি রেখে নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য ২০১৯-এ তিনি অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন, সেই বাংলাদেশ এবার মুজিববর্ষের শুরুতে দুর্নীতির সূচকে ইতিবাচক স্থানে যেতে পেরেছে। ১৩তম থেকে এবার বাংলাদেশ ১৪তম। অর্থাৎ দুর্নীতি কমতে শুরু করেছে দেশব্যাপী। এই ধারা যত বেশি অব্যাহত থাকবে তত বেশি জনগণ সেবা পাবেন, তত বেশি জনগণের টাকা জনগণের কল্যাণে ব্যয় হবে, তত কম টাকা তহবিল কাটারদের পকেটে যাবে। এডিস মশার ডেঙ্গু কমবে, রাস্তাঘাট উন্নত হবে, মেট্রোরেল চালু হবে, যানজট নামক দুর্বিষহ যন্ত্রণা কমবে, পরিবেশ ও শব্দদূষণ কমবে, সর্বোপরি মুজিববর্ষে যে কোন দেশ থেকে ঢাকা শহরে কোন অতিথি এলে অনুভব করতে পারবেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রে যে বঙ্গবন্ধুর মহান কীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ মুজিববর্ষ পালিত হচ্ছে এই সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রিয় ক্ষেত্র ঢাকা। কিন্তু যদি এর ব্যত্যয় হয়, যদি জনগণ ভেল্কিবাজদের ভেল্কিতে ভুলে পথ হারায়, ভুল বাক্সে ভোট দেয় তাহলে নিশ্চিত ঘটবে উল্টো ঘটনা। অর্থাৎ মেট্রোরেল বন্ধ হবে, পরিবেশ ও শব্দদূষণ কমবে না, ডেঙ্গু যাবে বেড়ে আর সর্বোপরি বিদেশী অতিথি এলে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি তেমনভাবে অনুভব করতে পারবেন না। মনে মনে ভাববেন, সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! এরাই বুঝি সেই জাতি যারা মীর জাফর আর মোশতাকের বংশধর! অতএব সাবধান হতে হবে আমাদের। একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাদীপ্ত ঢাকা পেতে, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে রাখতে, জননেত্রী শেখ হাসিনার সততার মুকুট সযতেœ মাথায় রাখতে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে আমাদের প্রয়োজন গণতন্ত্র ও মানবতার প্রতীক নৌকায় ভোট দেয়া। আতিক-তাপসকে নৌকায় ভোট দিয়ে নগরবন্ধু হিসেবে তৈরি করাটা শুধু আমাদের নাগরিক অধিকারই নয়, নাগরিক কর্তব্যও বটে। লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ ও সাবেক ডিন, আইন অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
×