ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন ভারতে ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে ॥ নোয়াম চমস্কি

ভারতকে বিপথগামী করছেন মোদি

প্রকাশিত: ০৮:১০, ২৫ জানুয়ারি ২০২০

ভারতকে বিপথগামী করছেন মোদি

বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ‘দ্য কোনোমিস্টের’ সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ইআইইউ গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে জানায়, গণতন্ত্র সূচকে ভারত ১০ ধাপ নেমে গেছে। ২০১৯ সালের এই তালিকায় বিশ্বের ১৬৭ স্বাধীন দেশের মধ্যে ৫১তম স্থানে জায়গা হয়েছে বিশ্বের বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের। অথচ ২০১৮ সালে এই তালিকায় দেশটির স্থান ৪১ নম্বরে ছিল। তবে চলতি সপ্তাহে খোদ ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ ভারতকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম দেয়া হয়েছে, ‘ইনটলারেন্ট ইন্ডিয়া’ বা অসহিষ্ণু ভারত। প্রতিবেদনে দেশটিতে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার কিভাবে বিশ্বের বৃহৎ গণতন্ত্রকে বিপথগামী করছে তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। আর এতে দেশটির ২০ কোটি মুসলিম শঙ্কায় রয়েছে। আরও বলা হয়েছে, মোদি সরকার সিএএ ও এনআরসির মাধ্যমে বিশ্বের বৃহৎ গণতন্ত্রের ধারণাকে বিপন্ন করে তুলছে। ১৯৮০-এর দশকে বর্তমানে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি রাম মন্দির ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে ক্ষমতায় এসেছে তার বর্ণনাও রয়েছে। ধর্মীয় বিভাজন তৈরি ও জাতীয় পরিচয় ব্যবহার করে মোদি সরকার রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এদিকে ভারতে চলমান এনআরসি ও সিএএবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরোমের সম্মেলনে প্রশ্নের মুখে পড়েন দেশটির কেন্দ্রীয়মন্ত্রী পিযুস গয়াল। একই সম্মেলনে ধনকুবের জর্জ শোর মোদি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়া, এনআরসি ও সিএএ-এর ফলে ভারতের কোটি কোটি মুসলিমের শঙ্কায় পড়া নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। একই সঙ্গে বর্তমান মার্কিন অর্থনীতি ও ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকা- নিয়ে সমালোচনা করেন ধনকুবের জর্জ শোর। মোদি সরকারের হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করছেন মোদি। ওদিকে ভারতে চলমান ঘটনা নিয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম কাউন্টার কাউন্টার ডট কমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকার দিয়েছেন বিশ্বখ্যাত মার্কিন বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও লেখক নোয়াম চমস্কি। তিনি ভারতে ফ্যাসিবাদ কিভাবে মাথাচাড়া দিচ্ছে তা নিয়ে কথা বলেন। ভারতের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সমাজকর্মী কার্তিক রামনাথন সম্প্রতি সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেন। নোয়াম চমস্কি বলেন, ভারতে ফ্যাসিবাদের লক্ষণ সুস্পষ্টভাবে দেখা দিয়েছে। কারণ দেশটিতে ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য ব্যাপক হারে বেড়েছে। এরই মধ্যে আবির্ভূত হয়েছেন নরেন্দ্র মোদির মতো একজন রাজনীতিক, যিনি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যর্থতা ভোলাতে ব্যবহার করছেন ধর্মীয় বিভেদের অস্ত্র। আর এতে মাতোয়ারাও হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তিনি আরও বলেন, ভারতে আমরা যা দেখছি, তা হচ্ছে ফ্যাসিবাদী মতাদর্শ ছাড়াই ফ্যাসিবাদের লক্ষণ। ফ্যাসিবাদের অর্থ হচ্ছে, একটি সর্বাত্মকবাদী সরকারের রাষ্ট্রের সর্বত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। অর্থাৎ নাৎসি বা কোন ফ্যাসিবাদী দলের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র, যা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে। নাৎসিরা কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল। অবশ্য ভারতে তা দেখা যাচ্ছে না। সেখানে রাষ্ট্র বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে না। কিন্তু ভারতে ফ্যাসিবাদের অন্যান্য লক্ষণ সুস্পষ্টভাবে দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার ওপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যমও সেভাবে সরকারের সমালোচকের স্থান নিতে পারছে না। এ সময় দেশটিতে লাখ লাখ মুসলিম নাগরিককে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে শনাক্ত করে তাদের জন্য বন্দীশিবির তৈরির বিষয়টি উল্লেখ নোয়াম চমস্কি। নোয়াম চমস্কি যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক। পাঁচ দশক ধরে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) শিক্ষাদানের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির কঠোর সমালোচক হিসেবেও পরিচিত। ডানপন্থী ও বিভিন্ন দেশে নব্য ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীগুলো সম্পর্কে চমস্কি বলেন, প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব একটি বিশেষ ইতিহাস রয়েছে। ভারত হাঙ্গেরি বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়। সেখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য গত কয়েক দশকে ব্যাপক হারে বেড়েছে। মোদি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের বঞ্চিত শ্রেণীর মানুষের হাতে বিভেদের অস্ত্র তুলে দিয়েছেন মোদি। তিনি বলছেন, মুসলমানদের কারণেই হিন্দুরা তাদের প্রাপ্য পাচ্ছে না। এভাবেই হিন্দুত্ববাদের জোয়ারে ভাসছে পুরো ভারত।
×