ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে বুরুন্ডি, প্রতিপক্ষ ফিলিস্তিন, বুরুন্ডি ৩-০ বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে বিদায় করে ফাইনালে বুরুন্ডি

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

  বাংলাদেশকে বিদায় করে ফাইনালে বুরুন্ডি

রুমেল খান ॥ নেপালী রেফারি সুদীশ পান্ডে খেলা শেষের বাঁশি বাজালেন। দুই দলের ফুটবলাররা কিছুক্ষণ পর ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা শুরু করলেন। কিন্তু একজন রয়ে গেলেন মাঠে। তিনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পশ্চিম গ্যালারির দর্শকদের কাছে এগিয়ে গেলেন। তাকে দেখে দর্শকরা আবেগে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ল। খেলোয়াড়টি আর কেউ নন, জামাল ভুঁইয়া, বর্তমান বাংলাদেশ ফুটবলের একমাত্র সুপারস্টার। নিজের প্রতি ভালবাসার এই রূপ দেখে গ্যালারির আরও কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে হাত মেলাতে চাইলেন জামাল। কিন্তু তাতে বাদ সাধলো বেরসিক পুলিশ। কিন্তু জামাল সেটা মানলে তো! তিনি গ্যালারির কাছাকাছি গিয়ে প্রথমে নিজের হ্যান্ডব্যান্ড, পরে নিজের জার্সিটা খুলে ছুঁড়ে দিলেন দর্শকদের দিকে। সেটা নিয়ে সে কী কাড়াকাড়ি! এই ঘটনাটা পড়ে পাঠক হয়তো ধরেই নেবেন- খেলায় জিতেছে বাংলাদেশ। আদতে তা নয়, বরং বুরুন্ডির কাছে ০-৩ গোলে হেরেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ (প্রথমার্ধে বিজয়ী দল ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল)। এই জয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ আসরে দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনালে উঠল বুরুন্ডি। আগামী শনিবার বিকেল ৪টায় ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ফিলিস্তিন। এ নিয়ে এই আসরে টানা তৃতীয়বারের মতো সেমি থেকে বিদায় নিল বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৬ আসরে বাহরাইন অনুর্ধ-২৩ দলের কাছে ১-০ এবং ২০১৮ আসরে ফিলিস্তিনের কাছে ২-০ গোলে সেমিতে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার হারের ব্যবধানটা আরেকটু বেশি, ৩-০। বৃহস্পতিবার যেন ‘শনির দশা’ লেগেছিল লাল-সবুজবাহিনীর। ম্যাচের শুরুর দিকেই (৪ মিনিটে) ফরোয়ার্ড মতিন মিয়াকে মারাত্মক ফাউল করেন বুরুন্ডির এক ফুটবলার। আঘাত এতটাই বেশি ছিল যে শেষ পর্যন্ত মাঠের বাইরেই চলে যেতে হয় গত ম্যাচে জোড়া গোল করা মতিনকে। খেলতে না পেরে অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বাংলাদেশের উদীয়মান এই ফরোয়ার্ড। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে এক জসপিন এনশিমিরিমানা জসপিনের কাছেই হেরে যায় বাংলাদেশ। বুরুন্ডির এই কুশলী ফরোয়ার্ড করেন নয়নাভিরাম হ্যাটট্রিক। খেলার আগে যে ভয় ছিল বাংলাদেশের, সেটাই কাল হয়। অর্থাৎ রক্ষণভাগের ব্যর্থতা এবং একাধিক সুযোগ পেয়েও গোল আদায় করতে না পারা। অথচ গোল হজমের আগ পর্যন্ত পাল্লা দিয়ে দুর্দান্তই খেলছিল জেমি ডে’র শিষ্যরা। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে আফ্রিকান দেশ বুরুন্ডির ফুটবলাররা। তাদের গতি ও শারীরিক দক্ষতার কাছে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়তে থাকে বাংলাদেশ। