ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশী-বিদেশী ১৭৯ চলচ্চিত্র, সবই শিশু-কিশোরদের

প্রকাশিত: ১০:০৩, ২৫ জানুয়ারি ২০২০

দেশী-বিদেশী ১৭৯ চলচ্চিত্র, সবই  শিশু-কিশোরদের

মোরসালিন মিজান ॥ শিশু-কিশোরদের জন্য একটি চলচ্চিত্র উৎসব। কেবলই শিশু-কিশোরদের। মূল ধারার সিনেমাই যখন ধুঁকছে, সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে যখন ঠিক তখন পর্দা উঠল আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের। এর আগে ‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামীর স্বপ্ন’ স্লোগানে আরও বারোটি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় শুক্রবার থেকে শুরু হলো ত্রয়োদশ আসর। প্রতি বছরের মতোই উৎসবের আয়োজক হিসেবে আছে চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ। বিকেলে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দেশের বরেণ্য শিল্পী ও উৎসবের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান মুস্তাফা মনোয়ার। উপস্থিত ছিলেন শিশুদের অত্যন্ত প্রিয় লেখক, চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীও এদিন আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ছিলেন বিশেষ অতিথি। তাদের স্বাগত জানাতে মঞ্চে ছিল উৎসব পরিচালক ফারিহা যাহিন বিভা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষে বারবারই যে কথাটি বলা হয় সেটি হচ্ছে, যতদিন যাচ্ছে শিশুদের এ উৎসব আয়োজন ততই কঠিন হয়ে পড়ছে। মুখে অনেকেই শিশুদের জন্য বড় বড় পরিকল্পনার কথা বলেন। কাজের বেলায় তাদের কাউকে পাওয়া যায় না। মূলত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে জানিয়ে তারা অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। শিশুদের নিয়ে বহুকাল ধরে কাজ করে চলা শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার এদিনও ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিজেদের মতো করে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিশুদের ছেড়ে দিন। ওদের যা ভাল লাগে, করুক। ওরা যা করে তা-ই সঠিক। তা-ই সত্য। কি করছ? কেন করছ? কি জন্য করছে? শিশুদের এসব প্রশ্ন না করার পরামর্শ দেন বিখ্যাত এই চিত্রশিল্পী। বলেন, গাইড করলেই সহজাত প্রতিভা নষ্ট হয়ে যায়। বিকশিত হতে পারে না। উৎসবের জন্য পৃষ্ঠপোষক প্রয়োজন মনে করলেও মুস্তাফা মনোয়ার স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, অভাব না থাকলে ক্রিয়েটিভ কাজ হয় না। মুহম্মদ জাফর ইকবাল আজকের প্রজন্মকে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে বাইরের পৃথিবী দেখার পরামর্শ দেন। বর্তমান সময়টিকে ক্রিটিক্যাল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েদের ডেপথ কমে যাচ্ছে। এখনই সচেতন না হলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কম্পিউটার বিজ্ঞানের এ শিক্ষক। ভবিষ্যতে উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী পলক। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শওকত ওসমান মিলনায়তনে দুটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। মুজিববর্ষ সামনে রেখে দেখানো হয় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত একটি নতুন চলচ্চিত্র। যদিওবা ছোটদের উৎসব, আয়োজনটিকে ছোট বলা যাবে না। বেশ বড়। মোট ৩৯ দেশের ১৭৯টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র দেখানো হবে। শিশুদের নিয়ে এত ছবি হয়, অনেকে হয়তো তা জানেনও না। অথচ এক উৎসবই বিপুলসংখ্যক ছবি দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। স্কুলের বাচ্চারা বাবা মায়ের সঙ্গে উৎসবের ভেন্যুগুলোতে আসছে। ছবি দেখছে। খেলাধুলো করছে। এত বড় উৎসব আয়োজনের সঙ্গেও আছে শিশুরা। পেছন থেকে বড়রা সহায়তা করছেন বটে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে শিশু-কিশোররাই। সিনেমা দেখার পাশাপাশি, নির্মাণও করছে তারা। উৎসবে এমন বেশ কয়েকটি ছবি দেখানো হবে। উৎসবের মোট পাঁচটি ভেন্যু। প্রধান ভেন্যুটি জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন। পাশেই অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনও উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অন্য ভেন্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তন, মিরপুর রোডের আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ও ধানম-ির গ্যেটে ইনস্টিটিউট। এসব মিলনায়তনে প্রতিদিন চারটি করে চলচ্চিত্র দেখানো হবে। সকাল ১১টা, দুপুর ২টা, বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে প্রদর্শনী। বাচ্চারা জেনে নিশ্চয়ই খুশি হবে যে, সিনেমা দেখার জন্য তাদের বা তাদের অভিভাবকদের কোন টিকেট সংগ্রহ করতে হবে না। ফ্রি বলতে যা বোঝায়, ঠিক তা-ই। এখানেই শেষ নয়, উৎসবে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে তিনটি দ্বিতল বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। এরপর আর সিনেমা না দেখে উপায় আছে? আয়োজকরা জানান, উৎসবে থাকছে কর্মশালাও। বিভিন্ন দিনে গুরুত্বপূর্ণ চারটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। সিনেমা ফটোগ্রাফি বিষয়ে কর্মশালা পরিচালনা করবেন নিহাল কুরাইশি। চলচ্চিত্র পরিচালনা বিষয়ে কথা বলবেন পিপলু আর খান। সাউন্ড ইন ফিল্মের ওপর কথা বলবেন নাহিদ মাসুদ। স্টোরি টেলিং বিষয়ে কর্মশালা পরিচালনা করবেন অমিতাভ রেজা। উৎসবের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শিশু-কিশোরদের গল্প আড্ডা। সিনেমায় তো কত নায়কই দেখা হয়েছে, যুদ্ধ দেখা হয়েছে অসংখ্যবার, কিন্তু প্রকৃত যুদ্ধ করে যারা আজকের বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিলেন তাদের সংগ্রামটা কেমন ছিল? বাস্তবে কেমন দেখতে তারা? আলাদা সেশনে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে শিশুরা। এ পর্বে শিশুদের সঙ্গে কথা বলবেন অস্ত্র হাতে লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধা রণাঙ্গনের আলোকচিত্রী হারুন হাবীব। প্রথম বাংলাদেশী নারী ফিফা রেফারি জয়া চাকমার সঙ্গেও কথা বলার সুযোগ পাবে শিশুরা। উৎসবে বাংলাদেশী শিশুদের নির্মিত ছবি নিয়ে থাকছে প্রতিযোগিতা বিভাগ। এ বিভাগে ১৮টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। পুরস্কৃত করা হবে ৫টি চলচ্চিত্রকে। পুরস্কার হিসেবে থাকছে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও আর্থিক প্রণোদনা। চমকিত হওয়ার মতো তথ্য হচ্ছেম পুরস্কারের জন্য গঠিত ৫ সদস্যের জুরি বোর্ডের সবাই শিশু কিশোর। ছোটদের নির্মিত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলো বাছাই করবে ছোটরাই। ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ নির্মাতাদের চলচ্চিত্র নিয়ে উৎসবে থাকছে ‘ইয়ং বাংলাদেশী ট্যালেন্ট’ বিভাগ। রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগও। এ বিভাগে উৎসব কমিটির দ্বারা মনোনীত বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের ১০৫টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। উৎসবের পর্দা নামবে ৩১ জানুয়ারি।
×