ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মহামায়া লেক, আরশীনগর ফিউচার পার্ক, মুহুরি প্রজেক্ট ও বুনো ঝর্ণা

মীরসরাইয়ে অপূর্ব নিদর্শন

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২৫ জানুয়ারি ২০২০

 মীরসরাইয়ে অপূর্ব নিদর্শন

নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় ফুটে উঠেছে বাংলার জনপদের কথককথা। এখানে হাজারও অমূল্য রতন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যা আমরা সৌর্ন্দয আহরণে বিদেশ বিভূঁইয়ে ঘুরতে ঘুরতে কত সময় কত অর্থ ব্যয় করি। অথচ আমাদের পাশেই আছে নান্দনিক সৌন্দর্যে অপূর্ব নিদর্শন। রবী ঠাকুর লিখেছেন বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে/ বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে/ দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা/ দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু/ দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া। সনেটের কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় নিজের মাতৃভাষার বন্দনা তুলে ধরছেন এভাবে হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব বিবিধ রতন/ তা সবে (অবোধ আমি!) অবহেলা করি/ পর-ধন- লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি/ কাাঁইনু বহু দিন সুখ পরিহরি/ অনিদ্রায়, নিরাহারে সঁপি কায়, মন। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার। যেখানে গিরি-নদীর মিলনস্থলে ছায়া হয়ে দিগন্তে মিশে গেছে নীলাকাশ। এই সৌন্দর্যকে দেশের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীর মানুষের কাছে আরও সহজে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে এখানে তৈরি হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া সেচ প্রকল্প। যদিও মীরসরাইয়ে আরও অনেক পর্যটন কেন্দ্র থাকলেও এই তিনটা সবচেয়ে বেশি পরিচিত পর্যটন কেন্দ্র। খৈয়াছরায় আস্তরের ঝর্ণাসহ আরও একাধিক ঝর্ণা, মহামায়া লেক ও মুহুরি প্রজেক্ট দেখতে হাজার হাজর পর্যটক পরিবার, প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব কে নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন, পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত মহামায়া লেক আর খৈয়াছরা ঝর্ণা, মহুরি প্রজেক্ট ও আরশীনগর ফিউচার পার্ক। মহামায়া লেক : যেখানে অসংখ্য পাহাড়ের বুক চিরে আসা ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ী ছড়ার মিলন মোহনায় রয়েছে স্বচ্ছ সবুজ জলাধার মহামায়া লেক। পাহাড়ী ঝর্ণা প্রবাহ হতে সৃষ্ট জলধারা এর সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মহামায়া প্রকল্পের আওতায় মাটির ড্যাম, এপ্রোচ রোড, স্পিলওয়ে, ইনট্রেক স্ট্রাকচার রয়েছে। এখানে রয়েছে মাছ শিকারীদের জন্য অফুরন্ত সুযোগ। যেকোন ব্যক্তি প্রতিদিন ৫০০ টাকা হারে বড়শীর ২টা চীফ নির্ধারিত স্থানে ২৪ ঘণ্টার জন্য মাছ ধরতে পারেন। এছাড়া দেশী-বিদেশী পর্যটকদের অবকাশ যাপনের জন্য পাহাড়ের খাঁজে নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক কটেজ। যা প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাবে বলে পর্যটকদের ধারণা। উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে ২ কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা হয়েছে ১১ বর্গ কিলোমিটারের দীর্ঘ এই মহামায়া কৃত্রিম লেক। মুহুরি সেচ প্রকল্প : মীরসরাইয়ের পশ্চিম প্রান্তে এবং সোনাগাজী থানার পূর্বে ফেনী নদীতে মুহুরি সেচ প্রকল্প অবস্থিত। প্রকল্পটি কাজ শুরু হয় ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে এবং বাস্তবায়িত হয় ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে। মুহুরি প্রকল্প এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। সমুদ্রের জোয়ার, উম্মুক্ত স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যের রক্তিম দৃশ্য দেখা এবং প্রকল্প বাঁধ এলাকা দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত পর্যটক এই এলাকায় সমবেত হয়। বিশেষত শীতকালীন সময়ে দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে পর্যটকরা প্রকৃতিক সৌন্দর্যম-িত উন্মুক্ত স্থানে বনভোজন করতে আসেন। জোরারগঞ্জ থেকে মুহুরি সেচ প্রকল্পর দূরত্ব প্রায় প্রায় ৫ কিলোমিটার। আর এই ৫ কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ পাকা করা। পর্যটকরা খুব সহজে যে কোন ধরনের গাড়ি নিয়ে এই প্রকল্প দেখতে যেতে পারে। মুহুরি প্রজেক্ট যাওয়ার জন্য জোরারগঞ্জ বাজার থেকে শুধু সিএনজি যোগে জনপ্রতি ৩০ টাকা মুহুরি প্রজেক্ট গেটে যাওয়া যায়। এরপর গেট ১৫ টাকা ভাড়া মহুরি সেচ প্রকল্পে যাওয়া যায়। আরশীনগর ফিউচার পার্ক ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় এলাকায় প্রায় ১৪ একর পাহাড়ী ও ঢালু জায়গায় স্থাপিত বিনোদন কেন্দ্রে ব্যয় হচ্ছে প্রায় কোটি টাকা। এই বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের জন্য রয়েছে নাগর দোলা, কানসহ বিভিন্ন রকম রাইট। যা উত্তর চট্টগ্রামের অন্য কোন পার্কে পাওয়া যাবে না। এছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য স্পিড বোট, প্যাাডেল বোর্ড, ঘোড়া, জিরাফসহ আকর্ষণীয় সব রাইট। দূরের পর্যটকদের জন্য রয়েছে কর্টেজ। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা। গভীর রাত পর্যন্ত বিনোদন প্রেমীরা নির্ভয়ে এখানে ঘুরতে পারবেন। রয়েছে কৃত্রিম ঝর্ণা, মনোরম ফুল বাগান, আলোক সজ্জা। রাতের আলোতে দিনের মতো মনে হবে পার্কটি। আরশি নগর পিউচার পার্কে স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন দিদার জানান, উপজেলার বিনোদন প্রেমীদের কথা চিন্তা করে তিনি এই আধুনিক বিনোদন কেন্দ্রটি স্থাপন করেছি, বাণিজ্যিক উদ্দেশে নয়। নামমাত্র মূল্যে বিনোদন কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। বুনো ঝর্ণা ॥ মীরসরাইকে ঝর্ণা শহর বলা হয়। কারণ এখানে রয়েছে, খৈয়াছড়া ঝর্ণা, নয়দুয়ারিয়া ঝর্ণা, মহামায়া ঝর্ণা, রুপসি ঝর্ণা, বোয়াইল্লাছড়া ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, কমলদহ ঝর্ণা ইত্যাদি। তবে ভরা বর্ষা মৌসুমে ঝর্ণাগুলো পর্যটকদের আনাগোনা মুখরিত থাকে। প্রত্যেকটি ঝর্ণার স্থান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পুর্বদিকে রেললাইনে পড়ে। হাইওয়ে রোড থেকে ২ থেকে ৪ কিলোমিটারের মধ্যে। মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মীরসরাই এমনি ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ। দেশের বৃহত্তর শিল্পাঞ্চল নির্মিত হওয়ার কারণে এর গুরুত্ব আরও অনেক বেড়ে গেছে। আর এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের পাহাড়, ঝর্ণা, লেক, মহুরি সেচ প্রকল্প, প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন ছুটিখাঁ মসজিদ, পরাগলখাঁ দীঘি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শুভপুর ব্রিজসহ নানা স্থাপনা যা পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। -রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×