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও আস্তে আস্তে হাতছাড়া হতে থাকে তাদের। অথচ খেলা শুরুর ৬ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। বাঁপ্রান্ত দিয়ে মাহবুবুর রহমান সুফিল (মতিনের পরিবর্তে নামা) বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় ঢুকে পড়ে পাস দেন সতীর্থ ইব্রাহিমকে। তার ডান পায়ের শট সাইডপোস্টে লেগে ফেরত এলে গোলবঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। ১১ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে রায়হান হাসানের লম্বা থ্রো লাফিয়ে উঠে গ্রিপে নেন বুরুন্ডি গোলরক্ষক এ্যামি ফালেস। ১৫ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে জসপিনের গড়ানো শট দক্ষতার সঙ্গে গ্রিপে নেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। ২০ মিনিটে রায়হানের থ্রো থেকে বক্সে জটলার মধ্যে লাফিয়ে উঠে হেড নিতে ব্যর্থ হন ডিফেন্ডার রিয়াদুল হাসান। ৩৪ মিনিটে পোস্টের খুব কাছ থেকে আবারও হেড নেন রিয়াদুল। কিন্তু এবারও বল ধরে ফেলেন এ্যামি। যখনই মনে হচ্ছিল কোন গোল হজম না করেই প্রথমার্ধটা ভালয় ভালয় পার করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, তখনই ঘটে সর্বনাশ, ৪৩ মিনিটে গোল করে বসে বুরুন্ডি। বাঁপ্রান্ত থেকে ডিফেন্ডার ব্ল্যানচার্ডের পাসে বল পেয়ে তীব্র শটে বল জালে পাঠান জসপিন (১-০)। ৪৫ মিনিটে আবারও একইভাবে বলের জোগান দেন ব্ল্যানচার্ড। এবার চমৎকার হেডে দলের ও নিজের গোল দ্বিগুণ করেন জসপিন (২-০)। বিরতির পর ৪৭ মিনিটে জামাল ভুঁইয়ার ফ্রি কিক বক্সে লাফিয়ে উঠেও হেড নিতে পারেননি তার এক সতীর্থ। ৫০ মিনিটে প্রায় ফাঁকা পোস্ট পেয়েও গোলের চরম সহজ সুযোগ নষ্ট করে আক্ষেপ বাড়ান ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিন। ৫৪ মিনিটে বুরুন্ডি অধিনায়ক টাম্বোয় আমিসি বক্সে ঢুকে যে শট নেন তা অল্পের জন্য জড়ায়নি জালে। ৫৬ মিনিটে বাঁপ্রান্ত থেকে জামাল ভুঁইয়ার ডান পায়ের ফ্রি কিক রক্ষণ দেয়ালে লেগে প্রতিহত হয়। ৬০ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে জামালের পাস বক্সে হেড নেন সুফিল। কিন্তু অল্পের জন্য জড়ায়নি জালে। পরের মিনিটে রিয়াদুলের হেড প্রতিপক্ষের বারে লাগে। ৬৬ মিনিটে জামালের কর্নারে বক্সে সাদের হেডে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সাইডপোস্ট। ৭৫ মিনিটে জামালের ফ্রি কিক ফিরিয়ে দেন বুরুন্ডি গোলরক্ষক। ৭৯ মিনিটে কাউন্টার এ্যাটাক থেকে আবারও গোল করে বুরুন্ডি। ছোট বক্সের সামনে থেকে ডানদিক থেকে বামদিকে ঘুরে বাঁ পায়ের চমৎকার শটে লক্ষ্যভেদ করেন জসপিন (৩-০)। এটি টুর্নামেন্টে তার দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। তাছাড়া ৭ গোল করে এখনও ধরে রেখেছেন চলতি আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটিও। জসপিনের তৃতীয় গোলটি যেন বাংলাদেশের হারের কফিনে ছিল শেষ পেরেক ঠোকার মতো। বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং যেখানে ১৮৭, সেখানে ১৫১ হচ্ছে বুরুন্ডির। এবারের আসরে বাংলাদেশ এ-গ্রুপে ফিলিস্তিনের কাছে ০-২ গোলে হারে এবং শ্রীলঙ্কাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সেমিতে ওঠে। পক্ষান্তরে বি-গ্রুপে বুরুন্ডি ৪-১ গোলে মরিশাসকে এবং ৩-১ গোলে সিশেলসকে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে শেষ চারে নাম লেখায়। ফাইনালে ওঠার পথে বাংলাদেশের বাধা ছিল বুরুন্ডি। সেই বাধা পেরিয়ে ফাইনালে খেলার স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেল।
×